নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের এই তিনটি অঙ্গের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি দেশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারে। যেখানে এই তিনটি অঙ্গের ও কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকে সেখানে উন্নয়ন ব্যাহত হয়। আমি সবসময় এই তিনটি অঙ্গের সমন্বয় রক্ষার চেষ্টা করবো।
Advertisement
রোববার প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বারের) সভাপতির সম্বর্ধনা জবাবে এমন বক্তব্য দেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দেশে দৃঢ়ভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিটি মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য যা কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব, তার সবটুকুই আমি করবো।’
রোববার তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন।
Advertisement
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে দেশে দৃঢ়ভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিটি মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য যা কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব, তার সবটুকুই আমি করবো।
আইনজীবীদের উদ্দেশে নতুন এ প্রধান বিচারপতি বলেন, আশা করি হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আপনারা যেভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন ঠিক একইভাবে এখনও আমার দিকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবেন। বার (আইনজীবী সমিতি) ও বেঞ্চের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং সহযোগিতা একটি সমৃদ্ধ বিচার বিভাগের ভিত্তি গড়ে তুলবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যেন সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে সংবিধান অনুসারে তার নিজ দায়িত্ব পালন করে সেটিও আমি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করবো।
আদালতের ভাবমূর্তির বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের এমনভাবে আদালতের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে যেন আদালত প্রাঙ্গনে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিমান ও দুর্বল, ধনী-গরীব সবার মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মে যে তারা সবাই সমান। আদালত থেকে তারা ন্যায় বিচার পাবেন। এতে করে আদালতের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা দৃঢ় হবে।
Advertisement
‘মামলা জট আজকে আমাদের বড় সমস্যা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রয়োজন হবে বারের সক্রিয় সহযোগিতা।
তিনি আরও বলেন, মামলা জট আজ শুধু আদালতের একার সমস্যা নয়, এটি বারের জন্যও অস্বস্থির কারণ। মামলার পাহাড় যত জমতে থাকবে, আদালতের সঙ্গে সঙ্গে বারের প্রতিও তেমনি বিচার প্রার্থী মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা কমতে থাকবে। এই সমস্যা সমাধানে বারকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বিচারে ডিজিটাল প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার ব্যবস্থায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু এবং ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি করে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনের পথে অগ্রসর হতে হবে। ডিজিটালাইজেশনের জন্য যে পরিবর্তন হবে বারকেও সেটা স্বাগত জানাতে হবে এবং তার বিরোধীতা না করে তার সঙ্গে অভ্যস্থ হতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের নিরন্তর সহযোগিতাও একান্তভাবে কাম্য।
নতুন প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের অগ্রসরতার জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন আমি তা করার চেষ্টা করবো। বিচার বিভাগের বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, দেশে একটা ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠা, মামলা অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিচার প্রক্রিয়ার গতি ত্বরান্বিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো ও কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা আমার প্রাথমিক লক্ষ্য।
বিচারপতি নিয়োগের আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধানের ৯৫(২)(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগের আইন প্রণয়ন অপরিহার্য।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
এফএইচ/এআর/এমএমজেড/পিআর/এমএস