আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে ৫টি গণকবরের সন্ধান

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকটি গ্রামে ৫টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একটি স্বতন্ত্র তদন্তে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বেশ কিছু গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় বহু রোহিঙ্গাকে হত্যার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খবর এপি।

Advertisement

রাখাইনে গু দার পিন গ্রামের নূর কাদির নামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী যখন তাদের গ্রামে অভিযান চালায় তখন তিনি এবং তার আরও ১৪জন বন্ধু একটি ফুটবল টিমের জন্য খেলোয়াড় বাছাই করছিলেন।

টিনের চালে বৃষ্টি হলে যে ধরনের শব্দ হয়, ঠিক সেরকম গুলির আওয়াজ শুরু হওয়ার পর সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নূর কাদির এবং দুই বন্ধু সেখান থেকে কোন রকমে বেঁচে যান। এর কয়েকদিন পর নূর কাদির দু’টি কবরে তার ছয়জন বন্ধুর মৃতদেহ আবিষ্কার করেন।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপি বলছে, নূর কাদিরের মতো এ ধরনের বর্ণনা আরও অনেক রোহিঙ্গার কাছ থেকে তারা শুনেছেন। মিয়ানমারে নতুন করে কিছু গণকবরের প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে। বার্তা সংস্থাটি বলছে, তারা যেসব তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে তাতে মনে হচ্ছে গত অাগস্ট মাসে সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন রাজ্যের গু দার পিন গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

স্যাটেলাইটে পাওয়া চিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কক্সবাজার ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বর্ণনা মিলে যাচ্ছে।স্যাটেলাইটের এসব চিত্র এবং রোহিঙ্গাদের ভাষ্য অনুযায়ী অন্তত পাঁচটি গণকবরের সন্ধান মিলেছে। এসব গণকবরে চারশোর মতো মানুষকে চাপা দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন রোহিঙ্গা যুবক নূর কাদির। তিনি গণকবরে তার বন্ধুকে চিহ্নিত করেছেন।তবে নূর কাদিরের বন্ধুর চেহারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তার মুখের একটি অংশ অ্যাসিডে দগ্ধ এবং বুলেটবিদ্ধ। বন্ধুর কাপড় দেখে তাকে চিনতে পারেন নূর কাদির।

নূর কাদির বলেন, কবরের ভেতরে মৃতদেহগুলোকে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। যে গ্রামটির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেয় না মিয়ানমার সরকার। সুতরাং ঐ গ্রামে আসলে ঠিক কতজন মারা গেছে, তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

এপি বলছে, তারা ঐ গ্রামের স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া কিছু ছবি সংগ্রহ করেছে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবার কিছু ভিডিও তাদের হাতে এসেছে।

Advertisement

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গারা ৭৫ জনের মৃত্যুর তথ্য একত্রিত করেছে। গ্রামবাসীরা বলছে, মৃতের সংখ্যা প্রায় চারশোর মতো হবে। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং সরাসরি মৃতদেহ দেখার ওপর ভিত্তি করে তারা এসব কথা বলছেন।

এপি বলছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত যেসব রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে তাদের প্রায় সবাই বলেছেন যে গু দার পিন গ্রামের উত্তরদিকে যে প্রবেশপথ রয়েছে, সেখানে তারা তিনটি বড় গণকবর দেখেছেন। ঐ জায়গায় অধিকাংশ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরনার্থীরা।

অল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন যে, পাহাড়ের কাছে একটি কবরস্থানে তারা দু’টি কবর দেখেছেন। জায়গাটি গ্রামের একটি স্কুলের কাছাকাছি। গ্রামে হত্যাকাণ্ড চালানোর পর একশোর বেশি সৈন্য ঐ স্কুলে তাদের ঘাঁটি নির্মাণ করে।

ঐ গ্রাম থেকে যেসব রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে জীবন বাঁচিয়েছেন, তাদের ধারণা অাগস্ট মাসের ২৭ তারিখের হত্যাকাণ্ড ছিল বেশ পরিকল্পিত। হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য সেনারা শুধুই রাইফেল, ছুরি, গ্রেনেড এবং রকেট লঞ্চার আনেনি সঙ্গে করে অ্যাসিডও নিয়ে এসেছিল তারা। অ্যাসিড দিয়ে নিহতদের মুখমণ্ডল এবং শরীরের অংশ ঝলসে দেয়া হয় যাতে তাদের চিহ্নিত করা না যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় ২শ সৈনা ঐ হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিল। হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে গেছেন ২৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ রইস। তিনি বলেন, মানুষজন তখন চিৎকার করছিল, সেনাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছিল।

এদিকে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেছেন, যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা গণহত্যার চিহ্ন। তিনি বলেন, গণহত্যার খবর অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা উচিত।

টিটিএন/জেআইএম