পিচ বোলিং বান্ধব, স্পিনারদের বল টার্ন করছে, পেসাররা সুইং পাচ্ছেন। উইকেটে বেশি সময় টিকে থাকাই দায়। তাই বলে ৩ রানে ৫ উইকেটের পতন? অফ-স্পিনার পেরেরার ও ধনঞ্জয়ার ঘূর্ণিতে শেষ পাঁচজন আউট হলেন ২০ বলের ব্যবধানে। এটা কি স্বাভাবিক? মোটেই স্বাভাবিক নয়। মানা যেত ওই দুই লঙ্কান স্পিনারের বল অস্বাভাবিক টার্ন করতো, বিপদজনকভাবে লাফিয়ে উঠতো কিংবা নিচু হয়ে আসতো। তা তো হয়নি।
Advertisement
ভালো খেলতে খেলতে প্রথম ভুল পথে হাঁটলেন লিটন দাস। পেসার লাকমলের এক ফুট বাইরের বলকে তাড়া করে লিটন দাস হলেন বোল্ড। তারপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ,সাব্বির, রাজ্জাক, তাইজুল, মোস্তাফিজরা ব্যাট চালালেন আনকোরা স্কুল ছেলেদের মত। না শটস খেললেন, না ব্যাকরণ মেনে ডিফেন্স করলেন- যেন জুজুর ভয় বসেছিল তাদের। ফুট ওয়ার্কের বালাই নেই। যে যার মত খেললেন ব্যাকরণের তোয়াক্কা না করেই।
এই পাঁচজনের কেউ আক্রমণাত্মক মেজাজে লঙ্কান স্পিনারদের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলেও একটা সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া যেত। এ ধরণের উইকেটে বেশি সময় টিকে থাকা কঠিন। স্পিনারদের টার্ন আর পেসারদের সুইং মোকাবেলায় খুব পরিপাটি টেকনিক নিখুঁত ব্যাটিং শৈলি, ধৈর্য, মনঃসংযোগ ছাড়া লম্বা ইনিংস খেলা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যানের মধ্যেও অমন গুণ দেখা যায়নি। তারপর কেউ একজন যদি লঙ্কান ওপেনার কুশল মেন্ডিসের মত (৯৮ বলে ৬৮) আক্রমণাত্মক মেজাজে উল্টো বোলারদের কাউন্টার অ্যাটাক করতেন তাহলে একটা কথা ছিল।
কিন্তু সে কাজটিও করতে পারেননি। তবুও মিরাজ (৭৮ বলে ৩৮) সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। একটি ফিফটি আর মিরাজের সমান আরেকটি ইনিংস হলেই হয়তো শ্রীলঙ্কাকে ধরে ফেলা যেত। কিন্তু তা আর হল কই। সে পাঁচজন মিলে যে মিরাজের অর্ধেক রান করেছেন। আর সে কারণেই ১১২ রানে পিছিয়ে থাকা।
Advertisement
টেস্টে ১১২ রানের ফারাক বড় কিছু নয়। খেলাটা পাঁচদিনের, এই ব্যবধান কমানোর সময় ও সুযোগ থাকে পর্যাপ্ত। কিন্তু শেরে বাংলার যে উইকেট খেলা হচ্ছে সে উইকেটে একশোর বেশি রানে পিছিয়ে পড়া যে অনেক বড়। এমন বোলিং বান্ধব উইকেটে গত ১৮ মাসে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানো দুই টেস্টের একটিতেও কোন দল প্রথম ইনিংসে ১১২ রানে পিছিয়ে থাকেনি। বাংলাদেশ তো নয়ই। বরং ইংল্যান্ডের ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের করা ২২০ রানের জবাবে ২৪৪ রান করে। আর গত বছর আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথম ইনিংসের ফারাক ছিল ৪৩ রানের। কাজেই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১১২ রানে পিছিয়ে থাকাই হতে পারে কাল। এ উইকেটে বোলারদের কর্তৃত্ব। তার উপর চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার বাড়তি ঝুঁকি। সব মিলে ঢাকা টেস্টের সমীকরণটা খুব কঠিন হয়ে গেছে টাইগারদের।
এখন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাহিনীর ভাগ্য নির্ভর করছে প্রাথমিকভাবে বোলারদের হাতে। রাজ্জাক, তাইজুল, মিরাজ ও মোস্তাফিজরা যদি লঙ্কান বোলারদের মত খুব ভালো বোলিং করতে পারেন, শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসকে যদি ১৫০ এর নিচে বেধে ফেলা যায়, তাহলে আবার ম্যাচে ফেরার ক্ষেত্র তৈরি হবে। লঙ্কানরা আড়াইশ পেরিয়ে ৩০০ রানে এগিয়ে গেলে আর হয়তো কিছুই করার থাকবে না।
কেউ কেউ বার বার ম্যাচ কয়দিন টিকে তা নিয়ে কথা বলছেন। পাঁচ দিনের ম্যাচ আড়াই দিনে বা তিন দিনে শেষ হয়ে যেতে পারে। তা শোনা যাচ্ছে অনেকের মুখেই। আসলে ম্যাচ কতদিনে শেষ হবে তা নির্ভর করছে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসের উপর। যেথেতু আজ মাত্র দ্বিতীয় দিন, সবে লাঞ্চের পর খেলা শুরু হয়েছে, তাই লঙ্কানরা কোন রকম তাড়াহুড়ো না করে যত বেশি সম্ভব রানে লিড নিয়ে টাইগারদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চাইবে।
এখন বাংলাদেশের বোলাররা যদি তাদের কম সময় ও রানে বেধে ফেলতে পারেন সেটা ভিন্ন কথা। দেখা যাক রাজ্জাক, তাইজুল, মিরাজ ও মোস্তাফিজরা কি করতে পারেন।
Advertisement
এআরবি/এমআর/পিআর