জাতীয়

জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ৫ হাজার কোটি ব্যয়েও মেলেনি সুফল

দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের তিন জেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ১৫ বছরে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। তবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরও যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয়নি। বর্তমানে এই তিন জেলার আট উপজেলার ২৮ শতাংশ এলাকা বছরে দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত জলমগ্ন থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া এবং লবণাক্ততা সমস্যার কারণে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এ সমস্যা সমাধানে বাজেট ও পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের একীভূত অংশগ্রহণ জরুরি।

Advertisement

স্কোপিং অব ইন্টিগ্রেশন অব ওয়াটারলগিং রিস্ক রিডাকশন ইন্টু দ্য প্ল্যানিং অ্যান্ড বাজেটিং প্রসেস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রামিং ডিভিশন ও ইউএনডিপি যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রোগ্রামিং ডিভিশনের চিফ ও টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি কমিটির সভাপতি মো. সৈয়দুল হক। জলাবদ্ধতা ঝুঁকি হ্রাসকরণবিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ইউএনডিপির পরামর্শক ড. রফিকুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ও সিনিয়র সচিব প্রফেসর ড. শামসুল আলম, ইউএনডিপি ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রামের স্পেশালিস্ট আরিফ আবদুল্লাহ খান প্রমুখ।

মূল গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণাঞ্চলের জলাবদ্ধা নিরসনে এ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও সেগুলোর ফলাফল হয়েছে মিশ্র। কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা কমলেও অনেক জায়গায় বেড়েছে। গত ১৫ বছরে যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থির মূল্যে (২০০৫-০৬ অর্থবছরে) পাঁচ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা এ খাতে মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ। প্রতি বছর এডিপিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে বরাদ্দ বৃদ্ধির হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হারের চেয়ে অনেক বেশি। তবে এত অর্থ ব্যয় করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। বর্তমানে ওই তিন জেলার ৬৮ হাজার একর এলাকা বছরের বড় একটি সময় জলমগ্ন থাকে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন ও জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

Advertisement

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সমস্যা নিরসনে প্রকৌশলগত অনেক পদক্ষেপ নেয়া হলেও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের অভাবে সর্বোচ্চ সুফল মিলছে না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাবদ্ধতা নিরসনে মোট বরাদ্দের ৪৪ ও ৩৩ শতাংশ খরচ করে। তবে এই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরও ছয়টি মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সমন্বিত ভূমিকা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এগুলো হলো, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ, পরিকল্পনা, অর্থ এবং ভূমি।

সেমিনারে জলাবদ্ধতা ঝুঁকি হ্রাস করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় বাড়ানো ও কার্যকর তহবিল গঠনের সুপারিশ করা হয়। বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প ও কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দের ৫৬ শতাংশ আসে বৈদেশিক সহায়তা থেকে। ভবিষ্যতে ঝুঁকি ও ব্যয় কমাতে গবেষণাভিত্তিক কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পানি একই সঙ্গে মানুষের জীবন ও মরণ। জলাবদ্ধতা সমস্যা দেশের একেক জায়গায় একেক রকম। সিলেট-সুনামগঞ্জের জলমগ্নতা আর যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতা এক নয়। সমস্যার ধরন ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিবেচনায় প্রকল্প ও কর্মসূচি নেয়া প্রয়োজন।

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় মানুষের চাহিদা, সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিতে হবে। শুধু প্রকল্পভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না।

Advertisement

এমএ/ওআর/বিএ