প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের ধারাবাহিক দুই মেয়াদে দেশে দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
Advertisement
বুধবার সুপ্রিম অডিট ইনস্টিটিউট উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান। এছাড়া অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ ও অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
সুশাসন নিশ্চিত ও দুর্নীতি হ্রাসের লক্ষ্যে আধুনিক অডিট ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় অডিটের গুরুত্বও বেড়ে গেছে। একজন মানুষ চাকরিতে প্রবেশ করার পর থেকে অবসর পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে অডিটের গুরুত্ব রয়েছে।’
অডিট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার অাহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো প্রকার দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদ চিরস্থায়ী না, এটি সাময়িক পদ। নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসি জনগণের সেবা করি। আমি নিজেকে জনগণের সেবক মনে করি বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
অনুষ্ঠানে দেয়া অর্থসচিবের বক্তব্যের প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে তিনি ভয় পান। তিনি বলেন, ‘অর্থসচিব আমার সঙ্গে কথা বলতে ভয় পান।’ একথা শুনে আমি দুঃখিত। আমার সঙ্গে কথা বলতে কেন ভয় পাবেন? আমি নিজেকে সেবক মনে করি, প্রধানমন্ত্রী না। প্রধানমন্ত্রী পদটি সাময়িক। স্থায়ী বন্দোবস্ত না।
তিনি বলেন, ‘অতীতে অনেককে দেখেছি একবার উঠলে আর নামা যাবে না এটা মনে করতো। আমি এটাকে সাময়িক মনে করি। সুযোগ পেয়েছি জনগণের স্বার্থে কাজ করার। আমি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী না, জাতির জনকের মেয়ে হিসেবে দেখি। সরকারি যে বাসভবন সেটা কিন্তু তৃণমূলের জন্যও উন্মুক্ত। মাঝে মধ্যে নিরাপত্তার জন্য একটু সমস্যা হয়ে যায়। দেশের যেকোনো কাজের জন্য যে কেউ যেকোনো সময় আসতে পারেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যদি আর তিনটা বছর সময় পেতেন তাহলে বাংলাদেশ সেসময়েই দৃষ্টান্ত হতো। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি যারা করে তারা দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে না। অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে তারা নিজ পদকে সুরক্ষায় ব্যস্ত থাকে। এসব মানসিক রোগ থেকে আমি মুক্ত। যখন যেমন, তেমন চলতে পারি।’
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯১ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬.৭ শতাংশ। ’৯৬ সালে আমরা এসে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেই। ফলে দরিদ্রতা হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে দারিদ্রের হার ২২.৪ শতাংশ। এ হার আমরা ১৪ শতাংশের নিচে নামাতে চাই।
রেমিটেন্স বাড়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত বছর ১০ লাখ মানুষকে বিদেশে পাঠানো গেছে। তারা আমাদের টাকা পাঠায়। দেশের ভেতর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পয়েছে। রেমিটেন্স ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য আমরাই ’৯৬ সালে উদ্যোগ গ্রহণ করি। বেসরকারি খাতে বেশ উন্নয়ন হচ্ছে, মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। পানি ও বিদ্যুতের জন্য হাহাকার চলতো, এখন সে অবস্থা নেই। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এবং তা দিয়ে বিভিন্ন কল কারখানা চলছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। মানুষের আয় বেড়েছে, বিদ্যুতের ব্যবহারও বেড়েছে। গ্রামেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। একটা ফ্যান বা লাইট জ্বলবে ভেবে যে চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটি আর সেখানে সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের খানা ভিত্তিক জরিপ হচ্ছে। এটা হলেই প্রকৃত হিসাব জানতে পারবো। গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে সেটাই লক্ষ্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অামরা কাজ করছি। অনেক ক্ষেত্রে অামরা বিশ্বের উন্নত দেশ থেকে অগ্রগামী। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্য এখন ৮ লাখ। ই-টেন্ডারের কারণে এখন অার টেন্ডারের বাক্স ছিনতাই হয় না। দুদক অত্যন্ত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। অনেক মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়েও দুদক কাজ করছে। সে বিষয়ে অামরা কোনো বাধা দেই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল দেশ। জিডিপির ভিত্তিতে ৪৪তম এবং ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম জায়গায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ।’
উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে অডিট কার্যক্রমের অনুষ্ঠানে বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা কখনোই দেশের উন্নতি করতে পারে না। কারণ তারা ক্ষমতা ধরে রাখতেই ব্যস্ত থাকে। জনগণের অর্থ সাশ্রয় ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টকে আরও দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।’
এফএইচএস/আরএস/জেআইএম