দানি আলভেজ। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা। পজিশন ডিফেন্ডার। বার্সার ডিফেন্ডার হিসেবেই এক নামে যাকে সবাই চিনতো। দীর্ঘদিন ছিলেন বার্সায়। মেসির সঙ্গে তার সখ্যতা সবারই জানা। মেসি-আলভেজের রসায়ন সর্বজন স্বীকৃত। মেসির অধিকাংশ গোলেই ছোঁয়া থাকতো আলভেজের পায়ের। বার্সার হয়ে অনেক কিছুই জিতেছেন, গিয়েছিলেন ইতালিয়ান সিরি-এ তে, জুভেন্তাসের হয়ে খেলতে। সেখানে সিরি-এ জেতার পর আলভেজ যোগ দেন পিএসজিতে। স্বদেশি নেইমার এখন তার সঙ্গী।
Advertisement
এই নেইমারের সম্পর্ক মেসির সঙ্গে অন্য যে কারও চেয়ে বেশি। বার্সা ছেড়ে নেইমারের পিএসজিতে যোগ দেয়ার পর মেসির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এতটুকু ছিড় ধরেনি। অন্তত ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইনস্টাগ্রাম দেখলে সেটাই বোঝা যায়। কিন্তু দানি আলভেজ কি না সরাসরি বললেন, পিএসজিতে যোগ দিয়ে মেসির ছায়া থেকেই বেরিয়ে এসেছে নেইমার। ব্যাক্তিগত পুরস্কার জিততে হলে বার্সায় মেসির ছায়া থেকে নেইমারের বেরিয়ে আসা ছিল খুবই প্রয়োজনীয়।
দানি আলভেজের এখন প্রথম লক্ষ্য নেইমারকে সঙ্গে নিয়ে পিএসজিকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতানো। এরপর নেইমারের সঙ্গে জুটি বেধে ব্রাজিলকে ৬ষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেয়া। ফিফা ডটকমের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে আলভেজ তেমনই সব লক্ষ্য এবং স্বপ্নের কথা জানালেন।
ফিফা : সেভিয়া, বার্সেলোনা এবং জুভেন্তাসের হয়ে আপনি অনেক কিছুই জিতেছেন। তবুও কেন পিসজিকে বেছে নিলেন? অন্তত যাদের ইতিহাস বাকিসব ক্লাবের চেয়ে তুলনামূলক দুর্বল।আলভেজ : যখন আমি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম, তখন এটাই ছিল আমার জন্য বড় সঞ্জীবনী। আমি কখনোই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে চাই না। সব সময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। আর যখন একটি ক্লাবের ইতিহাস বদলে দেয়ার বিষয় আসে আমার সামনে, তখন সেটা আমার জন্য আরও বেশি উজ্জীবনি নিয়ে হাজির হয়। এ কারণেই আমি এখানে (পিএসজিতে) এসেছি। একটি বিখ্যাত শহরে বসবাসের ইচ্ছা এবং অনেকগুলো স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছি।
Advertisement
আমি জানি, মানুষ হয়তো ভাববে আমি অর্থের কারণেই এখানে এসেছি; কিন্তু আসল কারণ এটি নয়। আমার কাছে আরও অনেকগুলো ভালো ভালো প্রস্তাব ছিল ওই সময়। বার্সেলোনায়ও আমি প্রায় একই প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলাম। আমি যখন বার্সায় যোগ দিয়েছিলাম, তখন তারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সময় পার করছিল। এরপর ক্লাবটির ইতিহাসে সেরা একটি দলের সদস্য হয়েই শেষ করলাম। একইভাবে আমি আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চাই। কিন্তু এমন এক স্থানে যেখানে এ ধরনের সাফল্যের ইতিহাস খুবই কম। যেখানে একখণ্ড পাথর দিয়ে একটি বিশাল বিল্ডিংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার সম্ভাবনা রয়েছে, আমি সেটাকেই বেছে নিয়েছি। আমি এখানে সব কিছু জিততে চাই এবং এই ক্লাবটির পুরো ভাগ্যটাই পরিবর্তন করে দিতে চাই।
ফিফা : ড্রেসিংরুমে নেইমারকে পাওয়া নিশ্চিত অর্থেই আপনার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি ধাপ। তো, বার্সা থেকে নেইমারের পিএসজি আনার পেছনে কী ভূমিকা পালন করেছিলেন?আলভেজ : আসলে এ ক্ষেত্র আমার কিছু করার ক্ষেত্র ছিল কম। তবে নেইমারের বার্সায় আসার সময় ভূমিকা রেখেছিলাম। তখন তাকে আমি কিছু ভালো উপদেশ দিয়েছিলাম। বার্সেলোনায় থাকার কারণে ক্লাব এবং এই শহরটিতে আমার কী কী ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে সেগুলো তাকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু পিএসজিতে তার আসার সময় এমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারিনি। এটা ছিল তার আগে আমার এই ক্লাবে আসা, আর কিছু নয় (হাসি)। তবুও বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সে যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল, তখন আমি তাকে বলেছিল শুধু, নিজের অন্তরকে জিজ্ঞাসা করো এবং সেখান থেকে যে উত্তর পাও, সেটাই নাও। এটাই ছিল একমাত্র উপদেশ, যা বার্সা থেকে তার পিএসজিতে আসার সময় দিয়েছিলাম।
ফিফা : আপনি কী মনে করেন, বিশ্বসেরা হওয়ার জন্য প্রস্তুত নেইমার?আলভেজ : আমি তো মনে করি বার্সায় থাকার সময়ই মেসির সঙ্গে সে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফুটবলারে পরিণত হয়েছে। ওই সময় তার প্রয়োজন ছিল শুধু মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসা। লিও’র মত একজন ফুটবলারের সঙ্গে খেলা অবশ্যই অবিশ্বাস্য একটি ব্যাপার। কিন্তু যখন আপনার মনের ভেতর এটা সবসময় খোঁচা দিয়ে যাবে যে, আপনি যা করে যাচ্ছেন তা কী আপনার যোগ্যতার চেয়ে কিছু কম হয়ে যাচ্ছে!
