লিটল মাস্টার তো আর এমনি এমনি বলা হয় না তাকে। বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যানও অনেকে বলে থাকেন। সেটা তার টেস্ট গড়ের কারণে। একটা সময় তো ছিল, ব্র্যাডম্যানের পর সবচেয়ে বেশি রানের গড় বাংলাদেশের মুমিনুল হকের। টানা ১১ টেস্টে হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড রয়েছে তার নামের পাশে। ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্টে বৃষ্টি দুর্ভাগ্যের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে পারেননি। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও দুটি টেস্ট ছিল পুরোপুরি বৃষ্টি বিঘ্নিত। যে কারণে টানা হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ডটা আর নিজের নামের পাশে লেখাতে পারেননি বাংলাদেশের লিটল মাস্টার।
Advertisement
কিন্তু উচ্চতায় ছোট ক্রিকেটারটির হৃদয় যে অনেক বড় সেটা অনেক আগেই টের পেয়েছে সবাই। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ- সবাই। ব্যাট হাতে দলকে একটা ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেবেনই। ব্যাটিংয়ে সব সময়ই থাকেন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে। মুমিনুল চেষ্টাও করেন, তার ওপর সবার এ যে বিশাল আস্থা, তার প্রতিদান দেয়ার।
অথচ, বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট স্পেশালিস্টের ক্যারিয়ারই কি না ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশের কোচ হওয়ার পর নানা অজুহাতে একে ওকে বাদ দেয়ার যে ধারাবাহিকতা হাথুরুর ছিল তার শিকার হয়েছিলেন মুমিনুল হকও। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরার বলে দু’বার এলবিডব্লিউ আউট হওয়ার পর হাথুরু আবিস্কার করলেন, মুমিনুল অফ স্পিন খেলতে পারেন না। এর আগে হাথুরুর আবিস্কার ছিল, মুমিনুল পেস বলে বাউন্স সামলাতে পারেন না।
এসব নানা অজুহাতে শেষ পর্যন্ত কলম্বোয় বাংলাদেশের শততম টেস্টে মুমিনুলকে বাদ দিয়ে গঠন করলেন একাদশ। বাদ দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহকেও। এরপর দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘোষিত ১৪ জনের দলে মুমিনুলকে রাখাই হয়নি। বাদ দেয়া হলো। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া। চারদিকে সমালোচনার ঝড়। শেষ পর্যন্ত বিসিবির চাপে এবং মোসাদ্দেক সৈকতের চোখের ইনজুরির কারণে দলে নেয়া হয় মুমিনুলকে। যদিও মিরপুর টেস্টে তাকে একাদশে রাখা হয়নি।
Advertisement
সেই মুমিনুল হাথুরুসিংহকে বলতে গেলে দেখিয়ে দিলেন। সেই হাথুরুর বিপক্ষে খেলতে নেমেই প্রথম সুযোগকে কাজে লাগালেন। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনই মাত্র ৯৬ বলে তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির উদযাপনটা ছিল তার পুরোপুরি বুনো। শান্ত-শিষ্ট মুমিনুলকে কখনোই এতটা উগ্র উদযাপন করতে দেখা যায় না। অথচ, তিনি কি না ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট এবং হেলমেট ছোঁড়ার ভঙ্গি করে কাউকে যেন জানিয়ে দিলেন, দেখো আমার সামর্থ্য কতটা।
শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হলেন ১৭৬ রান করে। ডাবল সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও সেটাকে কাজে লাগাতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামে ২০০ রান পিছিয়ে থেকে। চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে তামিম, ইমরুল আর মুশফিকের আউট হওয়ার কারণে বাংলাদেশ শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, হারতেও পারে দল। কিন্তু মুমিনুল সেই আতঙ্ক গায়ে মাখলেন না। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে তিনি এবারও বুঝিয়ে দিলেন, দলের জন্য তার ব্যাট সব সময়ই খোলা তরবারী।
সবচেয়ে বড় কথা, চাপের মুখে যেভাবে তিনি সেঞ্চুরি করলেন সেটা প্রতিপক্ষ শিবির থেকেও হয়েছে প্রশংসিত। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে মুমিনুলকে পাশে বসিয়েই উচ্চসিত প্রশংসা করলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জানিয়ে দিলেন, মুমিনুল মানুষটা অনেক ছোট হলে কী হবে, তার হৃদয়টা অনেক বড়। অনেক বেশি সাহস তার।
দুই ইনিংসে মুমিনুলের সেঞ্চুরির সম্পর্কে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘মানুষ ছোট, কিন্তু কাজ বড় করে। একট কথা বলবো- ওর হার্টটা বড়। হি ইজ আ বিগ হার্টেট ম্যান এবং এ জন্যই ও আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের জন্য ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। দোয়া করি সামনে ও আরো ভালো করবে।’
Advertisement
আইএইচএস/জেআইএম