এননটেক্স নামের এক প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। নিয়ম ভেঙে এক গ্রাহককেই মাত্র ছয় বছরে এ ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। আর এ কেলেঙ্কারির শুরু ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সময়ে।
Advertisement
আবুল বারকাত ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে দুই মেয়াদে পাঁচ বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। সে সময়ে ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ পান এননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুস (বাদল)। তার মূল ব্যবসা বস্ত্র উৎপাদন ও পোশাক রফতানি।
তাই ব্যাংক পাড়ায় আলোচিত নতুনভাবে জনতা ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মূল ব্যক্তি আবুল বারকাত। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অনেকটা নিশ্চুপ তিনি। এড়িয়ে যাচ্ছেন ইস্যুটি। নানা কৌশলে আড়াল করছেন নিজেকে।
এসব বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা ৭ মিনিটে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ওয়েটিং পাওয়া যায়। পরে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে আবারও কল করা হলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, কি বিষয়ে বলেন। জনতা ব্যাংক সম্পর্কে জানার জন্য ফোন করেছি স্যার। বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি (আবুল বারকাত) বলেন, আমি এখন মিটিংয়ে আছি। সন্ধ্যার আগে ফ্রি হবো না। সন্ধ্যার পর কল করেন।
Advertisement
সন্ধ্যা ৭টা ৮ মিনিটে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এর পর ৭টা ২৭ মিনিটে আবারও কল করা হলে তিনি বলেন, কে বলছেন আপনার পরিচয় দিন। নাম পরিচয় দেয়ার পর তিনি বলেন, কি বিষয়ে কল করেছেন। জনতা ব্যাংকের ঋণ বিষয়ে স্যার। বলা মাত্রই তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে ক্যান্সার রোগী দেখতে এসেছি। এখন কথা বলতে পারবো না। এদিকে জনতা ব্যাংকের নিয়ম বহির্ভূত ঋণ দেয়ার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একটি অনুষ্ঠানে মুহিত বলেন, আবুল বারকাত (জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান) এত টাকা দিয়েছেন, আমি তো জানিই না। আমি জানি যে তার সময়ে বড় বড় বেনামি ঋণ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, এখন আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে অর্থের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো আসলে অনেক জটিল। এসব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সে ব্যবস্থাই নেব।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এননটেক্সের বিষয়ে কয়েকটি নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ দিয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখনো ওই চিঠির জবাব পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠিতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়, গ্রাহকের ২২টি প্রতিষ্ঠানের নামে তিন হাজার ৫২৮ কোটি টাকার ফান্ডেড ও এক হাজার ১২০ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ১১টির অনুকূলে এখনও 'প্রকল্প পরিপূরক প্রতিবেদন' ইস্যু হয়নি। ফলে আদৌ এসব ঋণের সদ্ব্যবহার হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নয়।
Advertisement
এসআই/এএইচ/এমএস