শুরু দেখে মনে হচ্ছিল, সাগরিকায় বুঝি এবার টাইগারদের বিজয় নিশান উড়বে। কি অসাধারণ সূচনা! প্রথম দিনই পৌনে চারশো (৩৭৪/৪ ) রান করে ফেলা। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে ব্যাটের তেজ কমে স্তিমিত হয়ে যাওয়া। এক সময় রীতিমত চাপে পড়া। সেখান থেকে শেষ দিনে মুুমিনুল হক ও লিটন দাসের দারুণ জুটিতে চাপের মুখেও লড়িয়ে ড্র ‘তে শেষ।
Advertisement
খুব মজবুত ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে প্রথম ইনিংসের মাঝামাঝি তড়িঘড়ি করা আর নির্বিষ বোলিং বাদ দিলে প্রথম টেস্টে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খারাপ খেলেনি বাংলাদেশ। কারো কারো মতে বরং ভালোই খেলেছে টাইগাররা।
এখন ওই ম্যাচ শেষ হতেই জেগেছে প্রশ্ন, কৌতুহলের ফানুস উড়ছে আকাশে-বাতাসে; আচ্ছা, রাজধানী ঢাকায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে কি করবে টাইগাররা? চট্টগ্রামের ভুল ত্রুটি কাটিয়ে ভালো কিছু করবে? না আবার পারফরমেন্সের গ্রাফ নিচের দিকে নামবে?
তারও আগে উঠছে প্রশ্ন, শেরে বাংলায় রিয়াদ বাহিনীর গেম প্ল্যান কি হবে? টিম কম্বিনেশন কি অমনই থাকবে? মানে সাত স্বীকৃত ব্যাটসম্যান, তিন স্পিনার আর এক পেসার নিয়ে কি আবারও মাঠে নামবে টাইগাররা, নাকি মাঠ ও উইকেট বদলে টিম কম্বিনেশন তথা গেম প্ল্যানেও লাগবে পরিবর্তনের ছোঁয়া?
Advertisement
অবশ্য গতকাল প্রথম টেস্ট শেষ হবার ঘন্টা দুয়েক পর স্কোয়াডে ছোট্ট পরিবর্তনে একটা সুস্পষ্ট আভাস মিলছে। ১৬ জনের দল ছেঁটে ১৫ ‘তে নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রথম টেস্টের ১৬ জন থেকে দু'জন বাদ পড়েছেন।
এর মধ্যে স্পিনারের কোটায় টেস্ট অভিষেক হয়ে যাওয়া বাঁহাতি সানজামুল ইসলাম বাদ পড়েছেন। বাদ পড়েছেন চট্টগ্রাম টেস্টে না খেলা পেসার রুবেল হোসেন। তার বিপরীতে দলে ঢুকেছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান।
পেসার রুবেল হোসেনকে বাদ দেয়ায় ১৫ জনের দলে পেসার এখন মোটে দু'জন- মোস্তাফিজুর রহমান আর কামরুল ইসলাম রাব্বি। কাজেই একাদশে হয় এক পেসার, না হয় দুই পেসার থাকবেন; বিকল্প ভাবনার সুযোগ নেই। এখন দেখার বিষয়, স্পিনারের কোটায় ঢাকাতেও তিনজনই খেলেন কিনা। আগামীকাল মঙ্গলবার মধ্যাহ্নে প্র্যাকটিসেই দ্বিতীয় টেস্টের সম্ভাব্য একাদশ চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
এদিকে রোববার বিকেলে প্রথম টেস্ট শেষ হবার পর টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন আর সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম সন্ধ্যার ফ্লাইটেই চট্টগ্রাম থেকে রাজধানীতে ফিরে এসেছেন। আর পুরো দলের বহর ঢাকা ফিরেছে আজ দুপুরে। সোমবার ছুটির আমেজেই কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। মঙ্গলবার আবার নিবিড় অনুশীলন।
Advertisement
শেরে বাংলায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে লঙ্কানদের বিপক্ষে টাইগারদের লাইন আপ কেমন হবে? প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আর টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের তকমায় বাংলাদেশ দলের হেড কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে তারা একাদশ সম্পর্কে কোনো রকম পূর্ব ধারণা দিতে নারাজ।
সুজন যেমন বললেন, 'উইকেট না দেখে একাদশ সাজানোর প্রশ্নই আসে না। কালকে মাঠে গিয়ে আগে শেরে বাংলার উইকেট দেখে নেই। উইকেট দেখলে একটা মোটামুটি ধারণা জন্মাবে। তখন আমরা গেম প্ল্যান ও টিম কম্বিনেশন ঠিক করতে পারবো।'
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথাও প্রায় একরকম। দু'জন একাদশ সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু না বললেও প্রথম টেস্টে বিভিন্ন ক্রিকেটারের অ্যাপ্রোচ, অ্যাপ্লিকেশন ও পারফরমেন্সের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, 'আমরা খুঁটিয়ে দেখছি, কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা ও ঘাটতি আছে। যে সব জায়গায় ঘাটতি, তা পূরনের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে আমাদের।'
কথা-বার্তায় মনে হলো টিম ম্যানেজমেন্ট বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলামের পারফরম্যান্সে একদমই সন্তুষ্ট নয়। তাই তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ভেতরের খবর, ১৫ জনের স্কোয়াডে রাখা হলেও মোদ্দেক হোসেন সৈকতের পারফরম্যান্স নিয়েও দলের অভ্যন্তরে রীতিমত অসন্তোষ আছে। মোসাদ্দেকের শরীরী ভাষা ও দুই ইনিংসের ব্যাটিংয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় টিম ম্যানেজমেন্ট ওই পজিসনে রদবদলের চিন্তাও করছে।
