প্রতিবছর ঈদেই দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত ঈদ অনুষ্ঠানমালা। কিন্তু বরাবরই বিজ্ঞাপনের ভিড়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে সেসব অনুষ্ঠান। সেইসঙ্গে দিশেহারা হয়ে পড়েন দর্শক। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে অনেক মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান থেকেও চোখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন তারা। বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি সময়োপযোগী স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল দেশটিভির অনুষ্ঠান নির্বাহী আপেল মাহমুদ। স্ট্যাটাসটি জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-‘‘বিজ্ঞাপনের ভিড়ে টিভি অনুষ্ঠান দেখার মতো অবস্থায় আর নেই। বিজ্ঞাপন এত বেশি এত বেশি যে মনে হতে বাধ্য বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে আমরা অনুষ্ঠান দেখছি। ১৭ মিনিটের একটা অনুষ্ঠানে প্রায় ২০ মিনিট বিজ্ঞাপন বিরতি। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞাপন বিরতি বাদেও বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে। আপনি নাটক দেখছেন, টিভি স্ক্রিনের নিচে টিকারে বিজ্ঞাপন... ডানে একসাইডে লম্বা আকারে বিজ্ঞাপন... বামে বিজ্ঞাপন... সব জায়গায় বিজ্ঞাপন!একটা রান্নার অনুষ্ঠানের কথা বলি। অনুষ্ঠানের নাম প্রোডাক্টের নামের সাথে জড়িয়ে `খাধুনী রান্না উইথ সেলিব্রেটি`। তো এই খাধুনী কোম্পানির সহযোগিতায় নির্মিত এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক পর্বে একজন সেলিব্রেটি রান্না করছেন। তো একটা রেসিপি রান্নার সম্যক ধারাবিবরনী ছিল এরকম,খাধুনী কোম্পানির গ্যাসস্টোভেখাধুনী ফ্রাইপ্যানে আমরা পরিমাণমতখাধুনী সরিষার তেল দিচ্ছি,এবার এক চা চামচ খাধুনী হলুদ,এক চা চামচ খাধুনী মরিচের গুড়া,এক চা চামচ খাধুনী বেকিং পাউডার,এক চা চামচ খাধুনী গরম মসলা,এক চা চামচ খাধুনী জিরার গুড়া,এক চা চামচ খাধুনী সয়াসচ,এক চা চামচ থাধুনী ধনিয়ার গুড়া...মানে একটা রেসিপিতে খাধুনী কোম্পানির সব প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন। শুধু তাই নয় উপস্থাপক সেলিব্রেটি কিছুক্ষণ পরপর খাধুনী গ্রুপের সব প্রোডাক্টের গুণগত মান নিয়ে প্রশংশা করছেন। খুব সহজেই বোঝা যায় এটা আসলে কোনো অনুষ্ঠান নয় বরং কোনো কোম্পানির নগ্ন বিজ্ঞাপন স্টাইল। আর এই স্টাইল তৈরি করা হয়েছে সাধারণ দর্শককে অনুষ্ঠান দেখার নামে বোকা বানানো।নাটক সিনেমার ভিতর প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখানোটাও খুব বেশি চোখে লেগেছে। দেখলাম একজন আর্টিস্ট দোকানে গিয়ে বলছে একটা ফেয়ার অ্যান্ড আগলি ক্রিম দিনতো। তারপর প্রোডাক্টের দিকে ক্যামেরা এমনভাবে জুম করল যে সহজেই বোঝা গেল পরিচালক আসলে প্রোডাক্টকে হাইলাইট করতে চেয়েছেন। এই ঘটনা তখন মানতে পারতাম যখন পুরো অনুষ্ঠানটি ব্রেক-ফ্রি হতো.. তারপরও যদি পরিচালক নিজের ইচ্ছেতে তার নাটকটিতে এই বিজ্ঞাপনটি সংযুক্ত করতো তবেই।নিউজের ক্ষেত্রেতো বিজ্ঞাপন আরো নগ্ন। পিসলামী ব্যাংক বিরতি, পেয়ারটেল ৩০ সেকেন্ড ব্রেক, গাধা মার্কা ঢেউটিন বাণিজ্য সংবাদ আরো কত কী! সেই সাথে বিজ্ঞাপন বিরতি তো আছেই। রমজানে দেখছিলাম ইফতারের কাউন্টডাউন ছিল প্রোডাক্টের সাথে মিলিয়ে, `গুহ আফজা কাউন্টডাউন`। লে হালুয়া!এবার ঈদের দিন একটা বাংলা চ্যানেলে নাটক দেখতে শুরু করেছিলাম। নাটকের টাইটেল দেখানোর পর ১ মিনিটের একটা দৃশ্য হলো, তারপরই বিজ্ঞাপন। ৫ মিনিটেও সেই বিজ্ঞাপন শেষ হচ্ছে না দেখে আরেকটা বাংলা চ্যানেলে গেলাম সেখানেও বিজ্ঞাপন, তারপর আরেকটা সেখানেও বিজ্ঞাপন.. তারপর আরেকটা সেখানেও একই অবস্থা। বিশ্বাস করেন ওই সময় দেশের প্রায় প্রত্যেকটা চ্যানেলেই আমি বিজ্ঞাপন পাইছি। আরে ভাই দর্শকের হাতে রিমোট থাকে, রিমোট ঘোরালেই দর্শক অন্য টিভি দেখতে পায়। সে কেন এত বিজ্ঞাপনের পরে আপনার অনুষ্ঠান মনে রাখবে?বিদেশি চ্যানেলের দোষ দিয়ে লাভ নাই। বিজ্ঞাপন কমাতে হবে। টিভি চ্যানেলের মালিক পক্ষকে ঠিক করতে হবে তারা ঠিক কত টাকা লাভ করতে চান। `যতটা পারবো ততটা বেশি খাবো` থিওরি থেকে বের হয়ে না আসলে সামনে এইসব বাংলা চ্যানেল দেখার জন্য একটা দর্শকও পাওয়া যাবে না। মালিক পক্ষ ভুলে যাবেন না একটা দেশের সংস্কৃতি সেই দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিরাট ভূমিকা রাখে আর আপনারা সেই সংস্কৃতি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই এটা আপনার জন্য যতটা ব্যবসা তার চেয়েও বেশি দায়বদ্ধতা। অনেক তো ব্যবসা করলেন এবার একটু দায় চুকাতে চেষ্টা করুন।’’ (সামান্য পরিমার্জিত)এইচএন/বিএ/আরআইপি
Advertisement