ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে হাজারো প্রাণের মিলনের ছন্দ। ঈদের ছুটিতে উৎসব হবে না তা কি করে হয়। তাইতো বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে হাজারো প্রাণের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা নিজ ও প্রিয়জনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন নিজের মোবাইল ফোনে।ঈদের ছুটি পেয়ে সপরিবারে আবার কেউবা বন্ধু-বান্ধব সাথে নিয়ে ছুটে এসেছেন সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। প্রকৃতি কন্যা জাফলং, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, বিছনাকান্দি জিরো পয়েন্ট ও পান্তুমাইয়ের ফাটাছড়া ঝর্ণাধারা, মাধবকুন্ড, সারিনদী, লালাখাল ও লোভাছড়ায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এই পর্যটন কেন্দ্রগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব সহজেই আকৃষ্ট করে আগত পর্যটকদের। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের পরিচিতি রয়েছে। প্রকৃতি এখানে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড় টিলা আর সমতল ভূমিতে সারি-সারি চা বাগানে সবুজের সমারোহ। অপরূপ রূপের চাদর মোড়ানো পাহাড় আর সেই পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে পিয়াইন নদী এবং পাহাড়ের গাঁ থেকে অবিরাম ঝর্ণাধারা প্রকৃতির সবটুকুই যেন লুটোপুটি খাচ্ছে এখানে। ভারত-বাংলাদেশের এই জিরো পয়েন্ট পর্যটকদের কাছে খুবিই প্রিয়।বিশেষ করে বল্লাঘাটের জিরো পয়েন্টে ডাউকী নদীর উপর ঝুলন্ত ব্রিজ আরো বেশি আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। আর প্রকৃতির ঢেলে সাজানো এসকল দৃশ্যাবলি দেখতে ঈদ পরবর্তী ছুটির দিনগুলোতে পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে রয়েছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়।এ সকল পর্যটকদের আপ্যায়ন করতে প্রস্তুত রয়েছে জাফলংয়ের আবাসিক-অনাবাসিক হোটেল রেস্তোঁরা। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গড়ে উঠেছে ভিন্ন রকম ব্যবসা বাণিজ্য। এতে রয়েছে দেশি-বিদেশি কাপড়-চোপড়ের ব্যাপক পসরা এবং কসমেটিকসহ নানা রকম উপহার সামগ্রী।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের দিন থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। পর্যটন এলাকার কোথাও যেনো তিল ধারনের ঠাঁই নেই। পর্যটন এলাকার প্রবেশ মুখ মামার বাজারের মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করে বল্লাঘাট পর্যন্ত কয়েক শতাধিক পর্যটকবাহী গাড়ি রয়েছে। রাস্তাঘাট, রেস্টুরেন্টের সম্মুখ ছাড়াও পাথর রাখার ফিল্ড ও ক্রাসার মেশিন জোন এলাকায়ও প্রচুর পরিমাণ গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে।টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে স্বপরিবারে বেড়াতে আসা পর্যটক দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ের রূপ বৈচিত্র্য থেকে সত্যিই আমরা বিমোহিত। সপরিবারে এমন সুন্দর একটা জায়গায় আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। তবে মামার দোকান থেকে জাফলং এই তিন কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা থাকায় পর্যটকরা একটু বিরক্তও। তবে জাফলং আর খাসিয়াপুঞ্জির সৌন্দর্য পর্যটকদের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। জাফলং পিকনিক সেন্টার ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার পলাশ আহমদ জানান, ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে যে হারে পর্যটকের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে সেভাবে পর্যটক আসেনি। তাই আমরাও আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারছি না।এদিকে গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি জিরো পয়েন্ট এলাকায়ও কয়েক সহস্রাধিক পর্যটকের পদচারণায় এখন মুখরিত। নতুনভাবে পরিচিতি পাওয়া এই পর্যটন কেন্দ্রটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।রাতারগুলের সোয়াম ফরেস্টে নৌকা নিয়ে জলের মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি হিজল-করচের ভেতর দিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন পর্যটকরা। দেশের একমাত্র মিঠা পানির এই জলারবনটি পর্যটকদের মুগ্ধ করে চলছে প্রতিনিয়ত। জলারবনের ভেতরে গড়ে তোলা অবজারভেশন টাওয়ার থেকেও পর্যটকরা পুরো রাতারগুলকে একসাথে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া পান্তুমাইয়ের ঝর্ণাধারায় পর্যটকদের সমাগম ছিল লক্ষণীয়। মাধবকুন্ড জলপ্রপাত : ঈদের দিন সকাল থেকেই বড়লেখার আকাশ গুমোট করে বৃষ্টি পড়তে থাকে। কখনো ভারী কখনোবা হাল্কা বৃষ্টিপাত। বৈরী আবহাওয়া থামাতে পারেনি ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক ও দর্শনার্থীদের। সকল বাধা ডিঙিয়ে জলকন্যা দর্শনে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। উৎসব প্রিয় মানুষের গন্তব্য যেনো মাধবকুন্ড জলপ্রপাত।মাধবকুন্ড জলপ্রাতে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে ঈদের ছুটিতে রাজধানীসহ সারা দেশ ও বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থী ও পর্যটকের মিলনমেলায় মুখরিত। সব ধর্ম-বর্ণের পর্যটকের আগমনে আনন্দপুরিতে পরিণত হয়ে ওঠে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ও আশপাশের এলাকা।পাকিং সমস্যায় রাস্তায় ছিলো গাড়ির দীর্ঘ লাইন। জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত যানবাহন রাখার টার্মিনালে স্থান সংকুলান না হওয়া ও ইজারাদারের প্রতিনিধি নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে গিয়ে টোল আদায় রাস্তার উপর তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে পর্যটকদের অনেক দূরে গাড়ি রেখে পাঁয়ে হেটে যেতে হয় জলপ্রপাতের কাছে।মাধবকুন্ডে আসা পর্যটক স্থানীয় ব্যবসায়ী কৃষ্ণ পাল, নাট্যকর্মী মো. শহীদ-উল ইসলাম প্রিন্স, হবিগঞ্জ নওয়াপাড়া চা বাগানের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক এএফএম ফরহাদ হোসেন বলেন, মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত হওয়া দরকার। তবে আগের চেয়ে অনেকটা উন্নত হয়েছে মাধবকুন্ড। গাড়ি পার্কিং সমস্যার কারণে অনেক ভোগান্তি হয়েছে। অনেক সময়ও নষ্ট হয়েছে। দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়েছিলাম আমরা। চিত্ত বিনোদনের জন্য পর্যটন কর্পোরেশন এখানে নির্মাণ করেছে হাতি, পেঙ্গুইন, মৎসকন্যা, বাঘ, ভালুক, বক, ঈগল পাখি, কুমির, বানর ইত্যাদির ভাষ্কর্য। এসব ভাষ্কর্য আগত শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীকে বাড়তি আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে। ভাষ্কর্যগুলো কৃত্রিম হলেও প্রকৃতির নিপূণ অনুকরণে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে সবকিছুই প্রাকৃতিক বলে মনে হবে।প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাতে অবিরাম ঝর্ণাধারা আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যুগ যুগ ধরে এ পাহাড়ি জলকন্যা সৌন্দর্য ও ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে টানছে।ছামির মাহমুদ/এসএস/এমআরআই
Advertisement