প্রধান নির্বাচক বলেই দিয়েছেন, 'সাত নম্বর পজিশন নিয়ে আমরা দোটানায় আছি। সাব্বিরকেও ডাকা হয়েছে। তাকে খেলানো যায় কিনা, সে চিন্তাও আছে।'
জাগো নিউজের সাথে আজ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ও প্রধান নির্বাচক এর বেশি কোন কথা না বললেও ভিতরের খবর, টিম কম্বিনেশনে তেমন পরিবর্তন অাসার সম্ভাবনা খুব কম। প্রথম টেস্টের মত সাত ব্যাটসম্যান খেলানো হবে; এটা শতভাগ নিশ্চিত। শুধু সাত নম্বর ব্যাটিং পজিশনে একটা রদ বদলের সম্ভাবনা আছে। মোসাদ্দেকের বদলে সাব্বিরকে খেলানোর চিন্তা চলছে। এই কারণে নাকি সাব্বিরকে আবার ডাকা হয়েছে।
সেটা হতেই পারে। বাকি ছয় ব্যাটসম্যান দুই ইনিংসের কোনো একবার ঠিকই মোটোমুটি ভালো খেলেছেন। মুমিনুল দুই ইনিংসে দু'রকম স্টাইলে খেলে ম্যাচসেরা। প্রথমবার তেজ্জোদ্দীপ্ত উইলোবাজিতে ১৭৬ আর পরের বার চাপের মুখে ধৈর্য্য, সংযম আর সংগ্রামের মিশেলে শতরান করে ম্যাচ বাঁচিয়েছেন তিনি।
তামিম, ইমরুল, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহও উৎরে গেছেন। প্রথম ইনিংসে অফস্টাম্পের ঠিক বাইরের বল ছেড়ে দিয়ে শূন্য রানে বোল্ড হওয়া লিটন দাস দ্বিতীয় ইনিংসে প্রাণপন লড়ে দলের হার এড়াতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র মোসাদ্দেকই দুইবারের একবারও দুই অংকে পৌঁছাতে পারেননি। প্রথমবার উইকেটে এসে পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়ার আগেই আউট। উইকেটের চরিত্র না বুঝে অল্প সময়ের মধ্যে (১৫ বলে ৮ রানে) লঙ্কান বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের শিকার হন তিনি। হেরাথের স্পিনের বিপক্ষে হঠাৎ দু পা সামনে বেড়িয়ে মিড অনের মাথার ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হন মোসাদ্দেক। যেটা দৃষ্টিকটুই ঠেকেছে।
স্কোর বোর্ড জানাচ্ছে, দ্বিতীয় ইনিংসে নট আউট (৫৩ বলে ৮ রানে) ছিলেন মোসাদ্দেক। তবে তা নিয়েও কথা আছে। মুমিনুল আর লিটন দাস আউট হবার পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সাথে সেই ৮ রানে অপরাজিত অবস্থায় মাঠ ছাড়লেও তার ব্যাটিং কারোরই মন ভরাতে পারেনি।
কেউ কেউ আবার ভাবতে পারেন, চাপের মুখে একদিক আগলে রাখতেই ওমন ব্যাটিং করেছেন মোসাদ্দেক। আসলে তা নয়। লঙ্কান বোলিং খেলতে রীতিমত কষ্ট হয়েছে তার। চোখে মুখে ছিল চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। এক মুহূর্তর জন্য আস্থা নিয়ে খেলতে পারেননি। প্রতি মুহূর্তেই যেন মনে হচ্ছিল, এই বুঝি আউট হয়ে যাবেন।
যার মাঝে আস্থার অভাব, যিনি দুই ইনিংসে ডাবল ফিগারে যেতে পারেননি, এমন একজন ব্যাটসম্যানকে সিরিজ নির্ধারণী পরের টেস্টে খেলাতে দ্বিতীয়বার ভাবতেই হবে টিম ম্যানেজম্যান্টকে। জানা গেছে, মোসাদ্দেককে নিয়ে এই ঝুঁকিটা নিতে নারাজ টিম ম্যানেজমেন্ট । তাই তার বাদ পড়া এবং সাত নম্বরে তার জায়গায় সাব্বিরের খেলা একরকম নিশ্চিত।
চট্টগ্রামে বাঁহাতি মোস্তাফিজুর রহমান একমাত্র পেসার হিসেবে খেললেও শেরে বাংলায় এক না দুই পেসার খেলানো হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। প্রথম টেস্টের মত তিন জন খেললে তো কথাই নেই, দুজন স্পিনার খেলানো হলেও অভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাকের একাদশে আসার কথা।
প্রথম টেস্টের দু'দিন আগে তড়িঘড়ি করে রাজ্জাককে চট্টগ্রামে উড়িয়ে নেয়া হলেও খেলানো হয়নি। তার বদলে সানজামুল ইসলামকে একাদশে সুযোগ দেয়া হয়। অভিষেক ম্যাচে ৪৫ ওভার বল করে ২ মেডেনসহ ১৫৩ রান দিয়ে একটি মাত্র উইকেট পেয়েছেন এই স্পিনার। তাই শেষ টেস্টের আগেই স্কোয়াড থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাকে।
জানা গেছে, ঢাকা টেস্টে স্পিনারের কোটায় রাজ্জাককে রাখার সিদ্ধান্ত মোটামুটি চূড়ান্ত। তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ওপর অবশেষে আস্থা রাখতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। এক পেসার ফর্মুলায় চললে রাজ্জাকের খেলা শতভাগ নিশ্চিত। একটি অতি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দু'জন করে পেসার ও স্পিনার দিয়ে একাদশ সাজালেও নাকি রাজ্জাককে খেলানো হবে।
এআরবি/এমএমআর/আইআই