খেলাধুলা

ফুটবলার নদী এখন কুস্তির স্বর্ণকন্যা

পাহাড়ের গতর পুড়িয়ে জুম চাষ করেন কুমস্যা চাকমা ও পতঙ্গ রানী। কখনো ধান, কখনো আদা-হলুদ। আবার কখনো শিম কিংবা কলা-যখন যে ফসলের মৌসুম। চার ছেলে তিন মেয়ে নিয়ে টানাটানির সংসার রাঙ্গামাটির কাউখালির এ দম্পতির।

Advertisement

কস্টটা তাদের বেড়ে যায় যখন চার ছেলেই আলাদা হয়ে যায়। বড় মেয়ে সমপতি চাকমাকে বিয়ে দিয়েছেন। চোট দুই মেয়েকে নিয়ে সংগ্রামী এ দম্পতি থাকেন বাঁশ-টিনের একটা ছোট্ট ঘরে। সেই ঘর থেকেই ফোটা এক পদ্ম ফুলের নাম নদী চাকমা। নদীর মতোই সীমাহীন যার স্বপ্ন।

এক সময় নদীর স্বপ্ন জুড়ে ছিল ফুটবল। গাছ থেকে জাম্বুরা ছিড়ে বল বানিয়ে সাথীদের নিয়ে খেলতেন পাহাড়ের পাদদেশে। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে ওঠার সঙ্গে স্বপ্নের পরিধিও বাড়তে থাকে নদী চাকমার। জাম্বুরা ছেড়ে এক সময় লাথি মারা শুরু করেন চামড়ার বলে।

৩০/৪০ মিনিটের দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে খেলতে যেতেন বিভিন্ন জায়গায়। ফুটবল খেলার পাশাপাশি পড়াশুনাও চালিয়ে যান নদী। রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের নদীকে নিয়ে এখন কুমস্যা-পতঙ্গ রানীর চোখে রঙিন স্বপ্ন।

Advertisement

দেশের নারী ফুটবলে কয়েকটি উজ্জ্বল নামের মধ্যে আছেন মনিকা চাকমা, অনাই আর অনুচিং মারমারা। তাদেরই খেলার সঙ্গী ছিলেন নদী চাকমা। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফুটবলে রাঙ্গামাটির মগাসুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম সদস্য ছিলেন নদী। পায়ের কাজ দেখে মং নামের স্থানীয় এক কোচ নদীকে নিয়ে আসেন আনসারে ট্রায়াল দিতে। কিন্তু ফুটবলে সুযোগ না পাওয়ায় আনসার তাকে রেখে দেয় কুস্তির জন্য।

তারপর থেকে ফুটবলার নদী শুরু করেন কুস্তি খেলা। এখন তো দেশের নারী কুস্তিগীরদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল মুখ রাঙ্গামাটির নদী। বছর চারেক ধরে নিজেকে পুরোপুরি জড়িয়ে ফেলেছেন কুস্তিতে। ২০১৬ সালে আসামে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ জিতে প্রথম আন্তর্জাতিক পদকও রেখেছেন ঝুলিতে। এই তো গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় মহিলা কুস্তির ৪৮ কেজি ওজন শ্রেণীতে স্বর্ণ ধরে রেখেছেন বাংলাদেশ আনসারের এ সদস্য।

কৈশোর থেকে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে আসা নদীর উপার্জন এখন যোগ হচ্ছে তার কৃষক বাবা-মা’র কষ্টের অর্থের সঙ্গে। আনসার থেকে প্রতি মাসে ভাতা পান ৫ হাজার টাকা করে। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জেতার পুরস্কার হিসেবে বাড়তি মাসে ১২ হাজার টাকা। পরবর্তী জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পর্যন্ত অব্যহত থাকবে তার এ অর্থ। তবে নদী চাকমার ইচ্ছে দ্রুতই তার চাকরিটা স্থায়ী হোক।

সিনিয়র খেলোয়াড় ফারজানা শারমিন মিতু অনেক সম্ভাবনা দেখছেন নদী চাকমার মধ্যে। বলছিলেন, ‘নদী কিন্তু প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিজেকে চিনিয়েছেন। এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছেন, রৌপ্য জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। নদীর বড় গুণ, তার অনেক সাহস। দেখবেন সে আরো ভালো করবে।’

Advertisement

ভালো করার প্রবল ইচ্ছা নদী চাকমারও। কন্ঠে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলেন, ‘এসএ গেমসে আমি রৌপ্যও জিততে পারতাম। তবে ওই টুর্নামেন্টে আমার সাহস ও আত্মবিশ্বাস আরো বেড়েছে। আশা করি সামনে আরো ভালো করবো। আমার সংস্থা বাংলাদেশ আনসার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। সংস্থার জন্য এবং দেশের জন্য আমাকে আরো ভালো ফলাফল করতে হবে।’

আরআই/এমএমআর/আইআই