খেলাধুলা

হাথুরুও ভাবতে পারেননি এতটা খারাপ খেলবে বাংলাদেশ

ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরুর আগে থেকেই তুমুল আলোচনার বিষয়, বাংলাদেশের প্রধান প্রতিপক্ষ আসলে কে? শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল নাকি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে? এই প্রশ্নের জবাবে সাকিব, মাশরাফি থেকে শুরু করে সবাই একবাক্যে জানিয়েছিলেন- বাংলাদেশে প্রধান প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। হাথুরুসিংহে কোনো বিষয়ই না। এমনকি ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব পালন করা রিচার্ড হ্যালসল তো ‘বড় গলায়’ বলেই দিয়েছেন, ‘হাথুরু তো আর মাঠে এসে ব্যাটিং করে দেবেন না। কিংবা বোলিং করবেন না।’

Advertisement

হাথুরু মাঠে নেমে ব্যাটিং কিংবা বোলিং কিছুই করেননি। করার মানেও হয় না; কিন্তু কলের কাঠি তো ঠিকই নেড়েছেন এবং সেই কাঠি নাড়ায় যে তিনি পুরোপুরি সফল- সেটা কী আর যুক্তি দিয়ে বোঝানোর কোনো প্রয়োজন আছে? বাংলাদেশ দলে তো ‘অনেক কোচ’ ছিলেন ত্রিদেশীয় সিরিজে। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। ভারপ্রাপ্ত কোচ রিচার্ড হ্যালসল (তিনি মূলতঃ ফিল্ডিং কোচ, পরে সহকারী কোচ পদে উন্নীত), কোর্টনি ওয়ালশ, সুনিল যোশি। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবার ত্রিদেশীয় সিরিজে কোচের ভূমিকায় ছিলেন দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং সাকিব আল হাসানও।

‘অনেক কোচে’র পরিচালনায় ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুতেই বাংলাদেশের সূচনাটা ছিল দারুণ। প্রথম দুই ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা। এরপর উড়তে উড়তে মাটিতে আছড়ে পড়তে হলো। টানা দুই ম্যাচ হেরে ত্রিদেশীয় সিরিজটাই খোয়াল খুব বাজভাবে। এরপর টেস্ট সিরিজ। চট্টগ্রাম টেস্টে হারতে হারতে কোনমতে ড্র। তাও মুমিনুল আর লিটন কুমার দাসের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের কারণে; কিন্তু ঢাকা টেস্টে দারুণ অপরিণামদর্শিতা আর অপরিকল্পিত ক্রিকেট খেলার কারণে চরম মূল্য দিতে হলো- মাত্র আড়াই দিনে ২১৫ রানে হেরে।

কোচ হাথুরুসিংহে কী সেটা এখন বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমীরা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেতে শুরু করেছে। আর অতি সন্ন্যাসিতে যে গাঁজন নষ্ট হয়- সেটাও বুঝতে পেরেছে টিম বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট। যদি তাদের এই বুঝ থেকে শিক্ষা হয়! অতীত কিন্তু ভালো অভিজ্ঞতা দেয় না। তবুও আশাবাদী হতে দোষ নেই।

Advertisement

তবে, বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্সে যারপরনাই হতাশ শ্রীলঙ্কার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সদ্যই তো সাবেক হয়েছেন তিনি। যারা তার বিপক্ষে খেলেছে- এদের সবাই ছিল তার ছাত্র। চারটি বছর সুখে-দুঃখে এদের পাশে ছিলেন হাথুরু। তিনি জানতেন, মিরপুরের উইকেট কেমন হবে এবং এই উইকেটে কীভাবে খেলতে হবে।

সেই জানা থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যে খাবি খাবে সেটাও জানতেন; কিন্তু এতটা খারাপ খেলবে বাংলাদেশ সেটা ভাবতেও পারেননি। বিশেষ করে দুই ইনিংসেই ১১০ এবং ১২৩ রানে এভাবে অলআউট হয়ে যাবে বাংলাদেশ- বিশ্বাস হচ্ছে না যেন হাথুরুসিংহের।

বাংলাদেশি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ নিয়ে হাথুরুর মন্তব্য, ‘এটা ভীষণ কঠিন উইকেট। তারা পারেনি বলে দোষ দিতে পারেন না। তবে যেভাবে তারা ব্যর্থ হয়েছে, সেটি আমিও প্রত্যাশা করিনি। তারা এর চেয়ে ভালো ব্যাটিং করতে পারত। এই উইকেটে ৩০০ রান প্রত্যাশা করতে পারেননি। তবে প্রথম দিন ২৪০ ভালো স্কোর। আমরা করতে পেরেছে ২২০ (২২২), কিছুটা কম হয়েছে। তবে ভাবতে পারিনি তারা প্রথম ইনিংসে ১১০ রানে গুটিয়ে যাবে।’

শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের পরিবর্তনের ছোঁয়া যে হাথুরুর হাতেই হচ্ছে এটা তো এখন দিবালোকের মত সত্য। তার অধীনে শুরুর দুটি সিরিজই জিতে নিয়েছে লঙ্কানরা। কিভাবে বদলে দিলেন তিনি শ্রীলঙ্কার নুয়ে পড়া দলটিকে? প্রশ্ন শুনে মুখে হাসি দিয়ে হাথুরু বললেন, ‘আপনাকে সব সময়ই ভালোভাবে তৈরি হতে হবে। দলের শক্তিমত্তা আপনাকে বুঝতে হবে। নিজের শক্তি বুঝেই পরিকল্পনা ও কৌশল সাজতে হবে। আপনি যদি ভালোভাবে তৈরি থাকেন ও নিজের শক্তি অনুযায়ী ভালো পরিকল্পনা থাকে, বলছি না সব জায়গায় সফল হতে পারবেন। তবে সব জায়গায় ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল হতে পারবেন।’

Advertisement

লঙ্কানদের জন্য গর্ত খুঁড়তে গিয়ে নিজেরাই সেই গর্তে নিপতিত হয়েছে বাংলাদেশ। তবে স্পিনিং উইকেট বানাতে দেখে মোটেও অবাক হননি হাথুরু। তিনি বলেন, ‘গত ছয় মাসে এখানে অনেক খেলা হয়েছে। এই সময়ে একজনের পক্ষে ভিন্ন উইকেট তৈরি করা কঠিনই। আপনি যদি ত্রিদেশীয় সিরিজে দেখেন প্রায় প্রতি ম্যাচেই উইকেট ভেঙেছে। আমরা শুরুটা ভালো করেছি। একটা টেস্টের উইকেট তৈরিতে আপনাকে অন্তত ছয় মাস সময় দিতে হবে।’

আইএইচএস/আরআইপি