একুশে বইমেলা

সাহিত্যমানের নিম্নগামীতায় দায় প্রকাশকদেরও

‘বাণিজ্যিক কারণেই প্রকাশকরা নিম্নমানের বই প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। অন্য বিবেচনাও থাকছে বই প্রকাশে। এটি সাহিত্যমানের ক্ষতি করছে বলে মনে করি। ব্যবসায় টিকতে গিয়ে অনেক নামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকেও এই কাজ করতে হচ্ছে।’ বলছিলেন, সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ। মেলা প্রাঙ্গণে সময় প্রকাশনীর স্টলে দাঁড়িয়েই কথা হয় বই, বইমেলার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবদেক সায়েম সাবু।

Advertisement

জাগো নিউজ : এবারের বইমেলার আয়োজন নিয়ে কী বলবেন?

ফরিদ আহমেদ : বইমেলা তো একটি মানসম্পন্ন জায়গায় এসে দাঁড়ালো এবং সেটা বেশ জোর দিয়ে বলা যেতেই পারে। আজকের মেলা আয়োজন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তা সকলের আন্দোলনের ফল বলে মনে করি। পাঠক, লেখক এবং প্রকাশকরা দীর্ঘদিন থেকে এমনটিই চেয়ে আসছিল।

জাগো নিউজ : আয়োজনে কোনো ঘাটতি চোখে পড়ে?

Advertisement

ফরিদ আহমেদ : বেশ কয়েক বছর হলো মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু এরপরও নকশায় যেন ত্রুটি রয়ে গেছে বলে মনে হয়। আপনি গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই মেলার ঠিক আসল রূপ দেখতে পাবেন না। কী কারণে প্রবেশ গেটের কাছে এভাবে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা ঠিক বুঝতে পারি না। আমি বারবার কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করেছি, সমাধান আসেনি। ৮টি জোন করা হয়েছে মেলার। অনেক জোন অন্ধকারে এবং আড়ালে পড়ে আছে।

জাগো নিউজ : আপনার পরামর্শ কী?

ফরিদ আহমেদ : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জায়গা। প্রয়োজনে আরও জায়গা নিয়ে মেলার নকশা করা যেতে পারে। এতে পাঠকরা এসে আরও দম ফেলতে পারবে। জায়গা বরাদ্দ বাড়ানো গেলেই নকশায় বিশেষ পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। মেলার পরিধি আরও বাড়ানো উচিত। তাহলে স্থায়ী নকশা করা যাবে।

জাগো নিউজ : এবারে বইয়ের কাটতি কেমন?

Advertisement

ফরিদ আহমেদ : শুরুতে ভালো কাটতি ছিল না। চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল সবার মধ্যে। বিশেষ করে ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে এক প্রকার অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছিল। কারণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা ভালো না।

তবে মেলার মধ্য সময় থেকে বইয়ের বিক্রি বেড়েছে। বসন্তবরণ আর ভালোবাসা দিবসের পর থেকেই মেলার রূপ বদলে গেছে। শেষ পর্যন্ত ভালোই কাটবে মনে করছি।

জাগো নিউজ : পাঠকের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

ফরিদ আহমেদ : মেলায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে। সন্ধ্যার পর হাঁটার জো থাকে না। কিন্তু সেই অর্থে বই কিনছেন না মানুষ। বইয়ের মেলা, মেলায় দর্শনার্থীদের হাতে অন্তত একটি বই থাকলে মানানসই হয়। বই দিয়েই তো এ মেলার পরিচয়।

জাগো নিউজ : বইয়ের সাহিত্যমান নিয়ে পাঠক প্রশ্ন তুলছেন। লেখকদের সাহিত্যমানে নিম্নগামীতা নিয়ে হতাশ প্রবীণ লেখকরাও।

ফরিদ আহমেদ : অস্বীকার করার উপায় নেই এ অভিযোগ। বই নিয়ে কাজ করছি দীর্ঘদিন থেকেই। লেখকরা সিরিয়াস ইস্যুতে মন দিচ্ছেন, তা আগের বিবেচনা থেকে বলা যাচ্ছে না। ব্যবসা আর সস্তা লেখা নিয়েই ব্যস্ত যেন।

জাগো নিউজ : এর দায় তো প্রকাশকদেরও...

ফরিদ আহমেদ : অবশ্যই। সাহিত্যমানের নিম্নগামীতায় দায় প্রকাশকদেরও। আর বাণিজ্যিক কারণেই প্রকাশকরা নিম্নমানের বই প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। অন্য বিবেচনাও থাকছে বই প্রকাশে। এটি সাহিত্যমানের ক্ষতি করছে বলে মনে করি। ব্যবসায় টিকতে গিয়ে অনেক নামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকেও এই কাজ করতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ : তাহলে লেখকের চেয়ে প্রকাশকের মত’ই বড় হচ্ছে?

ফরিদ আহমেদ : অনেকটা তাই। সময় এসেছে প্রকাশকদের দায়ের বিষয়টি উপলব্ধি করার। তবে লেখকরা যদি সিরিয়াস লেখায় গুরুত্ব দেন, তাহলে নিম্নমানের বই প্রকাশ নিয়ে প্রকাশকদের ব্যস্ত থাকতে হবে না। দায় আগে লেখকদেরই।

জাগো নিউজ : কলকাতার লেখকদের বই প্রকাশ পায় না মেলায়। এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কী বলবেন?

ফরিদ আহমেদ : বাংলাদেশি লেখক সৃষ্টি এবং লেখার মান বাড়ানোর জন্য বাংলা একাডেমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক সময় বইমেলায় ভারতীয় লেখকদের ছাড়া বাংলাদেশি লেখকদের বই প্রকাশ হতই না বললে চলে। ধারা ভাঙতে হয়েছে। ভাঙার প্রয়োজনও ছিল।

জাগো নিউজ : যে উদ্দেশে নিষেধাজ্ঞা, তা কতটুকু সফল বলে মনে করেন?

ফরিদ আহমেদ : কিছুটা তা সফল বটেই। নইলে দেশীয় লেখকদের এতো বই প্রকাশ হয় কী করে?

জাগো নিউজ : শিল্প-সাহিত্যে আসলে নিষেধাজ্ঞায় ফল আসে?

ফরিদ আহমেদ : সব উন্মুক্ত করা যায় না। অমর একুশে বইমেলা একেবারেই নিজস্ব চেতনা থেকে আয়োজন করা হয়। ভারতীয় লেখকদের বই যে বাজারে নেই, তা নয়। বাজার তো ভারতীয় লেখকদের বইয়েই ছেঁয়ে আছে। একুশের বইমেলাটি নিজেদেরই রাখা উচিত আপাতত।

এএসএস/আরএস/পিআর