আন্তর্জাতিক

আলমারিতে থেকেই প্রাণে বাঁচল ফ্লোরিডার শিশুরা

১৯ বছর বয়সী এক কিশোরের গুলিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের একটি স্কুলে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন।সন্দেহভাজন ১৯ বছর বয়সী নিকোলাস ক্রুজ স্কুলে হামলা চালান। তিনি ওই বিদ্যালয়েরই সাবেক ছাত্র। তাকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

Advertisement

পার্কল্যান্ডের মারজরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে ওই হামলার কিছুক্ষণ আগেই আগুন নেভানো নিয়ে মহড়া চলছিল। ক্রুজ স্কুলে হামলা চালানোর আগে ফায়ার অ্যালার্ম বাজান। ফলে ওই শব্দ পাওয়ায় অনেকে এটিকে একটি মহড়া বলেই মনে করেছিলেন। সেই শব্দ শুনে তড়িঘড়ি করে ক্লাস থেকে সব ছাত্রছাত্রীকে বাইরে বের করে এনেছিলেন মেলিসা নামের এক শিক্ষিকা।

তিনি ভেবেছিলেন এবার বোধহয় সত্যি সত্যিই আগুন লেগেছে। শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে মেলিসা যখন তাদের স্কুল বিল্ডিংয়ের বাইরে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে স্কুলেরই এক নিরাপত্তারক্ষী এসে জানান, স্কুলে ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করেছে কেউ।

কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন মেলিসা। তার মনে তখন শুধু চলছে, ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রীর প্রাণ বাঁচাবেন কী করে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন শিক্ষিকা। ক্লাসের সব শিক্ষার্থীকে ফের ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন তিনি। জানতেন হাতে সময় বেশি নেই। সবাইকে বাঁচাতে তখন একটাই রাস্তা খোলা। ক্লাসের ভেতরে থাকা আলমারির ভিতরে একে একে সবাইকে ঢুকিয়ে দেন তিনি। এর পর টানা ৩০ মিনিট রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা করেছেন মেলিসা। পুলিশের বিশেষ বাহিনীর কর্মকর্তারা এসে যখন ক্লাসের দরজা খোলেন, আলমারি থেকে একে একে শিক্ষার্থীদের বের করে আনেন মেলিসা।

Advertisement

১৯ জন ছাত্রছাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে শিক্ষিকা মেলিসা ফাকোস্কি এখন সবার চোখে সেরা হয়ে উঠেছেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, ওই তিরিশ মিনিট তার জীবনের ভয়াবহতম সময়। তিনি বলেন, ঘরে ঢুকেও প্রথমে ভেবে উঠতে পারিনি ওদের বাঁচাতে কী করতে পারি। প্রথমে তো ঘরের কোণে সকলকে নিয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম। পরে মাথায় আসে আলমারির মতো সুরক্ষিত জায়গা আর নেই। ১৯ জনকে সেখানেই ঢুকিয়ে ফেলি। ছেলেমেয়েরা তখন অনেকেই কাঁদতে শুরু করেছে। কেউ কেউ শুধু ফোনে টেক্সট করে যাচ্ছিল।

মেলিসার মতোই আরেকজন হলেন ওই স্কুলেরই ফুটবল কোচ অ্যারন ফিস। স্কুলের নিরাপত্তারক্ষীর কাজও করতেন অ্যারন। যখন নিকোলাস ক্রুজ স্কুল চত্বরে বন্দুক হাতে তাণ্ডব চালাচ্ছে, অ্যারন নিজে মানব ঢাল হয়ে বহু শিশুকে বাঁচিয়েছেন। আর নিজে একাধিক বুলেট খেয়ে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি তাকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।

টিটিএন/এমএস

Advertisement