একই টেস্টের দুই ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি। এর আগে আর কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান করে দেখাতে পারেননি। যেটা করে দেখিয়েছেন লিটল মাস্টার মুমিনুল হক। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেললেন ১০৯ রানের অবিশ্বাস্য একটি ইনিংস। তার পরের সেঞ্চুরিটার ওপর দাঁড়িয়েই মূলতঃ বাংলাদেশ ম্যাচটা ড্র করতে সক্ষম হয়।
Advertisement
দুই সেঞ্চুরির তুলনা করলে তাহলে এগিয়ে থাকবে কোনটি? ভক্ত-সমর্থকরা হয়তো কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যাবেন। কেউ কেউ বলবেন, প্রথম ইনিংসে তিনি ১৭৬ রানের বিশাল স্কোরটি না করলে তো বাংলাদেশের রান ৫০০ পার হতো না। তাহলে তো, দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের চেয়ে আরও অনেক বেশি পেছনে পেড় যেতে হতো।
আবার কেউ কেউ মত দেবেন, না দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটিই সেরা। কারণ, ব্যাটিংয়ের দুই মূল স্তম্ভ তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহীম চতুর্থদিন শেষ বিকেলে আউট হওয়ার পর বাংলাদেশ দলের দলের অন্যতম আশা-ভরসার স্থল ছিলেন কেবলমাত্র মুমিনুল হক। পঞ্চম দিন নিশ্চিতভাবেই উইকেটে বল ঘোরার কথা। আগেরদিন শেষ মুহূর্তে মুশফিকুর রহীমকে আউট করে রঙ্গনা হেরাথ ইঙ্গিত দিয়েছেন, শেষ দিক ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তিনি।
সে হিসেবে বাঁ-হাতি অর্থোডক্স হেরাথকে মোকাবেলা করার সামর্থ্য রাখে কেবল বাম-হাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। বাকিরা সবাই তো ডান হাতি। আর ডান হাতি ব্যাটসম্যানের সামনে হেরাথ হয়ে উঠতে পারেন রীতিমত আতঙ্ক হিসেবে। কিন্তু চতুর্থ দিন বিকেলে পরপর তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পর বাংলাদেশ শিবিরে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল, সে আতঙ্ককে নিজের মধ্যে সংক্রমিত হতে দেননি মুমিনুল।
Advertisement
দারুণ ধৈর্যর পরিচয় দিয়েছেন। লিটন কুমারকে নিয়ে উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে মারার বল মেরেছেনও। বোলারদের শাসন করে তিনি ঠিকই ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নিলেন। লিটন কুমার দাসকে নিয়ে গড়লেন ১৮০ রানের অনবদ্য এক জুটি।
এই একটি জুটিই বাঁচিয়ে দিলো বাংলাদেশকে। মুমিনুলের সেঞ্চুরিটি তাই ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে বেশি দলীয় অর্জন। ম্যাচ সেরাও হলেন তিনি এ কারণেই। সুতরাং, দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটির মূল্য প্রথমটির চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি।
দ্বিতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিলেন মুমিনুল নিজেও। চট্টগ্রামে আজ টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে মিডিয়ার সামনে এলেন মুমিনুল হকও। তার কাছে শুরুতেই জানতে চাওয়া হয়, দুই সেঞ্চুরির কোনটিকেই তিনি এগিয়ে রাখবেন। জবাবে অকপটে মুমিনুল জানিয়ে দিলেন, দ্বিতীয়টির কথা।
মুমিনুল বলেন, ‘আমি দ্বিতীয় ইনিংসেরটাকেই এগিয়ে রাখব। কারণ ওটা ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস ছিলো।’ ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলীয় সাফল্যের দিকে নজর দেয়ার এ এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ম্যাচ বাঁচানোর যে তীব্র আকাঙ্খা ছিল মুমিনুলের মধ্যে, এই কথায় তার বহিঃপ্রকাশ। পরক্ষণেই মুমিনুলকে প্রশ্ন করা হলো, তাহলে প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরির পর বেশি উদযাপন করলেন কেন?
Advertisement
জবাবে মুমিনুল বলেন, ‘আসলে ওইরকমভাবে চিন্তা-ভাবনা করিনি...। সেকেন্ড ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আসলে আপনি যে প্রশ্ন করলেন এর উত্তর আমার কাছে নাই (হাসি)।’
পরের প্রশ্ন, ব্যাপারটা কি এমন যে ব্যাটেই জবাব? মুমিনুলের উত্তর, ‘ওইরকম কোন চিন্তা-ভাবনা ছিল না। কোন প্লেয়ারের পক্ষেই এরকম চিন্তা-ভাবনা করা সম্ভব না যে, টার্গেট করে এটা-ওটা করব।’
বোঝাই গেলো, প্রথম ইনিংসটা ছিল গত তিন-চারটি বছর মুমিনুল যে অবর্ণনীয় মানসিক কষ্ট পেয়েছেন তার থেকে মুক্তির উৎসব। কাউকে দেখিয়ে দেয়ার উপলক্ষ যে, ‘দেখো আমিও পারি।’ ওটা যদি হয় একান্ত ব্যক্তিগত ইনিংস, তাহলে দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরিটা ছিল পুরোপুরি দলের জন্য। দলের প্রয়োজনে নিজেকে মেলে ধরার উৎকৃষ্ট এক উদাহরণ স্থাপন করলেন লিটল মাস্টার মুমিনুল হক।
আইএইচএস/পিআর