বিকেলের রোদ ললাটে পড়ে চকচক করছে তখন। শীতের শেষলগ্নের এমন মিষ্টি রোদে বসন্তের আগমনী হাওয়া মিলে প্রাণে প্রাণে দোলা দিচ্ছে। রোদ আর বাসন্তী হাওয়া মিলেই এদিন বইমেলায় মনের বনে আলো দিল।
Advertisement
এত আলো! তবুও আঁধার ভর করেছে ওদের চোখে। দৃশ্যমান আলোর মিছিলে ওরা সামিল হতে পারছে না। যে চোখে আলো নেই, কালো চশমা পরে সে চোখের কোটরে আরও আঁধার নামিয়েছে। কিন্তু মনে যদি আলো থাকে, তা নিভে কিসে? বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলে আলোর ধারা বইছে। ‘অন্ধজনে দেহ আলো’। আর দেহের এই আলোর কাছেই যেন সব আলো ফিকে হয়ে আসছে।
সাদা পাতার বই। পাতাজুড়ে ছয়টি করে বিন্দুর বিভিন্ন সংকেত (ব্রেইল পদ্ধতি)। ঘর আকৃতির সংকেতগুলোতে হাত বুলিয়েই প্রাণের আলো মেলে ধরছেন শাহীন, জরিনারা। মাত্র ছয়টি ফোটাতেই সমাজ, রাষ্ট্র, শিল্প-সাহিত্যের সব খবর মিলছে। ফোটায় ফোটায় স্পর্শ করেই অনর্গল পড়ে যাচ্ছেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। আর তা মুগ্ধচিত্তে দেখছেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা।
কথা হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জরিনা খাতুনের সঙ্গে। রাজশাহীর পবা উপজেলায় জরিনার বাড়ি। ইডেন কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়েন। বলেন, মনের আলোই তো উজ্জ্বল বেশি। সে আলো চোখ থাকলেও অনেকে মেলে ধরতে পারেন না। আবার অন্ধ হলেও অনেকে মনের আলো নিয়েই খেলা করছেন। ইচ্ছাশক্তি থাকলেই অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। আমরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা নিয়ে তাই করছি।
Advertisement
জীবনের জয়গান শোনালেন আরেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শাহিন মিয়া। বাড়ি শেরপুরে। জন্ম অন্ধ শাহিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের স্টাডি বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। বলেন, মানুষ মূলত চিন্তাশক্তি দিয়েই নিজেকে প্রকাশ করে। এই শক্তি চোখে থাকে না। মনে থাকে। পৃথিবীর রঙ দেখা আমাদের ভাগ্য হয় না। কিন্তু মানুষের সঙ্গে কথা বলে তার মনের রঙের খবর নিতে পারি। আর এটিই তো সত্যিকার রঙ।
এএসএস/ওআর/পিআর