‘পাঠকই হচ্ছে বইয়ের প্রাণ। বই পাঠক তৈরি, পাঠক লেখক তৈরি করে। আর এভাবেই একটি ভাষা-সংস্কৃতির রূপরেখা দাঁড়ায়। পাঠক এবং লেখক তৈরি করার উদ্দেশ্য নিয়েই বাংলা একাডেমি বইমেলার আয়োজন করে আসছে। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে মানুষের ভাষা-সাংস্কৃতিক চেতনাবোধ জাগ্রত হচ্ছে।’
Advertisement
বলছিলেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। বইমেলা, মেলা আয়োজনের স্বার্থকতা, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির উন্নয়ন নিয়ে জাগো নিউজের কাছে মতামত ব্যক্ত করেন শামসুজ্জামান খান।
মেলা আয়োজনে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘মেলায় প্রচুর পাঠক আসছেন। নতুন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। ভাষা চর্চায় মন দিচ্ছেন। লেখক-পাঠকের মহামিলন হচ্ছে বইমেলা।
সাহিত্য-সংস্কৃতির এ আয়োজনে নানা বিষয়ই এখন দৃশ্যমান। আগে মানুষ শুধু ছুটির দিনগুলোতে ভিড় করেছে মেলায়। এখন নিয়মিতই ভিড় হচ্ছে। মনে হচ্ছে প্রতিদিনই ছুটির দিন। এটি আমাদের বিশেষ নজর কেড়েছে।’
Advertisement
তিনি বলেন ‘তরুণ প্রজন্ম দিনকে দিন বই, সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকছে। নতুন প্রজন্ম অনেকেই সাহিত্যের সঙ্গে বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন।’
সাহিত্য মান উন্নয়ন নিয়ে এই লেখক বলেন, ‘বাংলা একাডেমি নানাভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। একটি কমিটি রয়েছে এ নিয়ে। এ কমিটি মানসম্পন্ন বলে বাছাই করেছে। কমিটির সদস্যরা বই পড়েছেন। বই পড়েই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই বই ভালো বা মানের বলা যায়। হতাশা থাকলেও আমি মনে করি, মানুষের ভাষা-সাংস্কৃতিক চেতনাবোধ জাগ্রত হচ্ছে।’
সহজ লেখায় লেখকরা অভ্যস্ত এখন, পাঠকরাও সহজ পাঠে মন দিচ্ছেন। ফলে সাহিত্যমান কমছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু গল্প-উপন্যাস নয়, প্রচুর পাঠক জীবনী গ্রন্থ কিনছেন। প্রকাশও হয়েছে বেশ। জীবনী বা আত্মজীবনী লেখায় আগ্রহ বাড়ছে লেখকদের, আগ্রহ বাড়ছে পাঠকদেরও। পাঠক সহজ পাঠে অভ্যস্ত বটে, কিন্তু তরুণ প্রজন্ম সিরিয়াস পাঠে মন দিচ্ছে, তা এবারে জোর দিয়েই বলা যায়।
অন্য দেশের লেখকদের বই প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভারতীয় লেখকদের বই যদি মেলায় প্রকাশ করার সুযোগ দিই, তাহলে গোটা মেলা পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের বইয়ে ভরে যাবে। ভারতীয় লেখকদের বই প্রকাশ পেলে দেশীয় লেখকরা মার খেয়ে যাবেন।
Advertisement
পাঠক ওই দেশের লেখকদের বই নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। পাঠক সরল পাঠ থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস পড়ছে। ভারতীয় লেখকদের বই প্রকাশ পেলে পাঠক আবার অন্যদিকে ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করি।’
বর্তমান সাহিত্য পাঠে পাঠক হতাশ কি-না জানতে চাইলে বলেন, ‘পাঠক নানা ধরনের বইয়ে চোখ রাখছে। এটি লেখককে বুঝতে হবে। পাঠকের মন জয় করতে হলে লেখককে আরও সিরিয়াস হতে হবে।
লেখার শিল্পমান প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি একবার অমর্ত্য সেনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনার বই ছাপা হয় কীভাবে। বললেন, আমি যে প্রকাশনীতে বই দিই, সেখানে সম্পাদক আছেন। তিনিই সম্পাদনা করেন। বইয়ের মানও ভালো হয়। সম্পাদনা করলে শব্দের অর্থ দাঁড়ায়। শব্দ সংযোজন এবং বিয়োজন করার জন্য তারা আমার লেখায় হাত দেয়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের এখানে প্রকাশকরা কোনো সম্পাদক রাখেন না। এ কারণেই বই ভুলে ভরা থাকে। সাহিত্য নিয়ে লেখকরা গভীর চিন্তা করছেন না। ভাষাজ্ঞান সংকীর্ণ রেখেই বই প্রকাশে অস্থির হয়ে পড়ছে।’
এএসএস/এমআরএম/আরআইপি