স্বাস্থ্য

স্কয়ারে সরকারি কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসায় তদন্ত কমিটি

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক সিনিয়র সহকারী সচিবের জীবন সংকটাপন্ন হওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

Advertisement

পিত্তনালীর পাথর অপসারণ করতে গিয়ে ওই সরকারি কর্মকর্তার ক্ষুদ্রান্তের অংশবিশেষ কেটে ফেলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক। শুধু তাই নয়, অস্ত্রোপচারের পর রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও চিকিৎসকদের অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে রোগীর অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।

এ অভিযোগের তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা) যুগ্মসচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজিমকে প্রধান করে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন. শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এএইচএম রওশন ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১/২) সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

আজ (বৃহস্পতিবার) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-২ শাখা) সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গঠিত কমিটিকে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণের অনুরোধ করা হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

Advertisement

ভুক্তভোগী রোগী ৩০তম বিসিএস ক্যাডারের প্রশাসনের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পান। এর আগে তিনি রাজধানীর ধানমণ্ডি সার্কেলে এসিল্যান্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ভুল চিকিৎসার পরও স্কয়ারে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

নজরুল ইসলামের স্ত্রী মৌরি গণমাধ্যমকে জানান, ‘নজরুল ইসলামের পিত্তনালিতে পাথর ছিল। এটি অপসারণের জন্য গত ১৭ জানুয়ারি স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান। তাকে স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আরফিনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়।

ভর্তির পর ডা. আরফিন জানান, পাথর অপসারণে নজরুলের শরীরে ‘ইআরসিপি’ করতে হবে। যদিও তিনি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক, তারপরও সব দায়িত্ব তিনি নেন। তার সিদ্ধান্তে ১৮ জানুয়ারি নজরুলের পিত্তনালির পাথর ইআরসিপি’র মাধ্যমে বের করা হয়। পরে তাকে কেবিনে নেয়া হয়।

Advertisement

মৌরি আরও জানান, কেবিনে নেয়ার পর থেকে নজরুলের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। তিনি বিষয়টি ডা. আরফিন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। একপর্যায়ে রোগীর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে এবং রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এমনকি তার প্রেসার খারাপের দিকে মোড় নেয়।

২১ জানুয়ারি রোগীর কী হয়েছে জানতে পীড়াপীড়ি করলে ডা. আরফিন বলেন, এ ধরনের চিকিৎসা কনজারভেটিভ ওয়েতে হয়। তাই কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাহলে রোগীর শরীর এত খারাপ কেন হচ্ছে, জানতে চাইলে আরফিন বলেন, ইআরসিপি করার সময় নজরুলের শরীরের অন্য কোনো জায়গা হয়তো কেটে যেতে পারে। যেকোনো অপারেশনে এটা হয়ে থাকে।

তিনি জানান, অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকলে ২২ জানুয়ারি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. সানোয়ার হোসেন রোগীকে দেখতে আসেন। কিন্তু তিনি কিছু শুনলেও কোনো মন্তব্য করেননি। একপর্যায়ে নজরুল ইসলামের স্বজনদের চাপের মুখে পার্শ্ববর্তী বিআরবি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলীকে অন কলে আনা হয়। তিনি রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেই বুঝতে পারেন যে, ইআরসিপি করার সময় নজরুলের ডিওরেনাম (পাকস্থলীর ঠিক নিচে ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশ) কেটে গেছে।

এমন অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ডা. আরফিন নজরুলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। পরে ২৩ জানুয়ারি তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হয়।

এমইউ/বিএ