দেশজুড়ে

শাহজালালের চোখ উৎপাটন : পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি

খুলনায় শাহজালাল নামে এক যুবকের দুই চোখ উৎপাটনের মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি পিটিশন দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আমলি আদালতে বাদীর পক্ষে এ পিটিশন দাখিল করা হয়।

Advertisement

নারাজি পিটিশনে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন মনগড়া, পক্ষপাতমূলক, কথিত এবং সর্বোপরি ঘটনাকে আড়াল করে আসামি পুলিশ কর্মকর্তাদের রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে পক্ষপাতিত্বমূলক প্রতিবেদন বর্জন করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ চাওয়া হয়েছে। আদালতের বিচারক মো. শাহীদুল ইসলাম শুনানি শেষে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ঠিক করেছেন।

আদালতে দেয়া নারাজি পিটিশনে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট সাক্ষ্য, প্রমাণ, তথ্য-উপাত্ত এবং আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও পিবিআই পরিদর্শক মো. বাবলুর রহমান খান সম্পূর্ণ মনগড়া ও পক্ষপাতমূলক কল্পকাহিনী বর্ণনার মাধ্যমে আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। যে কারণে বাদী অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে নারাজি দাখিল করেছেন।

এছাড়া পিটিশনে ১৫টি পয়েন্ট উল্লেখ করে ঘটনার স্বপক্ষে এবং আসামিদের বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষপাতিত্ব প্রতিবেদন বর্জনপূর্বক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ চাওয়া হয়েছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, তারা পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দিয়েছেন। শুনানি শেষে আদালত আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ঠিক করেছেন।

Advertisement

এর আগে আদালতে দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে পিবিআই পরিদর্শক মো. বাবলুর রহমান খান উল্লেখ করেন, তদন্তকালে জানা যায়- ভিকটিম শাহজালাল ওরফে শাহ জামাল ওরফে শাহ গত ১৮ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় খালিশপুর থানাধীন গোয়ালখালি বাসস্ট্যান্ডে ছিনতাইকালে হাতেনাতে ধৃত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনগণ কর্তৃক মারপিটের শিকার হন। এতে তার দুই চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে চোখ দুটি নষ্ট হয়ে যায়। যা পেনাল কোডের ১৪৩/৩২৩/৩২৬ ধারার অপরাধ। তদন্তকালে এ নৃশংস ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, এর আগে আদালতে দেয়া শাহজালালের মায়ের এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ১৮ জুলাই শাহ জালাল নগরীর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনীর শ্বশুরবাড়ি থেকে রাত ৮টায় শিশু কন্যার দুধ কেনার জন্য বাসার পার্শ্ববর্তী দোকানে যান। এ সময় খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানের নির্দেশে তাকে থানায় ডেকে নেয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে ওসি তাকে ছাড়ানোর জন্য দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা শাহজালালকে পুলিশের গাড়িতে করে বাইরে নিয়ে যায়। পরদিন ১৯ জুলাই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাকে দুই চোখ উপড়ানো অবস্থায় দেখতে পান।

এ সময় শাহজালাল জানান, পুলিশ কর্মকর্তারা হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গাড়িতে করে গোয়ালখালি হয়ে বিশ্ব রোডের (খুলনা বাইপাস সড়ক) নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তার হাত-পা চেপে ধরে এবং মুখের মধ্যে গামছা ঢুকিয়ে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে দুটি চোখ উপড়ে ফেলে।

এ ঘটনায় শাহজালালের মা রেনু বেগম বাদী হয়ে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় দাবিকৃত টাকা না পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা যোগসাজসে তার ছেলে মো. শাহ জালালের দুটি চোখ উৎপাটন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। মামলায় খালিশপুর থানার ১১ পুলিশ ও আনসার কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।

Advertisement

আলমগীর হান্নান/আরএআর/এমএস