দেশজুড়ে

রায়ের অপেক্ষায়...

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী সিরাজগঞ্জের তাড়াশের জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে কাল ১২ ফেব্রুয়ারি। রায়ের দিন তারিখ ঠিক হওয়ার পর থেকেই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেখার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন রুপার পরিবার। সবার প্রত্যাশা সর্বোচ্চ সাজা।

Advertisement

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রুপাকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সকল সাক্ষি ও যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের এ দিন ধার্য করেন টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া।

রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, সেই ছোটকাল থেকে নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ করে রুপার পড়ালেখার খরচ যুগিয়েছি। সেই আদরের ছোট্ট বোনটি অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। স্বপ্ন ছিল বড় উকিল হবে। ঢাকা আইডিয়াল ল' কলেজ থেকে এ বছরই তার ওকালতি পড়া শেষ হতো। অথচ এক নৃশংস ঘটনায় লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হলো তাকে। আমাদের পরিবারের এখন একটাই দাবি ঘাতকদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।

রুপার ছোট বোন পপি বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর রুপাই আমাদের সবকিছু দেখভাল করতেন। এখন আপু নেই ভাবতেই দু’চোখ জ্বলে ভিজে যায়। আপুর মৃত্যুর পর আমাদের পরিবারের অবস্থা দেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম একটি ড্রাগস কোম্পানিতে অফিস সহকারী পদে আমাকে চাকরি দিয়েছেন। চাকরিতে যোগদানের বয়স প্রায় ৪ মাস। চাকরি করে যে বেতন পাচ্ছি তা দিয়ে সংসার চলে না বরং বাসা ভাড়াটা হয় কোনো মতে। বাড়িতে মা ও এক ভাই থাকেন। আমার মা খুব অসুস্থ, সে অপারেশনের রোগী। তার চিকিৎসা বাবদ প্রতিমাসে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা যোগান দিতে হয়।

Advertisement

পপি আরও বলেন, আমি ও আমার পরিবার মোহাম্মাদ নাসিম স্যারের কাছে চিরঋণী। তিনি আমার বোনের ধর্ষণ ও খুনের মামলার সঙ্গে জড়িত ৫ আসামির যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় সে ব্যাপারে আমাদের বাড়িতে এসে জনতার সামনে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ‘ছোয়া’ নামের একটি পরিবহনে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রুপা খাতুনকে চলন্ত বাসে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্ষণ করে। পরে তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পুলিশ ওই রাতেই তার মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন। এরপর ২৮ আগস্ট সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে মধুপুর থানায় এসে নিহতের বড় ভাই রুপাকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫), সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) গ্রেফতার করে। পুলিশের কাছে গ্রেফতাররা রুপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। তারা সবাই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে আছে।

এরপর ৩১ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থান থেকে রুপার মরদেহ তোলার পর ছয়টার দিকে তার নিজ গ্রাম সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়িতে পৌঁছায়। মরদেহের কফিন জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। রুপার এ মৃত্যুকে সহজে কেউ মেনে নিতে পারেননি।

Advertisement

রূপা হত্যা মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ৩ জানুয়ারি বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২০ দিনের মধ্যে এই মামলায় জব্দ তালিকা, সুরতাহাল রিপোর্ট, ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৭ সাক্ষীর আদালতে সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত হয়।

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/জেআইএম