আন্তর্জাতিক

রাখাইনের পাশের কাচিন প্রদেশে ব্যাপক সংঘর্ষ, জাতিসংঘের উদ্বেগ

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের কাচিন প্রদেশের বিদ্রোহীগোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) গেরিলা যোদ্ধাদের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর চলমান ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। শুক্রবার জাতিসংঘের মানবিক এক প্রতিবেদনে কাচিনের সংঘর্ষের ঘটনায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

Advertisement

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের কাচিন প্রদেশের সামপ্রাবাম, ওয়েংম ও তানাই শহরের বিভিন্ন এলাকায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এই অঞ্চলের বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা দানকারী সহযোগীরা উদ্বিগ্ন।

‘গত ২৫ জানুয়ারি থেকে তানাই এলাকায় ব্যাপক লড়াই চলছে। সেখানে বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত অথবা আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।’

মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে কেআইএ। ২০১১ সালে শান্তিচুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে এই বিদ্রোহীগোষ্ঠীর সদস্যরা।

Advertisement

জাতিগত চীনা-মিয়ানমার জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট আর্মির (এমএনডিএএ) একটি অংশ হচ্ছে এই কাচিন বিদ্রোহীগোষ্ঠী। ২০১৫ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল এমএনডিএএ। চীন সীমান্তের কাছের এলাকায় ওই সংঘর্ষে লাখ লাখ মানুষ বাস্ত্যুচুত হয়ে পড়ে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ লড়াইয়ের কারণে তানাইয়ের সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ১৮ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এদের অধিকাংশই পেশায় দিনমজুর। তবে অনেক বেসামরিক ওই এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে অাটকা পড়েছেন; তারা পালিয়ে যেতে পারছেন না।

সংস্থাটি বলছে, কাচিনের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। ফলে সেখানে আসলে কি ঘটছে তাও সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গত ২২ জানুয়ারির সংঘাতে সামপ্রাবামের অন্তত বাস্ত্যুচুত ৭০০ বাসিন্দা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে শিবিরে আশ্রয় নেয়া ৫০০ বাসিন্দা রয়েছেন। সংঘর্ষের সময় কাচিনের আশ্রয় শিবিরের কাছে মর্টার বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার পর তারা শিবির ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়েছেন।

Advertisement

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযান, জ্বালাও-পোড়াওয়ে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হলেও তা বরাবরই অস্বীকার করছে দেশটি।

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের সহিংসতায় উত্তপ্ত রাখাইন নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে দেশটির সরকার। এর মাঝেই রাখাইনের পার্শ্ববর্তী কাচিনের সংঘর্ষের খবর এল। গত ডিসেম্বরে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিদর্শক ইয়াংহি লিকে রাখাইনসহ সংঘাতপূর্ণ কাচিন ও শান প্রদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

সেই সময় তিনি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, কাচিনের সংঘর্ষের ঘটনায় দেশটির বেসামরিক সরকার তেমন কিছুই করতে পারছে না। সেখানকার যেকোনো ধরনের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ন্ত্রণ করছেন সেনাবাহিনীর কমান্ডাররা।

সংঘোতের সময় যাতে বেসামরিক মানুষের অধিকার লঙ্ঘন না হওয় সেজন্য মিয়ানমারের সেনা কমান্ডার ও চীনের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সূত্র : রয়টার্স

এসআইএস/আরআইপি