ঢাকা চিড়িয়াখানার ভিতরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের (বিপিসি) দু`টি উন্নতমানের ও দৃষ্টিনন্দন খাবারের রেস্টুরেন্ট স্থাপিত হচ্ছে। প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন ‘ময়ূরী’ ও হাতিরঘরের পাশে ‘ঈগল’ নামে রেস্টুরেন্ট দু`টির ইজারা নেয়ার জন্য ইচ্ছে প্রকাশ করেছে বিপিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যেই পর্যটন কর্পোরেশনের একজন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিন চিড়িয়াখানা পরিদর্শন শেষে এ আগ্রহ প্রকাশ করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এনায়েত হোসেন বলেন, মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইজারার মাধ্যমে পরিচালিত চিড়িয়াখানার ভিতর ও বাইরের ৯টি রেস্টুরেন্টের আটটি গত ৩০ জুন বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী ৩১ জুলাই অবশিষ্ট আরো একটি রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি জানান, বিপিসির বর্তমান চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তারা চিড়িয়াখানার দু`টি রেস্টুরেন্ট ইজারা নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা তিন দফায় ময়ূরী ও ঈগল নামক রেস্টুরেন্ট দু`টি সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছেন।তারা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবেন।ইজারার ব্যাপারে চুক্তি হলে তারা এ দু`টি রেস্টুরেন্টে ব্যাপক সংস্কার (সম্পূর্ণ থাইগ্লাস ও টাইলস লাগানো) কাজ শুরু করবে। বিপিসির রেস্টুরেন্ট দু`টি স্থাপিত হলে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার খাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাৎসরিক ইজারার মাধ্যমে ঢাকা চিড়িয়াখানার ভিতর ও বাইরে এতদিন মোট ৯টি রেস্টুরেন্টের মধ্যে ভিতরে চারটি (ময়ূরী, ঈগল, প্যালিকেন ও গাংচিল) ও প্রবেশ গেটের পাশে পাঁচটি রেস্টুরেন্ট ছিল। গত ৩০ জুন ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ইতিমধ্যেই ভেতর ও বাইরের আটটি রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী ৩১ জুলাই চিড়িয়াখানার জলহস্তির ঘরের পাশে ‘প্যালিকেন’ নামের রেস্টুরেন্টটি বন্ধ হয়ে যাবে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিড়িয়াখানার একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, রেস্টুরেন্টগুলো বাৎসরিক ছয় থেকে ১০ লাখ টাকার চুক্তিতে ইজারা দেয়া হতো। ইজারার শর্ত হিসেবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ইজারাদারদের বিভিন্ন খাবার ও এর মূল্য তালিকা নির্ধারণ করে দিতেন। কিন্তু ইজারাদাররা কখনই সে নির্দেশনা মানতেন না। তারা ক্রেতাদের মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে খাবার সরবরাহ করে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ মূল্য আদায় করতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতেন বলেও অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হলে মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্যরা সরেজমিন তদন্তে এসে হয়রানির প্রমাণ পান। তারা রেস্টুরেন্টগুলোর মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে ওই সব ইজারাদারদের কাছে ইজারা না দেয়ার সুপারিশ করেন। তাদের সুপারিশের কারণেই রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বিপিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানার ভিতরে ও বাইরে উন্নতমানের ছোট-বড় রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চিড়িয়াখানায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে দর্শনার্থীরা এখানে খাবার গ্রহণ করেন। কিন্তু এদেশের বাস্তবায়তায় এতদিন চিড়িয়াখানায় এসে মানুষ খাবারের রেস্টুরেন্টে ঢুকতে ভয় পেতেন। পেটে ক্ষিধে থাকলেও অপমান অপদস্ত হওয়ার ভয়ে রেস্টুরেন্টে না ঢুকে পাশ কেটে চলে যান। তাই মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করতে তারা দুটি রেস্টুরেন্ট খোলার জোর চিন্তাভাবনা করছেন। চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী আজও ছিল কম :ঢাকা চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এনায়েত হোসেন মঙ্গলবার রাতে জাগো নিউজকে জানান, গত তিনদিনের মতো গতকালও দর্শনার্থীর সংখ্যা কমই ছিল। থেমে থেমে বৃষ্টি আর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অন্য বছরের চেয়ে দর্শনার্থী কম হচ্ছে।তিনি জানান, এবারের ঈদে গড়ে প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার দর্শনার্থী আসছেন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল গড়ে ৬০ থেকে ৮০ হাজার। এবারের ঈদে দর্শনার্থীরা বেড়াতে এসে চিড়িয়াখানার ভেতরে ও বাইরে খাবারের রেস্টুরেন্ট খুঁজে না পেলেও ভাসমান খাবারসামগ্রীর দোকান খুঁজে পেয়েছেন। তবে অন্যান্য বছরের মতো খাবার খেতে গিয়ে তাদের হয়রানি হতে হয়নি।এমইউ/বিএ/পিআর
Advertisement