দেশজুড়ে

ফিরতে না পেরে বিপাকে ৫০ হাজার কর্মজীবী

নাড়ির টানে রাজশাহীতে ঈদ করতে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় ৫০ হাজার কর্মজীবী মানুষ। ট্রেন ও বাসের ফিরতি টিকিট সংকটের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত মানুষরা সময়মতো তাদের কর্মস্থলে যোগদান নিয়ে রয়েছেন চরম বিপাকে।তবে ট্রেন ও বাস কাউন্টারে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা টিকিট মাস্টাররা বলছেন, ঈদের ঘরমুখো মানুষের তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য এখনো পর্যাপ্ত টিকিট রয়েছে। এদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলের সুপারিশ ছাড়া ট্রেন ও বাসের টিকিট পাওয়া তো সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর ট্রেন বা বাসের টিকিট। সারা বছর রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী ট্রেন কিংবা বাসের টিকিট সব সময় পাওয়া গেলেও ঈদ আসলেই চাহিদা বাড়ে। নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর কাঙ্ক্ষিত টিকিট তখন সোনার হরিণের চেয়েও মূল্যবান হয়ে উঠে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সোমবার নগরীর বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনের সর্বত্রই এমন চিত্র দেখা গেছে। একটি টিকিটের জন্য ১৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেও শতকরা ৯৫ জনের কপালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার টিকিট। এ নিয়ে যাত্রী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করেছে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে সোমবার সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সোলাইমান খন্দকার নামের এক চাকুরীজীবী অভিযোগ করে জানান, তিনি ঢাকার মতিঝিলে একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে রাজশাহীতে ঈদ করতে এসেছিলেন। পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদ খুব ভালোভাবে কাটলেও ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট না পেয়ে এখন ঈদের আনন্দ অনেকটাই মলিন হয়ে গেছে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আল-মামুন নামের অপর এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি এখনো ফিরতি টিকিট পান নি। কিন্তু কাউন্টারের ভেতর থেকে একজন রেলওয়ে স্টাফ গোপনে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে দিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি ট্রেনের টিকিট বিক্রি করেছেন।  এদিকে, রাজনৈতিক নেতা ও ভিআইপিদের টিকিটের চাপ থেকে বাঁচতে অফিসে না বসে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজশাহী স্টেশন সুপার আব্দুল করিম। তার ব্যবহৃত সরকারি সেলফোনটিও রেখেছেন বন্ধ। পরে এক মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, এবার ঈদে রাজশাহী থেকে ঢাকা রুটে বিশেষ কোনো ট্রেন না দেওয়ায় এ টিকিট সংকট দেখা দিয়েছে। সারা বছর যে ৩টি ট্রেন রাজশাহী টু ঢাকা তিনবার যাতায়াত করে এখনো সে ট্রেনগুলোই যাতায়াত করবে। তাই ঢাকা রুটে যাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ায় দেখা দিয়েছে টিকিট সংকট। এদিকে, রাজশাহী টু ঢাকাগামী বাসগুলোর বেশির ভাগ টিকিট অনলাইনে অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে ঈদের আগেই। তাই ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষগুলো বাস টার্মিনালের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পাচ্ছেন না টিকিট। রাজশাহী বাস র্টামিনালে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানো শারমিন নামের এক ব্যাংকার জানান, তিনি বহু কষ্টে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বাসের টিকিট ম্যানেজ করে ঈদ করতে এসেছিলেন পরিবারের সকলের সঙ্গে। ঈদ তার ভালোই কেটেছে। কিন্তু এখন ঢাকা রুটে বাসের টিকিট না পাওয়ায় চরম হতাশ তিনি। এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ট্রাভেলস এর রাজশাহী কাউন্টারের ম্যানেজার সাইদুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, এ বছর যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনে বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ঢাকা রুটে কিছু বাসের টিকিট এখনো পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান। শাহরিয়ার অনতু/এসএস/এমআরআই

Advertisement