‘প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানাতে সুনীল তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছিলেন ১০৮টা নীলপদ্ম’ কিন্তু এ সময়ে এসে ভালোবাসা দিবসে নীলপদ্ম পাওয়া না গেলেও পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিসহ সব জায়গাতেই মিলছে নানা রঙের ফুল। ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। আর এ ফুলকে ভালোবাসে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। ভালোবাসা ভালোলাগার সঙ্গে ফুল নামক উপকরণটা আঙ্গাঅঙ্গিভাবেই জড়িত।
Advertisement
আজ (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভালোবাসা দিবস। সারা বিশ্বের কোটি কোটি প্রেমিক যুগলের জন্য ‘পরম কাঙ্ক্ষিত’ একটি দিন। এ ভালোবাসা দিবসকে রাঙাতে কতই না আয়োজন প্রেমিক যুগলদের। যদিও ভালোবাসাকে কোনো দিনক্ষণের মধ্যে আটকানো যায় না। দিবসটির মূল অনুসঙ্গ রঙ-বেরঙের ফুল। ফলে ভালোবাসা দিবস এলেই কয়েকগুণ বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা। এ চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিক ফুলের দোকান ছাড়াও পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিতেও ফুল বিক্রি বেড়ে যায় কয়েকগুণ, সঙ্গে দামও থাকে চড়া।
বিশেষ এ দিনে ফুলের চাহিদা মাথায় রেখেই ফুল ব্যবসায়ীতে সয়লাব হয়েছে পুরো রাজধানী। পাড়া-মহল্লা, অলি-গলির সবখানেই পাওয়া যাচ্ছে ফুল বিক্রেতাদের দেখা। গোলাপসহ নানা রঙের ফুল দিয়ে তারা ঘুরছেন প্রেমিক-পেমিকাদের উদ্দেশ্যে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো রাজধানী জুড়েই ভ্রাম্যমাণ ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। ফুটপাত থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অস্থায়ী ফুল বিক্রেতারা। এসব অস্থায়ী বা একদিনের ফুল বিক্রেতার বেশিরভাগই ছাত্র কিংবা বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী।
Advertisement
ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রিতে বেশি লাভের আশায় তারা বনে গেছেন একদিনের ফুল ব্যবসায়ীতে। তবে একদিনের ফুল বিক্রেতার হলেও লাভ পাওয়া যায় বেশি। বিশেষ এ দিনকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় প্রেমিক যুগলদের কাছে খুব সহজেই বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকায় এমনই এক অস্থায়ী ফুলের দোকান নিয়ে বসেছেন কামরুজ্জামন তমাল নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে একদিনের জন্য এ দোকান দিয়েছি। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমারা পড়াশোনা করি। ভালোবাসা দিবসে যেহেতু ফুলের চাহিদা বেশি থাকে সে কারণে আমরা পাইকারি দরে ফুল কিনে এনে পাড়ায় বিক্রি করছি। আজকে ফুলের ক্রেতা অনেক, তাই লাভও বেশি।’
এমনই আরেক আস্থায়ী দোকানি তোফাজ্জল হক। একটি কসমেটিকস দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। তবে ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রির জন্য ছুটি নেন তিনি। বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) ভোরে পাইকারি দরে ফুল কিনে এনেছি, আজকে বিক্রি করছি। গতবছরও এভাবে দোকান দিয়েছি, অনেক লাভ হয়েছে। ৫ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে দোকান দিয়েছে। দিন শেষে ভালো লাভ হবে আশা করছি।’
এসব দোকানে মূলত গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে গোলাপের পাশাপাশি গাঁদা, রজনীগন্ধা, জিপসি, চেরি, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ নানা ধরনের ফুলের পসরা সাজানো হয়েছে এসব অস্থায়ী দোকানে।
Advertisement
অস্থায়ী দোকান থেকে ফুল কিনছিলেন সুরাইয়া আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘এ দিনে প্রায় সবাই ফুল কিনে, যে কারণে ফুলের চাহিদা থাকে কয়েকগুণ বেশি। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব দোকানিরা জিম্মি করে ফুলের বেশি দাম আদায় করেন। একটা গোলাপ দাম নিয়েছে ৫০ টাকা। একটা তোরা ২০০ টাকা। তবুও বাধ্য হয়ে কিনতে হয়েছে।’
মিরপুর এলাকার ফুলের স্থায়ী দোকানি খুরশেদ আলম বলেন, ‘অন্য সময় একটা গোলাপ ২/৩ টাকা পাইকারি কেনা হয় আর বিক্রি করি ১০ টাকায়। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে একটি গোলাপ ১২/১৫ টাকায় কেনা হয়েছে, যা এখন বিক্রি হবে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। সাধারণত এক বছরের ব্যবসা এ বিশেষ দিনগুলোতেই হয়। তাই সবারই টার্গেট থাকে এ দিনগুলোতে ব্যবসা করার।’
এএস/আরএস/আরআইপি