জাতীয়

কৃষি যন্ত্রপাতি মেলায় কৃষক নেই

‘কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে, অর্থ-শ্রম-সময় বাঁচবে’ এ প্রতিপাদ্যে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে শুরু হয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা। শনিবার থেকে শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী এ মেলার আজ শেষ দিন। কৃষি উৎপাদনে কৃষকের জন্য ব্যবহার্য কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হচ্ছে এ মেলায়। কিন্তু মেলায় কৃষকদের উপস্থিতি নেই, ভীড়ও নেই। মেলার প্রচার-প্রচারণা ও নাম শুনে যারা আসছেন তারা একান্তই ঢাকায় বসবাসকারী। কৃষির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে যারা ফার্ম মালিক তারা কেউ কেউ এসে যন্ত্রপাতি দেখছেন।

Advertisement

রোববার সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি ২১ টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকার আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় বেচা-বিক্রি নেই, অর্ডারও তেমন নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিভিন্ন কোম্পানি তাদের যেসব যন্ত্রপাতি মেলায় এনেছে তার ভাড়াও উঠবে না। অথচ এ মেলা থেকে কোনো কৃষক যদি কোনো যন্ত্রপাতি ক্রয় করেন এবং অর্ডার দেন তাহলে তারা ভালো কমিশন পাবেন। তার পরও ক্রেতা নেই। মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের চাপে মেলায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন বলেও তারা জানান।

মেলায় আগতদের মধ্যে প্রায় ১৫/১৬জনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা কেউই কৃষক নন। তারা কেউ চাকরি করেন, কেউ ব্যবসা করেন। প্রচার প্রচারণা শুনে তারা মেলা দেখতে এসেছেন। কথা হয় গাইবন্ধার সাদুল্লাপুরের বাসিন্দা ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে। ঢাকায় একটি কোম্পানীতে চাকরী করেন তিনি। কৃষিতে কি কি ধরনের যন্ত্র ব্যবহার হতে পারে শুধু সেটি দেখার জন্যই মেলায় এসেছি।

মেলায় অংশ নিয়েছে আরএফএল, আলীম ইন্ডাট্রিজ লিমিটেড, এসিআই, দি মেটাল (প্রা.) লিমিটেড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, নবতি ইন্ডাট্রিজ (প্রা.) লিমিটেড, হক করপোরেশন, নিউ বর্ষা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ ইত্যাদি।

Advertisement

মেলায অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি এনেছে তার মধ্যে রয়েছে পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রাইচ রিপার, কম্বাইন হারভেস্টার, মাড়াইকল, আলু উত্তোলন যন্ত্র, ভুট্টা মাড়াইকল, ওয়াটার পাম্প, ট্রাক্টর, ট্রান্সপ্লানার, বিভিন্ন সাইজের ট্রলি, পাওয়ার জুট রিবনার, সৌরশক্তি চালিত আলোক ফাঁদ, সিডার, বেড প্লান্টার, প্যাডেল থ্রেসার, পাওয়ার স্পেয়ার, গাছে স্প্রে করার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্প্রে মেশিন, আদ্রতা মাপক যন্ত্র, ধান শুকানোর যন্ত্র ছাড়াও আরও অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে।

মেলায় প্রদর্শিত যন্ত্রপাতির এমন দাম যে সাধারণ কৃষকের পক্ষে এগুলো ক্রয় করা সম্ভব নয়। সর্বনিম্ন দাম হচ্ছে স্প্রে মেশিনের এক হাজার থেকে ১২’শ টাকা। সর্বোচ্চ কম্বাইন হারভেস্টার যার দাম ১৮ লাখ টাকা। মিনি হারভেস্টার সাড়ে তিন লাখ থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত। ধানের চারা রোপনযন্ত্র তিন লাখ ৮০ হাজার, পাটের আঁশ ছাড়ানোর যন্ত্র পাওয়ার রিবনারের দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা।

কথা হয় মেলায অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান চিটাগাং বিল্ডার্স অ্যান্ড মেশিনারিজ এর নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজধানীতে এসব মেলা করে তেমন ফল পাওয়া যাবে না। এখানে তো কৃষকদের আসার সুযোগ নেই। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এসব মেলা করলে কৃষকরা আসবে, দেখবে, যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ধারণা হবে। তাদের পছন্দ হলে প্রয়োজনে গ্রুপ বা সমবায়ের মাধ্যমে তারা যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে পারবে।

মেলার প্রথম দুই দিনে তার প্রতিষ্ঠানের কোনো যন্ত্রপাতি বিক্রি হয়নি, অর্ডারও পাওয়া যায়নি বলে তিনি জাগো নিউজকে জানান।

Advertisement

তিনি বলেন, এ ধরনের মেলা আরও বড় জায়গায় এবং সপ্তাহব্যাপী হওয়া উচিত।

আলীম ইন্ডাট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মাহমুদুল হাসান এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে বলেন, মেলায় প্রকৃত কৃষকরা আসছে না। তারা হয়তো জানে না। তবে যারা মেলায় আসছেন তারা বিভিন কোম্পানির প্রসপেকটাস সংগ্রহ করে নিচ্ছেন। যারা ফার্ম ভিত্তিক চাষাবাদ করেন তারা মেলায় আসছেন এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দেখছেন।

তিনি জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে সবোর্চ্চ সাড়ে সাত লাখ টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিস এর ফার্ম ব্রডকাস্টিং অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ গোলাম মওলা মেলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে বলেন, সরকার পর্যায়ক্রমে জেলা-উপাজেলা পর্যায়ে এমন মেলা করার পরিকল্পনা করছে। কৃষক যাতে গ্রুপ বা সমবায় ভিত্তিক বড় বড় যন্ত্রপাতি কিনতে পারে সেজন্য সরকার ভর্তুকির ব্যবস্থাও করছে।

তিনি বলেন, হাওড় ও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের জন্য ৭০ ভাগ এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ ভাগ ছাড়ে গ্রুপ ভিত্তিক কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করছে।

এফএইচএস/এমবিআর/জেআইএম