বিভিন্ন প্রভাবশালীদের দখলে থাকা জাতীয় সংসদের ৩৭টি কক্ষ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে জাাতীয় সংসদ। এর আগে সংসদের সার্ভেন্ট কোয়ার্টার, পুলিশ গ্যারেজসহ এসব কক্ষ উদ্ধারের ব্যবস্থা নিলেও প্রভাবশালীদের চাপে তা সম্ভব হয়নি। তবে এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এবার কঠোর ব্যবস্থা নিবে সংসদ। আগামী মাসের মধ্যেই এসব কক্ষ ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবার চিঠি দিবে সংসদ। সংসদ সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।জানা যায়, সংসদের ভিআইপি ছাড়াও গণপূর্ত ও এস্টেট বিভাগের কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরেই এসব ফ্ল্যাটে থাকছেন অবৈধ দখলদাররা। স্পিকারের নির্দেশনা সত্ত্বেও মন্ত্রী, এমপিদের নাম ভাঙিয়ে বছরের পর বছর এসব কক্ষ ব্যবহার করছেন তারা। জাতীয় সংসদের এস্টেট শাখার তথ্য থেকে জানা যায়, সংসদ চত্বরের সার্ভেন্ট কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন স্থানে ৩৭টি আবাসিক ফ্ল্যাট ও কক্ষ অবৈধভাবে দখলে রাখা হয়েছে। অবৈধ ভাবে অবস্থানকারী সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের পরিচয়ে এসব বাসায় অবস্থান করে বিনামূল্যে ব্যবহার করছেন গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ। এতে রাষ্ট্রের অপচয় হচ্ছে বিপুল অর্থ। অন্যদিকে সংসদের কর্মরতদের থাকতে হচ্ছে বাইরে।এছাড়া সংসদ ভবন এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে বলে সংসদের সার্জেন্ট এট আর্মস জানায়।সূত্র জানায়, গত বছর সংসদের এমপি হোস্টেলে ভুয়া মেজর গ্রেফতার হওয়ার পর সংসদ চত্বর থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংসদের এস্টেট বিভাগ থেকে গত বছরের ২১ আগস্ট অবৈধদের চলে যাওয়ার জন্য সাত দিনের সময় দিয়ে নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু পরে রাজনৈতিক চাপে তা প্রত্যাহারও করা হয়। জানা যায়, সংসদের সচিব হোস্টেলের ৩০টি সার্ভেন্ট কক্ষের মধ্যে ২৭টিতেই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছেন প্রভাবশালী এমপিদের আত্মীয়স্বজন, ড্রাইভার ও এলাকার লোকজন। এদের মধ্যে ১০ জন বহিরাগত সংসদের ১৬টি সার্ভেন্ট কক্ষ দখল করে আছেন। বসবাসের জন্য বরাদ্দ নেয়ার প্রয়োজন হলেও তিনজন ছাড়া কেউই এই নিয়ম মানেননি। এমনকি অনেকেই আবার পার্টিশন দিয়ে সাব-লেট তুলেছেন। কেউ কেউ আবার ছাদেও বসবাস করছেন। এছাড়া সংসদ ভবনের বটতলায় পুলিশ গ্যারেজটির ১০টি কক্ষও অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এখানে সপরিবারে ৭জন বসবাস করলেও কেউই অনুমতি নেননি। সংসদের এস্টেট বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বটতলার ১০টি কক্ষের মধ্যে তিনটিই দখল করে রেখেছেন কমন ও সমন্বয় শাখার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বাবুল মিয়া। তিনি সেখানকার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর কক্ষ দখল করে আছেন। এছাড়া রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের গাড়িচালক আবদুস সালাম দুইটি কক্ষ দখল করে আছেন। সেখানে আরো কক্ষ দখল করে আছেন কাজী আনোয়ার হোসেন, তারেক আল মাহমুদ (মঈন), জাহাঙ্গীর, মামুনুর রশিদ ও আবদুল করিম। সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর প্রভাব খাটিয়ে সুলতান নামের এক ব্যক্তি একাই সার্ভেন্ট কোয়ার্টারের তিনটি কক্ষ নিয়ে বসবাস করছেন। আর সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের পিএ (একান্ত সহকারী) সুবির সংসদ সচিবালয় হোস্টেলের সামনের ২টি কক্ষ দখল করে বসবাস করছেন।এদিকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতির লোক পরিচয় দিয়ে সুমন দখল করে নিয়েছেন একটি কক্ষ। এছাড়াও দুটি কক্ষ দখল করে আছেন মানিক ও ছালাম নামের দুই ব্যক্তি। ছালাম সংসদ সচিবালয় পুলের ড্রাইভার হলেও দুটি কক্ষ দখলে রেখেছেন তিনি।জানা যায়, ওই তিনটি ব্লক সংসদের ১০ জন কর্মচারী বসবাস করলেও এদের মধ্যে ৩ জন বৈধ। এরা হলেন সেলিম, জাকির ও পিংকি। কিবরিয়া, গফুর, ময়না, খোকন ও নূর হোসেন নামে অন্যরা অবৈধভাবেই বসবাস করছেন। তবে স্পিকারের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আরেকজনের বসবাসের খবর জানা যায়।সুত্র আরো জানায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শুরুতে এসব বহিরাগতদের চলে যাওয়ার জন্য দ্বিতীয়বারের মতো চিঠি দেয় সংসদের এটেস্ট বিভাগ। কিন্তু এর পর থেকেই প্রভাবশালীদের ফোন যায় ওই বিভাগে। পরে সেই চিঠিও প্রত্যাহার করা হয় হয় । এ বিষয়ে সংসদের চিফ হুইপ আসম ফিরোজ টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, এসব অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য দুইবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। মানবিক বিবেচনায় দুইবার তা প্রত্যাহার করা হয়। কোনো চাপের মুখে চিঠি প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে এখন নতুন করে চিঠি দেওয়া হবে। সংসদের আইন-শৃঙ্খলার যাতে কোনো অবনতি না হয় এজন্য সব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। এইচএস/এসকেডি/পিআর
Advertisement