‘ভাই ফুটবল ফুটবল করে তো নিজের সব শেষ করে দিলাম। ক্লাবের পেছনে সময় দিতে দিতে তো ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠলো। বউ-বাচ্চাকেও ঠিক মতো সময় দিতে পারি না। আসলে কী জানেন? একটা নেশা হয়ে গেছে। ক্লাব আর ফুটবল ছাড়া আর কিছু মাথায়ই ঢোকে না’-ঢাকার ক্লাবগুলোর অনেক মিডিওকার কর্মকর্তার মুখে শোনা যায় এমন কথা।
Advertisement
কথাগুলো একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মতোও নয়। ক্লাবই তাদের সব কিছু। তারা ক্লাবকে সময়ও দেন। কখনো কখনো পরিবার-পরিজনের চেয়েও বেশি। আর একটা নেশাতো আছেই। ক্লাব আর ফুটবলকে ভালোবাসার না হোক, টাকার নেশা তো আছেই। ফুটবলারদের দলবদলের সময় এলে তাদের নেশাটা বড্ড বাড়ে। ক্লাবের তহবিলে বড় ধরণের নাড়া দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেন। দলবদলের মৌসুমের অবৈধ কমিশনের অর্থে পকেট ভরে সারা বছর বুক উঁচিয়ে চলেন।
ফুটবলারদের দলবদলের জন্য বাংলাদেশের বৈধ কোনো এজেন্ট নেই। সে সুযোগই নিচ্ছে এক শ্রেনীর মধ্যসত্বভোগী। যারা ক্লাবের কিংবা অন্যভাবে জড়িত ফুটবলের সঙ্গে। ফুটবলাদের দলবদলের মৌসুমটা আসে তাদের জন্য পোয়াবারো হয়েই। তাদের দুরভিসন্ধির কারণে প্রতি বছর দাম বেড়ে যায় মানহীন ফুটবলারদের। ফুটবলারের সংকটকেই পূজি হিসেবে নেন এসব মধ্যসত্বভোগীরা।
‘আপনারা জানেন ফুটবলাররা কত টাকায় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করে এবং কত টাকা পায়? একটু খোঁজ নিলে জানতে পারবেন- একজন ফুটবলারের জন্য ক্লাবের তহবিল থেকে কত টাকা বের হয় এবং ওই ফুটবলার কত টাকা পান’-শনিবার আক্ষেপ করে বলছিলেন বর্তমান সময়ের সিনিয়র এক ফুটবলার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ফুটবলার ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন- ‘ক্লাব আর খেলোয়াড়ের মাঝেও একটা কাহিনী থাকে।’
Advertisement
কিন্তু কিভাবে? সেটা তো ফুটবলাররা জানবেন? ‘হ্যাঁ, ফুটবলারর আর মধ্যসত্বভোগী মিলেই এ কাজগুলো করা হয়। ক্লাবের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা শুধু টাকার জোগাড়ই করেন। কাকে দিচ্ছেন, কেমন খেলোয়াড়কে দিচ্ছেন, তার খোঁজ নেন না। নিয়েও কোনো লাভ নেই। কারণ তারা তো ফুটবলার চেনেন না। দলবদলের সময় খেলোয়াড় বাছাইয়ের জন্য যাদের উপর নির্ভরশীল হন ক্লাবগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা তারাই সে সুযোগ নিয়ে আখের গোছান। যাদের মূল্য ৫ লাখ টাকাও না, তাদের ২৫ লাখ টাকার খেলোয়াড় বানিয়ে হাজির করা হয় ক্লাবের সামনে’-বলছিলেন এক সাবেক ফুটবলার।
সমীকরণ একদম সোজা। ক্লাব চালাতে এবং দল গঠন করতে টাকার সন্ধানে থাকা শীর্ষ ক্লাব কর্মকর্তাদের খেলোয়াড়দের পেছনে ছোটার সময় নেই। বড় কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই ফুটবলারদের চেনেনও না। কে কেমন খেলেন তাও জানেন না। এখানে মধ্যসত্বভোগীরা যাকে স্বর্ণ হিসেবে ক্লাবের কাছে উপস্থাপন করেন তাকেই স্বর্ণ ভাবে ক্লাবগুলো, যাকে রুপা সাজায় তাকে রুপাই মনে করে। ক্লাব কর্মকর্তাদের সামনে ফুটবলাররা বলে থাকেন মধ্যসত্বভোগীদের শেখানো বুলি। আর ক্লাবগুলো শুধু অন্ধের মতো টাকা গুনেন। যার একটা অংক যায় মধ্যস্থতাকারীদের পকেটে।
কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বৈধ এজেন্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকজন এজেন্ট হতে ইন্টারভিউ দিলেও পাশ করতে পারেনি। ‘এক সময় ছিল এজেন্ট। এখন ফিফা এটাকে বলছে intermediary বা মধ্যস্থতাকারী। এজেন্ট আর intermediary এর মধ্যে পার্থক্য- এখন কেবল ব্যক্তি নয়, কোনো সংস্থাও এ দায়িত্ব নিতে পারবে। আমরা এর বৈধতা আনতে উদ্যোগী হলেও তেমন সাড়া পাইনি। ২/৪ জন পরীক্ষা দিলেও তারা টিকেনি। ফিফার দেয়া অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। ফিফার অনেক রুলসও জানে না তারা। ফিফার নতুন নিয়ম-কানুনগুলো দেখি। তারপর আবার উদ্যোগ নেবো’-বলেছেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ।
আরআই/আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement