দেশজুড়ে

চটের ছাউনিতে চলে বিদ্যালয়ের পাঠদান

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বনবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে মাঠে গাছতলায় চটের ছাউনিতে চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস। নতুন ভবন নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ হলেও স্কুলের জমিদাতার উত্তরাধিকারীদের বাধার মুখে নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ।

Advertisement

স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী জানান, ১৯০৫ সালে উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়নের বনবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহিম আকন্দের দান করা ৭১ শতক জমির উপর গড়ে ওঠে এই বিদ্যালয়। ১৯৬৫ সালে বিদ্যালয়টিতে ৪ কক্ষের একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। এলাকার ১০-১২টি গ্রামের শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। ২০০৪ সালে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এটি ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই ভবনে চলে শিশুদের পাঠদান। ২০০৮ সালে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হলে বাধা দেয় জমিদাতার উত্তরাধিকারীরা। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পরে ওই বছর আদালত সেখানে ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সেই থেকে বন্ধ রয়েছে নির্মাণ কাজ।

বনবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন জানান, মূল ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ের মাঠে গাছতলায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। গাছের নিচে তিনটি চটের ছাউনিতে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করে। বর্ষার দিনে চরম সংকটে পড়ে শিক্ষার্থী শিক্ষকরা। এতে ক্রমেই স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে এই স্কুলে প্রায় সাড়ে ৩শ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করত। বর্তমানে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭৯ জন।

Advertisement

প্রধান শিক্ষক আরও জানান, স্কুলের অফিস কক্ষ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই রয়ে গেছে। প্রতিনিয়তই শিক্ষকরা দুর্ঘটনার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকে। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল মান্নান বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে এসেছিলেন। তার চেষ্টায় নতুন করে এখানে আবার একটি ভবন বরাদ্দ হয়েছে। স্থানীয় বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বনবাড়িয়া গ্রামের শিল্পপতি আবু তোয়াব স্কুলের পাশে তার নিজস্ব জমি থেকে কিছু পরিমাণ জমি স্কুলকে দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। খুব শিগগিরই জমি রেজিস্ট্রি হবে।

বনবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এনামুল হক বলেন, অনেক চেষ্টার পর স্কুলের পাশে নতুন জায়গা পাওয়া গেছে। অচিরেই জায়গা স্কুলের নামে রেজিস্ট্রি হবে। আর এখানেই হবে নতুন ভবন।

এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমজি মাহমুদ ইয়াজদানী স্কুলের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের মূল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্টে মাঠে পাঠ গ্রহণ করে আসছে। মালিকপক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা চলছে। নতুন একজন দাতাও পাওয়া গেছে। নতুন ভবন নির্মাণের তালিকায় বনবাড়িয়া স্কুলটি অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/আরআইপি

Advertisement