জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে অর্থদণ্ড স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে (নিম্ন) দেওয়া রায়ের নথি পত্র তলব করেছেন আদালত। আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে এ কপি হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিলের গ্রহণযোগ্যতা শুনানিতে আদালত এসব আদেশ দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, আদালত আপিল শুনানির জন্য আগামী রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেছেন। ওইদিন তার (খালেদা জিয়া) জামিন আবেদনেরও শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আদালত ১৫ দিনের মধ্যে রায়ের নথি চেয়েছেন। একই সঙ্গে রায়ের সঙ্গে দেওয়া জরিমানা স্থগিত করেছেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রোববার দুপুর ২টার সময় আপিল ও জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হবে। আদালতে আজ (বৃহস্পতিবার) খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন এজে মোহাম্মদ আলী। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
Advertisement
এর আগে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য ৮৮০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। আবেদনে বয়স, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক মর্যদা বিবেচনাসহ মোট ৩৩টি যুক্তি দেখানো হয়।
আদালতের শুনানির সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, আতিকুর রহমান, ফাইয়াজ জিবরান, এএকেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির, মুরাদ রেজা ও দুদকের মোশারফ হোসেন কাজল, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, শম রেজাউর করিম এবং কামরুল ইসলাম সজল।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, সাজা রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকের্ট। একই সঙ্গে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকার অর্থদণ্ডের মধ্যে খালোদ জিয়ার ভাগে যেটুকু জরিমানা সেই অর্থদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। যা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ার পর্যন্ত বহাল থাকবে।
Advertisement
এছাড়া এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করেছেন। পাশাপশি নিম্ন আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে ঢাকা বিশেষ জজ আদালতের ৫ এর বিচারককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ১২২৩ পৃষ্ঠার আপিল আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। আপিলে নিম্ন আদালতের পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৪টি যুক্তি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি সম্পূরক হিসেবে জামিন চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান এ আপিল দায়ের করেন। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রায় প্রদানকারী বিচারক ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামানের স্বাক্ষরের পর ১ হাজার ১৭৮ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিশেষ জজ ৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছর কারাদণ্ডের রায় দেন। একইসঙ্গে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। সাজা ঘোষণার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
এফএইচ/আরএস/পিআর