আমি সব সময়ই তার (মেসি) সঙ্গে খেলতে ভালবাসি। কিন্তু দিন শেষে সে আর্জেন্টাইন। আমি আর নেইমার হলাম ব্রাজিলিয়ান। এখন কিংবা তখন (পরবর্তী সময়ে) আমরা একে অপরের মুখোমুখি (জাতীয় দলের হয়ে) হবোই (হাসি)। আমি মনে করি, আপনি ব্যাক্তিগতভাবে ভালো কিছু অর্জন তখনই করবেন, যখন তার (মেসি) মত কোনো খেলোয়াড়ের ছায়ায় কিংবা সংস্পর্শে থাকবেন না। নেইমারের নিজের উন্নতি এবং ব্রাজিলের জন্য এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত যে নিজের পথ খুঁজে বের করে নেয়া।
Advertisement
ফিফা : আপনারা দু’জনই (নেইমার এবং আলভেজ) জানিয়েছেন যে, এখন সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয় করা। আপনি কী মনে করে, এই সাফল্য আসলেই অর্জন করা সম্ভব?আলভেজ : এটাই এখন একমাত্র বিষয়, যেখানে আমরা নিজেদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নিয়েছি। এটাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। যখন বার্সেলোনা ছেড়ে এখানে এসেছিল নেইমার, তখন তার স্বপ্নই ছিল এটা। এমনকি আমি যখন জুভেন্তাস ছেড়ে এখানে এসেছি, তখনও আমি এটাই চিন্তা করে এসেছি। এই এক চিন্তাই আমাদেরকে এখানে আবার একত্রিত করে দিয়েছে।
এই এক উজ্জীবনিই আমাদেরকে প্রতিনিয়ত সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব সব সময়ই সাহসের সঙ্গে থাকে। যদি আপনার সাহস না থাকে, তাহলে সব সময়ই আপনি ছায়াতলে থেকে যাবেন। তাহলে আমরা যা চাই তা কখনোই অর্জন করতে পারবো না। আমরা ব্রাজিলের হয়েও কিছু অর্জন করতে পারিনি। এ কারণে আমরা চাই, ব্রাজিলের হয়েও স্বপ্নের চূড়া ছুঁতে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কিংবা এ ধরনের বড় কোনো প্রতিযোগিতা জিততে হলে অবশ্যই আপনার দলে কিছু বড় নাম থাকতে হবে। আপনার কাছে অনেক বড় বড় খেলোয়াড় আছে; কিন্তু তারা যখন একটি দল হয়ে উঠতে পারবে না, তখনও কিছুই অর্জন করা সম্ভব হবে না। আমরা লড়াই করতে প্রস্তুত। প্রশ্ন হলো জয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুতিটা কেমন হচ্ছে। জয় কিংবা পরাজয় সব কিছুই নির্ভর করে দল হিসেবে আমরা কতটা কাজ করতে পেরেছি তার ওপর।
ফিফা : এবার আসি বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে। প্রাথমিক ড্র’তে বড় কোনো প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না ব্রাজিলকে। এটা কী ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্মণ?আলভেজ : এটা আসলে আমার জন্য কোনো ব্যাপারই না যে, কার বিপক্ষে খেলতে নামছি। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় আপনাকে অবশ্যই সবাইকে হারানোর শক্তি এবং সাহস রাখতে হবে। যদি আমরা গ্রুপ পর্বে স্পেনকে পেতাম, তাহলে কী করতে হতো আমাদের? দৌড়ে পালাতাম? কোনো দলই দুর্বল দলের বিপক্ষে খেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি, পারবেও না। আগে কিংবা পরে সেরাদের মুখোমুখি হতেই হবে আমাদের এবং তাদের পরাজিত করতে হবে। কারণ, সত্যিকারার্থেই আমরা চাই বিশ্বকাপটা জিততে।
আইএইচএস/এমএস