দেশের শেয়ারবাজারে এক ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিলেও সদ্য শেষ হওয়ার জানুয়ারি জুড়েই শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী ছিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ফলে ২০১৮ সালের শুরু এ মাসটিতে বিদেশিদের লেনদেনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। মাসটিতে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেলদেন করেছেন বিদেশিরা।
Advertisement
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জানুয়ারি মাসে বিদেশিরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেস। এর মধ্যে শেয়ার ক্রয় ছিল ৬৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং বিক্রিয় ৪৮০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাসটিতে বিদেশিদের শেয়ার ক্রয়ের থেকে বিক্রিয় ১৮৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা বেশি হয়েছে।
দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এখনো এক মাসে বিদেশিরা সর্বোচ্চ লেনদেন করেছেন ১ হাজার ২৫৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। গত নভেম্বর মাসে এ লেনদেন হয়েছে। এর আগে বিদেশিদের এক মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল ২০১৭ সালের মার্চে। মাসটিতে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। তার আগে বিদেশিরা এক মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন করেন ১ হাজার ৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
গত বছরের নভেম্বরে বিদেশিদের রেকর্ড লেনদেনের পরের মাস ডিসেম্বর জুড়েই মোটা অঙ্কের শেয়ার লেনদেন করেন তারা। মাসটিতে বিদেশিদের শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারির আগ পর্যন্ত দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে বিদেশিদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন।
Advertisement
অর্থাৎ পর পর তিন মাস রেকর্ড পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। শুধু তাই নয়, সদ্য বিদায় নেয়া ২০১৭ সালেও বিদেশিদের শেয়ার লেনদেনে একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি করে। বছরটিতে বিদেশিরা ছয় মাসে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন করেন। ২০১৭ সালের আগে কখনো বিদেশিরা এক মাসে এক হাজার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছরের শুরু থেকেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। মাঝে কিছুদিন বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছিল। এ সময় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। সেই সুযোগই নিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় তারা শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী হয়েছেন।
ডিএসই-এর ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, এখন বিদেশি বিনিয়োগ সর্বকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সবাই এ বছরটা শেয়ারবাজার চাঙা দেখতে চায়।
তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ২০১৭ সালের শুরু থেকেই বিদেশিরা শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী হন। ফলে প্রতি মাসেই তাদের শেয়ার বিক্রির থেকে ক্রয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। কিন্তু অক্টোবরে এসে ক্রয় থেকে বিক্রয় বেড়ে যায়। মাসটিতে বিদেশিরা ২৪৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা ক্রয়ের বিপরীতে ৩৯৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রয় করেন। অর্থাৎ ক্রয়ের চেয়ে ১৫১ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি বেশি হয়।
Advertisement
তবে এক মাসের ব্যবধানে নভেম্বরে আবার বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি হয়। নভেম্বর জুড়ে বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় করেন ৬৩৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে বিক্রয় করেছেন ৬১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিক্রয়ের থেকে ক্রয় বেশি হয় ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির থেকে ক্রয় বেশি হওয়ার ধারা চলতি বছরেও অব্যহত রয়েছে এবং বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি হওয়ার পরিমাণ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে বিদেশিরা ৫৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রি করেন ৫৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিক্রির থেকে ক্রয় বেশি হয় ৬২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিক্রির থেকে ক্রয় বেশি হয়েছে ১৮৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিদেশিরা ৬১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় করেছিলেন ৪২৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে ৪৩৫ কোটি টাকা ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় করেন ১৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। মার্চে ৭১১ কোটি ৯ লাখ টাকার ক্রয়ে বিপরীতে বিক্রয় করেন ৩৮১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
অর্থাৎ শেয়ার বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি হওয়ার এ ধারা পরের মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকে। এপ্রিলে ৪৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় হয় ৩৯৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। মে মাসজুড়ে বিদেশিরা ৫২৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় করেন। এর বিপরীতে বিক্রয় করে ৩৭১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। জুন মাসে ৭৩১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় ছিল ৩৪১ কোটি ১৫ লাখ টাকার।
জুলাই মাসে বিদেশিরা ৬২৫ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় করেন, বিপরীতে বিক্রয় করেন ৪২৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। পরের মাস আগস্টে ৪৩২ কোটি টাকার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় ছিল ৪০০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর সেপ্টেম্বরে ৫৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্রয়ের বিপরীতে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রয় করেন ৩৮৬ কোটি ৫ লাখ টাকা।
এমএএস/আরএস/আরআইপি