দেশজুড়ে

হাকালুকিতে ধরা পড়েছে রেকর্ড পরিমাণ মাছ

গত বছরের দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় ফসল হারিয়ে হাকালুকি পাড়ে ছিল হাহাকার। হাকালুকি ঘিরে যাদের জীবন-জীবিকা তারা সব হারিয়ে হয়েছিলেন নিঃস্ব।

Advertisement

কিন্তু মাছের সঙ্গে যাদের জীবিকা জড়িত তাদের কাছে এ বন্যা বছর শেষে হয়ে গেছে আশীর্বাদ। এ বছর হাকালুকিতে মাছের পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন। দেখা মিলছে প্রায় বিপন্ন অনেক প্রজাতির মাছ। যার মধ্যে সংকটাপন্ন ১৩ প্রজাতির মাছ এবং চরম বিপন্ন ৮ প্রজাতির মাছ রয়েছে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর বন্যায় ধান পচে অ্যামোনিয়া গ্যাসে হাকালুকি হাওরে প্রায় ২৫ মেট্রিক টন মাছ মারা মায়। এরপরও এ বছর মাছের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে।

এ বছর হাকালুকিতে ১৭ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। যা বিগত বছরগুলোর গড় ১৪ হাজার মেট্রিক টনের থেকে ২০ শতাংশ বেশি। মাছ উৎপাদনের দিক থেকে নতুন রেকর্ড গড়েছে হাকালুকি।

Advertisement

প্রতি বছর ১৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয় হাকালুকিতে। এ বছর বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত ও বিল নার্সারি স্থাপনসহ নানা উদ্যোগের ফলে ২০ শতাংশ মাছ বেশি উৎপাদন হয়েছে।

সরেজমিনে হাকালুকি ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন সাইজের মাছের পাশাপাশি ২০ থেকে ৩০ কেজি ওজনের মাছও ধরা পড়ছে। এ বছর দীর্ঘদিন বন্যা থাকায় মাছ বড় হয়েছে দ্রুত।

রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন ঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররা কিনছেন লাখ লাখ টাকার মাছ। ব্যবসায়ীরা জানালেন, একদিনে কোটি টাকার উপরে মাছ বিক্রি হয়েছে। ধরা পড়েছে বড় বড় মাছ।

স্থানীয় জেলে মুকিদ মিয়া, জিলা মিয়াসহ অনেকে জানায়, এ বছর বড় বড় রুই, বোয়াল, আইড়, কমন কার্প, মৃগেল মাছের আধিক্য বেশি হলেও অন্য জাতের দেশি মাছও ধরা পড়ছে। আর চাপিলা, টেংরা, মলা ও চিংড়িসহ বিভিন্ন জাতের প্রচুর ছোট মাছ ধরা পড়ছে। ছোট ও বড় মাছ পৃথকভাবে ঘাটে বিক্রি হচ্ছে। আছে বিলুপ্ত প্রজাতির মাছও।

Advertisement

এ বছর উৎপাদন বেড়েছে বিপন্ন প্রজাতির মাছের। প্রায় বিপন্ন প্রজাতির মাছ- পাবদা, ফলি, চিতল, আইড়, কালিবাউশ ও গুলশা মাছ এবার বেশি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া রানি মাছ, কাকিলা, ছোট চিংড়ি, কাজলি, মলা, পুঁটি, টেংরা, পটকা, ভেদা, গনিয়া, কানি পাবদা ইত্যাদি গত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর অনেক বেশি দেখা মিলছে হাকালুকিতে।

এছাড়া বিপন্ন প্রজাতির মাছ- চিতল, টিলা, খোকশা, অ্যালং ও কাশখাইরা রয়েছে। চরম বিপন্ন প্রজাতির মধ্যে আছে- ভাঙন, বাটা, নান্দিনা, ঘোড়া মুইখ্যা ও সরপুঁটি।

পাশাপাশি সংকটাপন্ন মাছের মধ্যে আছে- ফলি, বামোশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি মাছের দেখা মিলছে হাকালুকিতে। যা জেলা ও উপজেলার কার্যালয়ের সঠিক উদ্যোগের ফসল বলে মনে করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা।

বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ ফিরে আসা প্রসঙ্গে কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, খুশির খবর হচ্ছে এ বছর বিপন্ন প্রজাতির অনেক মাছ ফিরে এসেছে। কঠোরভাবে মৎস্য আইন প্রয়োগের ফলে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। প্রতি বছর ১৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয় হাকালুকিতে। এ বছর বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত ও বিল নার্সারি স্থাপনসহ নানা উদ্যোগের ফলে ২০ শতাংশ মাছ বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস আকন্দ জানান, হাকালুকি হাওর ছাড়াও জেলার কাউয়াদিঘী, হাইল হাওরসহ বিভিন্ন হাওর-বিলে এ মৌসুমে মাছ ধরা হয়। জেলায় বছরে মাছের চাহিদা প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় ৪৩ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়।

গত বছর বন্যায় অ্যামোনিয়া গ্যাসে হাকালুকি হাওরে প্রায় ২৫ মেট্রিক টন মাছ মারা যাওয়ার পর সেই ক্ষতি পোষাতে ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে রুই, কাতলা ও মৃগেল জাতীয় ২৬ লাখ ৪০ হাজার পোনা উৎপাদন করে হাওরে ছাড়া হয়।

এছাড়া আরও ২৮ লাখ টাকার পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়। এবারের বন্যা ছিল দীর্ঘ সময়ের। এতে পানি ছিল অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। তাই মাছ বার বার প্রজননের সময় ও সুযোগ পেয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত বড় হয়েছে।

এএম/জেআইএম