বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান বলা হয় তাকে। তিনি মুমিনুল হক। টেকনিক্যাল কিংবা ট্যাকটিক্যাল- যাই বলা হোক না কেন, মুমিনুলের চেয়ে সাউন্ড আর কোনো ব্যাটসম্যান হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ, এই ব্যাটসম্যানকেই কি না সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে পেস এবং অফ স্পিনে দুর্বল বলে দল থেকে বাদ দিয়ে দিলেন। তার ক্যারিয়ারটাকেই পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে নিয়ে গিয়েছিলেন।
Advertisement
সেই মুমিনুল যখন হাথুরুর দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকালেন, তখন তার উদযাপন ছিল কিছুটা বুনো। যেন কারও ওপর কোনো ক্ষোভ ঝাড়লেন। ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট এবং হেলমেট ছোঁড়ার যে ভঙ্গি করেছেন, তাতেই পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারও ওপর জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
টেস্টের প্রথমদিন শেষে অপরাজিত ছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল আসেননি। কথাও বলেননি। জানা যায়নি, কেন তিনি এমন উদযাপনটা করেছেন। তবে, এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে অনেক কথাই গতকাল এবং আজ লিখা হয়ে গিয়েছে। তবে আজ ১৭৬ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার কারণে মুমিনুল এলেন সংবাদ সম্মেলনে এবং সুযোগ পেয়েই সাংবাদিকরা জানতে চাইলেন তার কাছে এমন উদযাপনের কারণ।
সরাসরি কারণটা বললেন না। শুধু এটুকু জানালেন, নিজের ওপরই ক্ষোভ ছিল। অনেকদিন (প্রায় চার বছর) সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না। এ কারণেই এমন উদযাপন। মুমিনুল বলেন, ‘স্পেসিফিক কোনো কারণ ছিল না, আপনারা যেভাবে মনে করছেন ওরককম কিছু না। চ্যালেঞ্জটা নিজের কাছে ছিল, যেটা বললাম। অনেক দিন ধরে ১০০ করতে পারছিলাম না। এটা করতে পারায় অনেক ভালো লেগেছে।’
Advertisement
তারপ্রতি হাথুরুসিংহের বড় অভিযোগ ছিল, স্পিন খেলতে পারেন না। তিনি নাকি স্পিনে খুব দুর্বল। গত বছর শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্টে দুবার দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লিউ হওয়রা কারণে বাংলাদেশের শততম টেস্টে (কলম্বোয়) আর খেলতেই দিলেন না মুমিনুলকে। ক্রিকেট থেকেই যেন মুমিনুলকে ছাঁটাই করার মিশনে নেমেছিলেন হাথুরু।
অথচ, সেই লঙ্কান স্পিনারদের চারদিকে খেলে ১৭৬ রানের ইনিংস খেললেন মুমিনুল। এ কারণে, আজ তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, স্পিন নিয়ে। বলা হলো, আপনি তো ভালোই স্পিন খেলেছেন। তাহলে যে বলা হয়েছিল, আপনি স্পিন খেলতে পারনে না? মুমিনুল সরাসরি কিছু বললেন না। সহাস্যভঙিতে শুধু বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমত (ভালোই তো স্পিন খেলেছি)।’
