দেশজুড়ে যে নির্মাণযজ্ঞ চলছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অপরিকল্পিত। উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবেই রাজধানী ঢাকা যেমন বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হচ্ছে। এখনই সোচ্চার না হলে রাজধানীর মতো পুরো দেশও বসবাসের অযোগ্য হবে বলে মত দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও নগরবিষয়ক সাংবাদিকরা।
Advertisement
শনিবার রাজধানীর বাংলামোটর সংলগ্ন প্ল্যানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত ‘নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় সাংবাদিকতার ভূমিকা’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা এ মত দেন।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বিআইপির সহসভাপতি অধ্যাপক আখতার মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিক আলী। ধারণাপত্রে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা হারানোর পেছনের কারণ হিসেবে সরকারের সঠিক পরিকল্পনার অভাব, ভালো পরিকল্পনাগুলোকে কেটেছিড়ে তছনছ করা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সরকারের জনস্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে আপসরফা প্রভৃতি বিষয় ওঠে আসে।
Advertisement
অনুষ্ঠানে বিআইপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, এক সময় বুড়িগঙ্গার পানি হাতে নিয়ে পান করা যেত। এখন সেই বুড়িগঙ্গার ধারে নাকে রুমাল দিয়ে হাঁটতে হয়। তিনি ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমানোর জন্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নগরায়ণের পরামর্শ দেন।
সভাপতির বক্তব্যে আখতার মাহমুদ বলেন, সরকারি যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়, সেগুলো কতটা সফলতা পেল সে বিষয়ে কোনো অডিট হয় না। এগুলো অডিটের আওতায় এনে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
এ সময় নগর ও সেবাখাতের রির্পোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, কাজের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা, উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে রাজধানীতে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি, শহরের বিকেন্দ্রীকরণসহ নানা পরামর্শ দিয়ে সাংবাদিকরা বলেন, তুরাগ-বালু-বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী নদীর পানির মান ঠিক না করে এখন অর্ধশত কিলোমিটার দূর থেকে রাজধানীতে পানি আনতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। অথচ ওই টাকা দিয়ে ঢাকার আশপাশের নদীর পানি ভালো করে নগরীতে সরবরাহ করা সম্ভব ছিল। এতে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোও বাঁচত। অথচ নদীগুলোকে ধ্বংস করে মেঘনা-পদ্মা থেকে পানি আনার প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।
রাজধানীর জলাশয়-খালগুলোকে একের পর এক ধ্বংস করা হচ্ছে। অনৈতিকভাবে একের পর এক প্রভাবশালীদের আবাসন কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
Advertisement
অনুষ্ঠানে বিআইপি ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে নগরবিষয়ক প্রতিবেদনের ওপর কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সেরা রিপোর্টের পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রতি বছরের ৮ নভেম্বর নগর পরিকল্পনা দিবসে এ পুরস্কার দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল, সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা ডলি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, দফতর সম্পাদক কামরুন্নাহার শোভা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফয়সাল খান এবং বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জামাল আহমেদ, ফয়জুল্লাহ ভূঁইয়া, সাজ্জাদ হোসেন, মাসুদ রানা, হাসান ইমন, সাজিদা ইসলাম পারুল, সাইদুল ইসলাম, সোহেল মামুন, রাশেদ আহমেদ প্রমুখ।
এএস/এএইচ/জেআইএম