ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলো যখন উপমহাদেশে, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় খেলতে আসে, তখন তাদের প্রধান দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় এখানকার স্পিনিং ট্র্যাক এবং স্পিনাররা। ঢাকার মাঠেই ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া হেরেছে মূলতঃ স্পিনারদের সামনে কাবু হয়েই। ভারতে গিয়ে তো অন্যরা স্পিনারদের সামনে দাঁড়াতেই পারে না। শ্রীলঙ্কায়ও প্রায় একই অবস্থা। বছর দেড়েক আগেই তো শ্রীলঙ্কায় ৩-০ ব্যবধানে হেরে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট পরাশক্তি।
Advertisement
কিন্তু লড়াইটা যদি উপমহাদেশের দুই দেশের মধ্যে হয়! তাহলে তো কথাই নেই- নিশ্চিত স্পিনারদের স্বর্গভূমিতে পরিণত হয় উইকেট। দুই দলেই স্পিনের আধিক্য। স্পিন খেলার স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। টক্কর লাগে মূলত স্পিনারদের মধ্যেই। শেষ পর্যন্ত সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে পারে যে দল, তাদের গলাতেই ওঠে জয়ের মালা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের হোম সিরিজেও প্রায় একই অবস্থা। দুই দলেই স্পিনারদের আধিক্য। যদিও চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট ছিল পুরোপুরি ব্যাটিং বান্ধব। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৫১৩ রান করার পর শ্রীলঙ্কা করলো ৭১৩ রান। স্পিনাররা খুব বেশি কিছু করার সুযোগ পাননি কিংবা করতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসেও লঙ্কান স্পিনাররা ব্যর্থ হয়েছে মুমিনুল হক এবং লিটন দাসের সামনে। জুটি ভাঙতে পারেননি। ফলে টেস্ট হয়েছে ড্র।
ঢাকায়ও স্লো এবং লো ট্র্যাক হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। যে উইকেটে খেলা হবে, সে উইকেট দেখে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা এ দুই দেশের অধিনায়কই জানিয়ে দিয়েছেন, এটা হবে স্পিনিং উইকেট। এখানে স্পিনাররাই সবচেয়ে বেশি সহায়তা পাবে। এবং দু’জনই একই সঙ্গে জানিয়েছেন, এ টেস্টে রেজাল্ট হবেই।
Advertisement
ঢাকা টেস্ট শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল বলেন, ‘ত্রিদেশীয় সিরিজেই আমরা দেখেছি, এখানকার উইকেট খুবই বাজে। এ উইকেট পুরোপুরি স্পিনারদের জন্য। ব্যাটসম্যানদের জন্য নয়। ব্যাটসম্যানদের জন্য এখানে দারুণ চ্যালেঞ্জ। এটা খুবই শুষ্ক উইকেট। স্পিনাররাই থাকবেন এ টেস্টের চালকের আসনে। অবশ্যই এখানে ফল হবে। তবে দু’দলের জন্যই হবে কঠিন চ্যালেঞ্জিং।’
স্পিনাররা যে ঢাকা টেস্টে মূল ভুমিকা পালন করবে, এ কথা বলে গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। তিনিও বললেন, ‘ঢাকার উইকেট হবে স্পিনারদের জন্য সহায়ক। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘যতটুকু দেখলাম পিচ শুষ্ক মনে হলো। নরমালি আমরা ঢাকায় যে ধরনের উইকেট দেখতে পাই। ত্রিদেশীয় সিরিজেও দেখবেন বোলারদের জন্য মোটামুটি হেল্প ছিল। ঢাকার উইকেটে কিছু না কিছু হেল্প থাকে বোলারদের জন্য। ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।’
যদিও বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কা দলে অভিজ্ঞ স্পিনার রয়েছে। বর্তমান বিশ্বেরই অন্যতম সেরা স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। যার নামের পাশে লেখা ৪১১টি টেস্ট উইকেট। মুত্তিয়া মুরালিধরনের যোগ্য উত্তরসূরী। চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের বোলারদের বেশ ভুগিয়েছেন দিলরুয়ান পেরেরা এবং লক্ষ্মণ সান্দাকান। এই তিন স্পিনারের সঙ্গে ভালো সঙ্গ দিতে পেরেছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও।
অন্যদিকে বাংলাদেশ দলের সেরা স্পিনার, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নেই। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেই আঙ্গুলে চোট পেয়ে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। যে কারণে পুরো টেস্ট সিরিজই খেলা হচ্ছে না সাকিব আল হাসানের। ফলে রঙ্গনা হেরাথের যোগ্য মোকাবেলা যাকে দিয়ে হতো, তাকেই পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
Advertisement
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের স্পিন ডিপার্টমেন্ট সাজানো হয়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম এবং সানজামুল ইসলামকে দিয়ে। সঙ্গে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন এবং মুমিনুল হকও স্পিন বোলিং দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মূল তিন স্পিনারকে। ঢাকা টেস্টের দল থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে সানজামুল ইসলামকে। অভিজ্ঞ স্পিনার রাজ্জাককে রাখা হয়েছে দলে। তাকে যদি খেলানো হয়, তাহলে অভিজ্ঞতা দিয়ে রাজ্জাক কিছু করে দেখাতে পারেন কি না সেটাই দেখার। তবে, মেহেদী হাসান মিরাজের হাতেই থাকবে বাংলাদেশের স্পিনের ব্যাটন।
যে একাদশই গঠন করা হোক না কেন, বাংলাদেশ দলেও যে স্পিন আধিক্য থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দিন শেষে মিরপুর অপেক্ষা করছে একঝাঁক স্পিনারের লড়াই দেখার জন্যই। কে জিতবে এই স্পিন লড়াইয়ে!
আইএইচএস/এমএস