স্থানীয় কোচ সালাউদ্দিন মুমিনুলের ব্যাটিংয়ে পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তার কিছু টেকনিক নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন। তবে, ওসবের দিকে গেলেনেই না মুমিনুল। কোচ সালাউদ্দিনের প্রসঙ্গ আনা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না আমি কোনো কিছু কাজ করেছি। টেকনিক্যাল মেকনিক্যাল কোনো কাজ করি নাই। স্যার জানবে, স্যার কিছু জিনিস বলেছে ওটা করেছি। আমার কাছে মনে হয় আমি চিন্তা-ভাবনা, এসব নিয়ে কাজ করেছি।’
দলের স্কোরটা আরও বড় হলে এবং তাতে আরও বড় অবদান রাখতে পারলে ভালো লাগতো মুমিনুলের। তিনি বলেন, ‘আরও বেশি না, হয়তো দলের জন্য আরও কিছুটা অবদান রাখতে পারলে ভালো লাগত। এই আর কী। যতটুকু করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আরও একটা সেশন খেলতে পারলে ভালো লাগত, আলটিমেটলি এটা তো দলের জন্য খেলা।’
Advertisement
ডাবল সেঞ্চুরিটা করার জন্য বাড়তি কোনো চেষ্টা ছিল কি না। এ প্রশ্নের জবাবে মুমিনুল বলেন, ‘না, ওইরকম কোনো চিন্তা ভাবনা ছিল না। আগে যেসব টেস্ট খেলেছি, ৬০-৭০-৮০ করেছি আউট হয়েছি বার বার। আমার নিজের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল আমি বড় স্কোর করব। দলের সবাই সমর্থন দিয়েছে, আপনারাও সমর্থন দিয়েছেন।’
তবে ডাবল সেঞ্চুরি না হওয়াটাকে দুর্ভাগ্যও বলতে নারাজ মুমিনুল। তিনি বলেন, ‘না, তা বলব না। এরকম বলব না। হয়তো এমন বল হতেই পারে, আমি একটু বেশি ক্যাজুয়াল ছিলাম। আমার কাছে এটাই মনে হয়।’
যদি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশের রান ৬০০ প্লাস হয়ে যেতো বলে মনে করেন মুমিনুল। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমার আউটই ঝামেলা ছিল। এসব উইকেটে আপনি যখন ১৭০ করবেন সবাই মনে করবে আপনি আরও এক দুই সেশন ব্যাট করবেন। আমি যদি এক সেশন ব্যাট করে লাঞ্চ করতে যেতে পারতাম তাহলে ৬০০+ হয়ে যেত।’
নিজের ইনিংস নিয়ে কতট সন্তুষ্ট মুমিনুল? তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সন্তুষ্ট। আপনি যখনই একটা বড় ইনিংস খেলবেন..., আমি যদি বলি আমি সন্তুষ্ট না তাহলে ভুল বলা হবে। আমি যতটুকু খেলেছি আমার কাছে ভালো লেগেছে। যতটুকু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, হয়তো আরেকটা সেশন খেলতে পারলে ভালো লাগত।’
মুমিনুল মনে করেন, যদি আর একটা সেশন খেলা যেতো, তাহলে নিশ্চিত ২০০ হয়ে যেতো। তবুও তিনি ব্যাটিংয়ে সেশন বাই সেশন ফোকাস করতে চান। মুমিনুল বলেন, ‘দেখেন, দেড়শ থেকে দুইশ করতে গেলে সেশন বাই সেশন খেলা লাগে। আগে যে ভুলটা হয়েছে আমার মনে হয়েছে আমি হয়তো নিজের জন্য খেলেছি। বিশেষ করে ৭০-৮০ তে যাওয়ার পর। ওই জিনিসটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছি। এখন সেশন বাই সেশন ফোকাস করেছি। তাহলেই অটোমেটিক আপনার দেড়শ হবে। আজকে আমি প্রথম সেশনটা যদি খেলতে পারতাম তাহলে হয়তো ২০০ হয়ে যেত। আমি সেশনের দিকেই ফোকাস করেছি।’
উইকেটে কেমন স্পিন হচ্ছে? আগামীকাল কেমন হবে? এমন কিছু জানতে চাইলে মুমিনুল বলেন, ‘এখন একটু স্পিন হচ্ছে। লাস্ট স্পেল তাইজুল ভালো করেছে, নয়ন ভাইও ভালো বল করছে। আমার মনে হয় কালকে বেশি স্পিন ধরবে।’
আইএইচএস/জেআইএম