জাতীয়

অর্থপাচার বিষয়ে অসহায় দুদক

অর্থ পাচারের তথ্য জানার পরও কিছুই করতে পারছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশেষ করে বহুল আলোচিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে বাংলাদেশিদের নাম উঠে আসার পরও নিশ্চুপ দুদক। এসব দুর্নীতিতে কী করণীয় বা এরূপ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কী করতে হবে সেটাই নির্ধারণ করতে পারেনি সংস্থাটি। বলতে গেলে অর্থপাচার ছাড়াও নানা জটিল অপরাধ বিষয়ে অসহায় স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানটি।

Advertisement

এই অবস্থায় জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)’ এর সঙ্গে মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অর্থপাচার বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চায় দুদক। এজন্য বাংলাদেশে ইউএনওডিসি এ একটি পরিপূর্ণ কান্ট্রি অফিস স্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে তারা।

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বরাবর দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদক বলছে, দুর্নীতি ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে। দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, ক্রমেই এটি নিত্য নতুন মাত্রায় জটিল রূপ ধারণ করছে। এ অবস্থায় ইউএনওডিসি এর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করা জরুরি। তা না হলে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার দক্ষতা অর্জন সম্ভব নয়।

Advertisement

দুদক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দেয়া চিঠিতে বলেছে, ইউএনওডিসি পরিচালিত বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম ও গবেষণালব্ধ তথ্যাদি নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। বহুল আলোচিত পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে উঠে আসা ট্যাক্স হ্যাভেনে অর্থ পাচারের মতো বিষয়গুলো নির্ধারণ ও এরূপ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ইউএনওডিসি এর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই।

এছাড়া বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য দেশের মূলধনকে আকর্ষণীয় করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে কমিশন ইউএনওডিসি এর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ ছাড়াও স্টলেন অ্যাসেট রিকভারি (চুরি বা পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার) এর ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে।

চিঠিতে দুদক ইউএনওডিস’র অফিস স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেছে, ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। যার সদর দফতর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। ইউএনওডিসি মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অর্থপাচার ছাড়াও নান জটিল অপরাধ যেমন- চোরাচালান, পাইরেসি, সাইবার অপরাধ ও মানবপাচার প্রতিরোধ করতে সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা করে থাকে। ইউএনওডিসি এসকল ক্ষেত্রে সদস্যদের প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সহায়তা দিয়ে থাকে।

এছাড়া সচেতনতা সৃষ্টিসহ এসব বিষয়ে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সনদ অনুমোদন ও বাস্তবায়নে সদস্যদের সহায়তা করে থাকে। জাতিসংঘে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সনদ গৃহীত হয়। ইউএনওডিসি জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সনদ বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বৈশ্বিক দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভুমিকা পালন করেছে।

Advertisement

দুদক বলছে, ইউএনওডিসি এর একটি প্রোজেক্ট অফিস রয়েছে। যা দিল্লিতে অবস্থিত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সনদ অনুমোদন করে।

বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এবং সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতি ইউএনওডিসি এর কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দক্ষিণ এশীয় অনেক দেশকে পেছনে ফেলে প্রায় সকল সূচকে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করলেও বাংলাদেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং এটি নিত্য নতুন মাত্রায় জটিল রূপ পরিগ্রহ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বাংলাদেশে ইউএনওডিস’র অফিস স্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাব দুদক পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো থেকে মতামত নেয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন অপরাধসহ নানাবিধ আর্থিক লেনদেন ভিত্তিক অপরাধ দমন এবং প্রতিরোধের জন্য পৃথিবীর ১৫০টি দেশে ইউএনওডিসি এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ইউএনওডিসি এর একটি প্রোজেক্ট অফিস রয়েছে, কিন্তু সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ইউএনওডিসি এর স্বয়ংসম্পূর্ণ কান্ট্রি অফিস রয়েছে। তাই বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে কেবলমাত্র একটি প্রোজেক্ট অফিস এর মাধ্যমে বহুমাত্রিক দুর্নীতি ও ট্রানজিশোনাল অপরাধ দম ও প্রতিরোধসহ অর্থ পাচার রোধ কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ।

এ অবস্থায় বাংলাদেশে ইউএনওডিসি এ একটি কান্ট্রি অফিস প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এ অফিস প্রতিষ্ঠা করা হলে এবং সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় ইউএনওডিসি এ সহযোগিতা পেলে এ সমস্ত অপরাধ দমনে বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে সরকারি নীতি ও গৃহীত কর্যক্রমের সুফল দৃশ্যমান হবে বলে দুদক মনে করে।

এমইউএইচ/এমবিআর/জেআইএম