অর্থনীতি

সুসংবাদে পুঁজিবাজারে কাটছে আতঙ্ক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় ছিল দেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল এক ধরনের আতঙ্ক। তবে রায় ঘোষণার পরের পরিস্থিতি সেরকম হয়নি। বিনিয়োগকারীদের সেই আতঙ্ক যেন কেটে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার আতঙ্ক কেটে যাওয়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারের জন্য এসেছে একটি সুসংবাদ। তা হলো- চীনের দুই পুঁজিবাজার সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হচ্ছে। চীনের ওই দুই পুঁজিবাজার কনসোর্টিয়াম করে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনবে।

Advertisement

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ এশিয়ার নামকরা দুটি পুঁজিবাজার। এমন দুই প্রতিষ্ঠান ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে যাওয়ায় দেশের পুঁজিবাজারের জন্য বিরাট সুখবর। প্রতিষ্ঠান দুটি কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে আসার পাশাপাশি চীনের অভিজ্ঞতা ও কৌশল এবং চীনের কোম্পানি ও বিনিয়োগ নিয়ে আসবে। সুতরাং পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক। এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু জাগো নিউজকে বলেন, চীনের প্রতিষ্ঠান যখন কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে আসবে তখন তারা চীনের অভিজ্ঞতা ও কৌশল নিয়ে আসবে। সাংহাই ও সেনজেন যখন মনে করছে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনা যায়, এর অর্থ তারা এ পুঁজিবাজারের ওপর বিশ্বাস করে। এখানে ভবিষ্যৎ আছে- এটি নিশ্চিত না হয়ে কেউ ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনবে না। তিনি বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি চীনের নতুন প্রযুক্তি ও পণ্য আসবে। পাশাপাশি লোকাল যে চীনা কোম্পানিগুলো আছে ভবিষ্যতে তারাও আসবে, ফান্ড রেইজ (তালিকাভুক্ত হয়ে মূলধন তোলা) করতে। সেইসঙ্গে চীনের যে বিনিয়োগ বর্তমানে আছে তা আরো জোরদার হবে। সব মিলিয়ে এটা দেশের পুঁজিবাজারের জন্য বিরাট সুসংবাদ। তিনি আরো বলেন, এ সুসংবাদের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায় ঘিরে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি। এটাও ভালো সংবাদ। মানুষ মনে করেছিল হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়ে যেতে পারে, কিন্তু তা হয়নি। বিএনপি শান্তিপূর্ণ দল হিসেবে নির্বাচনে আসার অ্যাপ্রোচ দেখিয়েছে। এটা অর্থনীতির জন্য পজেটিভ। এতে বিনিয়োগকারীদেরও আতঙ্ক কেটে গেছে। ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) এবং খালেদা জিয়ার রায়ের পর সব আতঙ্ক কেটে গেছে। এর পাশাপাশি ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিষয়ে একটি আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে। আগে একটা সিগন্যাল ছিল কৌশলগত বিনিয়োগকারী পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে পুঁজিবাজারের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। ডিএসইর শেয়ার বিক্রি হলে বাজারে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ঢুকবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সরাসরি দেশে আসবে এবং ব্রোকারেজ হাউসে যুক্ত হবে। ব্রোকারেজ হাউসে এ টাকা আসার পর ৫০ শতাংশ দিয়েও শেয়ার কেনা হলে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার শেয়ার কেনা হবে। ফলে শেয়ারের দাম বাড়লে আস্থাও বাড়বে। এদিকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার রায়ের আগে যে ব্রোকারেজ হাউসগুলো থেকে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছিল এখন তারাই বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কিনতে উৎসাহিত করছেন। এমনও সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে, শেয়ার বিক্রি না করতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপও দেয়া হয়েছে। ফলে রায়ের আগে যেসব প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রিতে চাপ বাড়িয়েছিল তারা এখন শেয়ার বিক্রি না করে উল্টো শেয়ার কিনছে। সিরাজুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, গুঞ্জন রয়েছে বাজারে নতুন করে ফান্ড আসছে। যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুদিন আগে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছিল তারা এখন উল্টো শেয়ার কিনছে। ডিএসইর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ খুবই কম। বাজারের বড় অংশই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। ডিএসইতে যে লেনদেন হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অস্বাভাবিক শেয়ার বিক্রির চাপ না বাড়ালে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। রোববার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল না উল্টো ক্রয়ের চাপ ছিল। ফলে মূল্যসূচকের বড় উত্থান ঘটে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা এ বি মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির রায় ঘিরে কয়েকদিন অনিশ্চয়তা ছিল। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তবে রায়ের পর বড় রকমের কোনো অশান্তি হয়নি। এতে বিনিয়োগকারীদের আবার আস্থা বেড়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, বাজার অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নেই। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন দেখা দিলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) মহাসচিব খায়রুল বাশার বলেছিলেন, সামনে দেশে কী যেন একটা হতে যাচ্ছে, এমন একটি গুজব বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলেছে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা, ৮ ফেব্রুয়ারি চলে গেলেই আপনারা বুঝতে পারবেন। আসলে সুযোগসন্ধানীরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভিতি দেখিয়ে কম দামে শেয়ার নিয়েছে। ডিএসইর ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি সবাই এ বছর পুঁজিবাজার চাঙা দেখতে চায়। এখন বিদেশি বিনিয়োগ সর্বকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। পুঁজিবাজারের কোনো ধরনের সঙ্কট নেই। এমএএস/জেডএ/এমএআর/এমএস