যে নির্মম পৈশাচিকতা ও বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে রূপা খাতুনকে হত্যা করা হয় সেটির উপযুক্ত শাস্তিই ছিল কাম্য। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে বাসটির চালক হাবিবুর (৪৫), চালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। বাসের সুপার ভাইজার সফর আলীকে (৫৫) দেয়া হয়েছে সাত বছরের কারাদণ্ড। টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার আদালতে গতকাল সোমবার এ রায় দেন। বেলা ১১টা ১০ মিনিটে আদালতে বসেন বিচারক। এরপর ৭৩ পৃষ্ঠার রায়ের অংশ বিশেষ পড়ে শোনান। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়াটা স্বস্তির বিষয়। এখনো অনেক আইনি ধাপ বাকি আছে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে নিশ্চিত করা যায় সেজন্য শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
Advertisement
গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়। রূপা একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী ছিলেন। রূপা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর পুলিশ ওই রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে রূপার মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন। রূপার ভাই ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় এসে লাশের ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর, এবং চালকের সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। এঁরা পাঁচজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।
মাত্র ১৪টি কর্মদিবসের পর টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর রূপা খাতুন ধর্ষণ ও হত্যার মামলার রায়ে চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, যে বাসে ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যার ঘটনাটি ঘটেছিল, সেই জব্দ হওয়া বাসটির মালিকানা রূপার পরিবারকে দিতে হবে।
রূপা ধর্ষণ ও হত্যার রায় স্বল্পতম দেয়ার বিষয়টিও স্বস্তিদায়ক। এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর দেশব্যাপী ধিক্কার ওঠে। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতেও সোচ্চার হন সবাই। সেদিক থেকে এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ধর্ষণ হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধ। সাজাপ্রাপ্তরা একটি মেয়েকে বাসে একা পেয়ে তার ওপর শুধু পাশবিক নির্যাতনই চালায়নি নির্মমভাবে হত্যাও করে। এ ধরনের অপরাধের নানামাত্রিক বিশ্লেষণ হতে পারে। তবে নারীরা এ সমাজে কতটা অসহায় তাও যেন বলে দেয় এই ঘটনা। অপরাধীর সাজা হলে তা অপরাধ কমাতে ভূমিকা রাখে । সেজন্য রূপা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। আর যেন কোনো রূপাকে এভাবে জীবন দিতে না হয় সে ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করাটাও জরুরি।
Advertisement
এইচআর/এমএস