মতামত

বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

রাজধানী ঢাকা নানা দিক থেকেই বাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে শব্দদূষণ অন্যতম। যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার এই শব্দদূষণ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয় রাজনৈতিক মঞ্চ, সভাসমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানেও উচ্চস্বরে মাইক বাজানো হচ্ছে। এতেও বাড়ছে শব্দদূষণ। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?’

Advertisement

১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে শব্দের মাত্রা বেঁধে দেওয়া হলেও সেটি কেউ মানছে না। শহরে আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল, নীরব এলাকায় ৪৫ ডেসিবেল, আবাসিক কাম বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ ডেসিবেল এবং রাতের জন্য সর্বত্র ১০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ সেটি মানছে না। শব্দদূষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সম্প্রতি একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে জীবন দিতে হয়েছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

অন্যদিকে সারাদেশে যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না কেউ। বরং দেশের অধিকাংশ যানবাহনেই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণভাবে মানুষ ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবল মাত্রার শব্দই ভালো শুনতে পায়। তার চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তিসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। অথচ দেশের ৮০ শতাংশ যানবাহনে এখনো ব্যবহার হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্ন। যা ১০০ ডেসিবলেরও বেশি মাত্রার শব্দ সৃষ্টি করে থাকে।

মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহারে মাত্র ১০০ টাকা জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে জরিমানা মাত্র ১০০ টাকা হওয়ায় গাড়ির চালকরাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না। তাছাড়া অনেক চালক আইনে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধের বিষয়টি জানেও না। মানুষের শ্রবণ সীমার স্বাভাবিক মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। যার বেশি হলে শব্দ দূষণে পরিণত হয় যা থেকে মানুষের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শ্রবণ ক্লান্তি এবং বধিরতা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া যে সকল রোগ হতে পারে তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, কণ্ঠনালীর প্রদাহ, আলসার, মস্তিষ্কের রোগ, কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস, বদমেজাজ বা খিটখিটে মেজাজ, ক্রোধ প্রবণতা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, রক্তনালীর সংকোচন এবং হার্টের সমস্যা অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে অস্থায়ী বধির এবং ১০০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে স্থায়ী ভাবে বধির করে দেয়।

Advertisement

শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে হলে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধের আদেশ যাতে বাস্তবায়ন হয় এ ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও আমদনি নিষিদ্ধ নয় বা এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। তাই আমদানি করা হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্ন। এ ব্যাপারে আইনি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে আমদানির ওপর। গাড়ির চালককেও সচেতন করতে হবে। শব্দদূষণ থেকে সবাই যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনুধাবন করতে হবে সেটিও।

এইচআর/জেআইএম