দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক মহল থেকে কোনো বিবৃতি না আসায় ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কূটনৈতিক সম্পর্কে নিয়োজিত দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলছেন, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করতে দলের শীর্ষ নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন।
Advertisement
তবে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা এ বিষয়ে তাদের গভীর পর্যবেক্ষণ ও উদ্বেগ প্রকাশ করায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কথা বলে না বলেও অভিমত তাদের।
খালেদা জিয়ার কারান্তরীণের ১৬ দিন পার হলেও তার মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক মহল থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক মহলে সম্পর্ক রাখা নেতাদের ব্যর্থতায় দলীয় চেয়ারপারসনের প্রতি কোনো সহানুভূতি মিলছে না।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহল প্রতিক্রিয়া দেখায়নি তা নয়। রায়ের পর জাতিসংঘের মুখপাত্র বলছেন, ‘আমরা গভীরভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এটা কি রি-অ্যাকশন নয়? হিউম্যান রাইটস বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা সবাই বলছে। আর কী? আমি মনে করি খালেদা জিয়ার সাজার রায় কেউ গ্রহণ করেননি।’
Advertisement
‘এ রায় পরশ্রীকাতরতা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য’- যোগ করেন তিনি।
জাগো নিউজকে দলটির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমীন ফারহানা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পুরোপুরি প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ আপনারা দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন খুব স্ট্রংলি বলেছে, তারা সাজার রায় পর্যবেক্ষণ করছে। আমি যেহেতু আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো দেখি, তাদের সঙ্গে রায়ের পর আমার বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। তারা আমার কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছে। তারা বলেছে, আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তবে নিশ্চয়ই আপনারা আশা করেন না যে তারা রায়ের ব্যাপারে কোনো পজিটিভ বা নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
‘রায় সঠিক নাকি বেঠিক, এটা তারা বলতে পারেন না। এমনকি এটা আমরাও বলতে পারি না’- যোগ করেন তিনি।
‘সার্টিফাইড কপি দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণ ছিল রাজনৈতিক, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির ১৫টি মামলা ছিল। সেগুলো থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু বেগম জিয়ার মামলা বাড়তে বাড়তে ৩৬টা হয়েছে। তাকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং জেলকোড ভঙ্গ করে প্রথম তিনদিন ডিভিশন দেয়া হয়নি, এর সবকিছুই হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য।’
Advertisement
‘আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বাইরে থেকে (আন্তর্জাতিক মহল) সে ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি’- এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা জিনিস আপনাদের বুঝতে হবে, বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশগুলো আইন, আইনের শাসন, বিচার, বিচার বিভাগ ও রায়- এগুলোর বিষয়ে নিজস্ব নর্মস-ভ্যালু পোষণ করে। তাদের পক্ষে বাংলাদেশের বিষয়গুলো বুঝতে কষ্ট হয়, বেগ পেতে হয়। তাদের যে কালচার আর আমাদের দেশের যে অবস্থা তারা তা মেলাতে পারে না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এ কারণে হয়তো বা তারা দেখছে বা বলছে, আমরা অবজার্ভ করছি।’
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আদালতের বিষয়ে কথা বলে না। তারা এখন ইনক্লুসিভ ইলেকশনের (অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন) কথা বলছে। তারা মনে করছে এটা বিচারাধীন বিষয়।’
জামায়াত নেতাদের রায় ঘোষণার পর বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে বিবৃতি এসেছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মৃত্যৃদণ্ডের বিরোধী সুতরাং তারা মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি কনজিউম (মেনে নেয়া) করতে পারে না।’ কানাডা কেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত পাঠায় না- উল্টো প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এমএম/এমএআর/জেআইএম