বিশেষ প্রতিবেদন

বাড়তি দোকানে নষ্ট হচ্ছে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য

রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের যেখানে-সেখানে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। এ প্রকল্পের মূল পরিকল্পনায় তিন থেকে চারটি অস্থায়ী তথা ভ্রাম্যমাণ দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। এখন বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২৯টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব দোকান বরাদ্দের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে।

Advertisement

শুরুতে অস্থায়ীভাবে বসানো হলেও পরবর্তীতে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে বিশাল এলাকায় শামিয়ানা টানিয়ে স্থায়ী করা হয়েছে দোকানগুলো। এছাড়া দোকানে খেতে আসা মানুষের অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানবাহনের গতিও কমছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। এসব দোকানের খাবারের মান ও দাম নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। শুধু তাই নয়, এসব দোকান গড়ে ওঠায় হাতিরঝিলের সৌন্দর্যও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সেইসঙ্গে দোকানের বর্জ্য পানিতে ফেলায় দূষিত হচ্ছে ঝিলের পানি।

কর্তৃপক্ষের বাড়তি দোকান বরাদ্দ দেয়াকে অবৈধ বলে মনে করছেন হাতিরঝিল প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী ইকবাল হাবিব। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘হতিরঝিলে যখন দেখা গেলো মানুষের সমাগম অনেক বেশি, তখন সেসব মানুষের প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ দোকান বরাদ্দের অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে তার সংখ্যা তিন-চারটির বেশি নয়। কিন্তু সেই সংখ্যার বেশি বা স্থায়ী দোকান বসানোর অনুমতি যদি কর্তৃপক্ষ দেয় তাহলে তা অবৈধ। হাতিরঝিলের সৌন্দর্যের কথা ভেবে অবিলম্বে এসব দোকান অপসারণ জরুরি।’

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাতিরঝিলজুড়ে রয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী অসংখ্য দোকান। ইট-বালুর ঢালাই আর লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে বসানো হয়েছে দোকানগুলো। রান্না ও আনুষঙ্গিক কাজ হচ্ছে দোকানের মধ্যেই। রেস্তোরাঁগুলোর আশপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। আবার বরাদ্দ পাওয়া অনেকে হাতিরঝিলের উন্মুক্ত স্থান দখল করে পিকআপভ্যানে খাবারের দোকান পরিচালনা করছে। কেউ কেউ ফুটপাতে খাবারের গাড়ি রাখার জন্য স্থায়ীভাবে জায়গাও করে নিয়েছে। আবার অনেকে ত্রিপল, ছাতা আর চেয়ার-টেবিল দিয়ে বরাদ্দের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে।

Advertisement

রয়েছে খাবারের গাড়ির নামে বড় বড় ভ্রাম্যমাণ ট্রাক। শুরুতে অস্থায়ীভাবে বসানো হলেও পরবর্তীতে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে শামিয়ানা টানিয়ে স্থায়ী করা হয়েছে।

বাড়তি দোকানপাটের সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিলের পানিতে বর্জ্য ফেলার পরিমাণও বেড়েছে, বেড়েছে দূষণের আশঙ্কাও। মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এ ধরনের দোকান ঝিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর নান্দনিকতা নষ্ট করছে। এসব দোকানে খেতে আসা মানুষের অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে এ পথে চলাচলকারী যানবাহনের গতিও কমছে। এসব দোকানের খাবারের মান ও দাম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অবৈধ দোকানপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক জামাল আকতার জাগো নিউজকে বলেন, দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে কিছু ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ দোকানসহ অন্যান্য দোকানের ময়লা যেন পানিতে না ফেলা হয় সেজন্য তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাতিরঝিলের দোকানের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে একটি সভা হবে। সেখানে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বান্ধবীকে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিক আহমেদ বলেন, হাতিরঝিলে আগে অনেক উন্মুক্ত জায়গা ছিল। সেখানে হাঁটা যেত কিন্তু এখন হাতিরঝিলে খাবারের দোকান এত বেড়েছে যে, তারা চেয়ার-টেবিল বসিয়ে সেসব জায়গা দখল করে নিয়েছে। খাবারের দোকানগুলোতে গলাকাটা দামও রাখা হচ্ছে।

Advertisement

এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরঝিলের এক দোকান ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দোকান বরাদ্দ নেয়ার সময় আমাদের অনেক টাকা দিতে হয়েছে। প্রতি মাসেও অনেক টাকা ভাড়া গুণতে হয়। কর্মচারীর বেতন, দোকানের ভাড়া- এসব বিবেচনায় খাবারের দাম একটু বেশি রাখা হয়। ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানের জন্য জায়গা বরাদ্দ নিয়েছি। কিন্তু কাস্টমার এসে যদি বসার জায়গা না পায় তাহলে তো ব্যবসা হবে না। এ কারণে কিছুটা জায়গা বেশি নিয়ে চেয়ার-টেবিল বসিয়েছি।

এএস/জেডএ/এমএআর/আইআই