একুশে বইমেলা

ফাগুনের আগুন বইমেলায়

আজ সূর্য উদিত হয়েছিল আরও রাঙা প্রভাত নিয়ে। সে প্রভাতের সারথি হয়েছিল শিমুল-পলাশেরাও। শিমুল-পলাশে ভর করে বসন্তের আগমনী শুভেচ্ছা জানিয়েছিল কোকিলেরা। ফাগুনের প্রথম দিনের উষালগ্নে প্রকৃতি যে প্রেমের ডালা মেলে ধরল, সে ডালা ভরপুর ছিল সন্ধ্যাতেও। প্রকৃতির এমন প্রেমে ভক্তিরস ঢেলে দিয়ে অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ ফাগুনময় করে তুলেছিল বইপ্রেমেীরা।

Advertisement

বসন্তবরণের এদিনে বইয়ের মানুষেরা যেমনটি চেয়েছিল ঠিক যেন তেমন রূপই ফলেছিল বইমেলায়। প্রেমের কুঞ্জবন, বইয়ের পাঠশালা, হলদে ফুলের বিশাল বাগান! সব অভিধাই মিলল আজকের বইমেলার আঙিনায় রূপে রূপে। প্রকৃতি প্রেমে ডুব দিয়ে জাগনা পেল বইয়ের বাজারে এসে। আর বইয়ের বাজার রূপ নিল প্রেমবাজারে। ফাগুন, বইমেলা আর উদাস মনের মিতালিতে দিনভর শুধু প্রেমের খেলাই চলল। এদিন বই বিক্রিও হলো ধুম।

রাজনৈতিক উত্তেজনায় শুরুতে ভালো কাটছিল না এবারের বইমেলা। গেল আট তারিখের পর (খালেদা জিয়ার মামলায় রায়ের দিন) আশার দ্বার প্রসারিত হয় মেলা আয়োজকদের। আর আজ বসন্তবরণ দিবসে মেলার চিত্রই বদলে গেল।

এদিন সকালে উঠেছিল মেলার পর্দা। সকালেই মেলা প্রাঙ্গণে ভিড়তে থাকে বইপ্রেমীরা। দুপুরের পর দীর্ঘলাইন। আর সন্ধ্যায় তিল ধরার ঠাঁই থাকল না। মেলার আবহ মিলল টিএসসি, শাহবাগ, শহীদ মিনার আর হাইকোর্টের দক্ষিণ গেটেও। এ যেন রীতিমতো জনসমুদ্র। তাতে বাসন্তী রঙের আধিক্য। তরুণী, মধ্যবয়সী নারীরা মজেছিলেন হলদে প্রেমে। আর বাহারি ফুল, ফুলের মালা, ফুলের চাকতি তো ছিলই।

Advertisement

স্বামীর সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছেন মোশফেকা মিশু। বাসন্তী দিনের বইমেলার কথা নিয়েই ক্ষণিকের আলাপ। বলেন, প্রতিটি দিবসেই প্রেম থাকে, থাকে প্রেমের বিশেষত্ব। আজ চাঁদ আপনাকে যে প্রেম দেবে কাল সে প্রেম নাও দিতে পারে। মানুষের মনও ঠিক তাই। বাঙালিয়ানার অন্যতম একটি উৎসব বসন্তবরণ। এখন শহরেও পালক মেলছে এ উৎসব। সে পালকে ভর করেই উড়াল দিলাম আজ। বেশ উপভোগ করলাম। আর বইমেলায় এসে আনন্দ যেন পূর্ণতা পেল।

প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতে অন্য প্রকাশের স্টলে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তৃষা। বলেন, চাকরি রেখে রোজ তো আর মেলায় আসার সুযোগ হয় না। বছরের এ দিবসগুলো নিজের জন্যই রাখি। সকালে বাসন্তী শাড়ি পরেছি। বন্ধুদের সঙ্গে বাইরেই খেলাম। ঘুরবো সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ এক অন্যরকম আনন্দ। বইও কিনলাম বেশ কয়েকটি। বাসন্তী রং রাঙিয়ে দিক সকলের মন।

সময় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, আমরা প্রকাশকরা মূলত এ দিনটির জন্যই অপেক্ষা করি। বসন্তবরণ এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস দিয়েই শুরু হয় বইমেলার মধ্য সময়।

তিনি বলেন, বই তো আনন্দ জোগায়। বসন্ত উৎসব বাঙালিয়ানায় নির্মল আনন্দের বিশেষ আয়োজন। আমরাও বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে থাকি এ দিনটিকে ঘিরে। বই বিক্রিও হচ্ছে বেশ।

Advertisement

এএসএস/জেডএ/আইআই