শেরে বাংলার উইকেট ও আউটফিল্ড নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার পারফরমেন্সও বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তার হাতে বানানো পিচ নিয়ে সেই বিপিএল থেকেই রাজ্যের তির্যক কথাবার্তা, সমালোচনা। দেশি বিদেশি সব ক্রিকেটার ও কোচের একটাই কথা, ‘শেরে বাংলার উইকেটের অবস্থা এমন কেন? এটা কি টি-টোয়েন্টি উইকেট? ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট পরিসর মানেই শতভাগ ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচ। যেখানে চার ও ছক্কার অবাধ প্রদর্শনী হবে। রানের নহর বয়ে যাবে।
Advertisement
কিন্তু হায়! শেরে বাংলার পিচ যে উল্টো বোলার বান্ধব। বল পড়ে কখনো থেমে আসে। কোনটা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে থাকে। আবার কোন কোনটি লাফিয়েও ওঠে। এমন উইকেটে হাত খুলে খেলা, ফ্রি স্ট্রোক প্লে আর চার ও ছক্কার প্রদর্শনী বহুদূর, টিকে থাকাই দায়।
শেরে বাংলার উইকেট আর কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার সমালোচনা করে শাস্তির মুখে পড়েছেন জাতীয় দলের এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবালও। কিন্তু গামিনি ডি সিলভার পারফরমেন্সে উন্নতি হয়নি একচুলও। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ফাইনালে শেরে বাংলার পিচের আচরণ নিয়েও তৈরি হয়েছে রাজ্যের ক্ষোভ। বলার অপেক্ষা রাখে না, ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার ফাইনাল ম্যাচেও উইকেটের অবস্থা ভালো ছিল না। শুরুর পর যত সময় গড়িয়েছে, উইকেট ততই খারাপ হয়েছে।
ফাইনাল শেষে রাতে অফিসিয়াল প্রেস কনফারেন্সে লঙ্কান অধিনায়ক দীনেশ চান্দিমালও স্বীকার করেছেন, তারা টস নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। টস জিততে মুখিয়েও ছিলেন। কারণ বোঝাই যাচ্ছিল উইকেট সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পিচ খারাপ হতে থাকবে। রান করা কঠিন হয়ে পড়বে।
Advertisement
হয়েছেও তাই। ফাইনাল যারা মন দিয়ে দেখেছেন, তারা একটু মনে করে দেখেন, মধ্যাহ্নে মানে বেলার ১২ টায় খেলা শুরুর পর ঘণ্টা দেড়েক মানে লঙ্কান ইনিংসের ২০ ওভার পর্যন্ত উইকেট বেশ ভালো ছিল। বল ভালো গতি ও সমান বাউন্সে উইকেটে এসেছে। যে কারণে বাংলাদেশের বোলাররা শুরুতে উইকেটের পতন ঘটালেও লঙ্কান টপ ও মিডল অর্ডারের রান গতি আটকে রাখা যায়নি। কুশল মেন্ডিস, উপল থারাঙ্গা আর ডিকওয়েলারা স্বচ্ছন্দেই খেলেছেন।
তারপর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেট স্লো হয়েছে। বাউন্সও ওঠা নামা করেছে। লঙ্কান ইনিংসের শেষ এক ঘণ্টা আর বাংলাদেশের ইনিংসের প্রায় পুরো সময় পিচ ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য অস্বস্তির জায়গা। যেখানে বোলাররাই কর্তৃত্ব ফলিয়েছেন।
এমনকি খেলা শেষে দুই দলের অধিনায়কই স্বীকার করেছেন, উইকেট সহজ ছিল না। উইকেট স্বাগতিক বাংলাদেশের অনুকূল ছিল কি না, টাইগার অধিনায়ক মাশরাফিকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনিও ক্ষানিক বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আকার ইঙ্গিতে স্বীকার করে নেন, তারা যেমন উইকেট চেয়েছিলেন, উইকেট ঠিক তেমন হয়নি। হোক তা টেস্ট, ওয়ানডে আর টি টোয়েন্টি- যে দেশে খেলা হয়, সেই দেশ উইকেট থেকে বাড়তি সাহায্য পাবে, উইকেট স্বাগতিকদের শক্তি ও সামর্থ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি হবে এটাই শেষ কথা। বিনয়ী ও বুদ্ধিমান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মুখ ফুটে সে কথা না বললেও পাড়ার ও গলির অবুঝ কিশোরেরও বুঝতে অসুবিধা হয়নি, তিন জাতি ক্রিকেটের ফাইনালের পিচ বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না।
সেই না থাকা নিয়ে রাজ্যের কথা বার্তা। শেরে বাংলার কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা শ্রীলঙ্কান। আর বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান লঙ্কান কোচ হাথুরুসিংহের স্বদেশী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বাইরে আমজনতার মাঝে গামিনি ও হাথুরুকে জড়িয়ে অনেক মুখোরোচক কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। গামিনি বাংলাদেশ নয়। শ্রীলঙ্কার সহায়ক পিচ তৈরি করেছেন। এমন কথাও চাওর হয়ে গেছে।
Advertisement
কেউ কেউ এমনও দাবি করেছেন, লঙ্কান কিউরেটর গামিনি ফাইনালে তার নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার হয়ে কাজ করেছেন। তার ষড়যন্ত্রেই নাকি বাংলাদেশ হেরেছে। এসব আম জনতার অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুললেও তা অবশ্য ঢোপে টিকবে না। এটা সত্যি ফাইনালের উইকেট স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল ব্যাট চালনা, বিশেষ করে ফ্রি স্ট্রোক খেলায় ক্ষানিক প্রতিবন্ধক ছিল। ইচ্ছেমত শটস খেলার অবস্থা ছিল না।
তাই বলে ‘আনপ্লেয়েবল’ও ছিল না। এমন খারাপ অবস্থা ছিল না যে, ২২১ রান তাড়া করে জেতা যাবে না। আসলে বাংলাদেশ হেরেছে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। সাকিবের ইনজুরিতে মাঠ থেকে ছিটকে পড়া আর তামিম, মুশফিক, মিঠুন, সাব্বির প্রতিষ্ঠিত উইলোবাজরা সময় মত ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে না পারায় ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের।
কিন্তু তারপরও কথা আছে। একটা স্বাগতিক দল ফাইনাল খেলছে। উইকেট হবে সেই দলের শক্তি ও সামর্থ অনুযায়ী। তাদের অনুকূলে। তাও ছিল না। আর সে কারণেই স্বাগতিক ক্রিকেটার, ম্যানেজমেন্টে ক্ষোভ। আর সেই ক্ষোভের ঢেউ গিয়ে আছড়ে পড়েছে ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ মহলেও।
এবার আর বোর্ড আগের মত গামিনির পক্ষ নেয়নি। অবশেষে চাপে শেরে বাংলার চিফ কিউরেটর। তার উপর বোর্ড কর্মকর্তাও বেশ ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। তিন জাতি ক্রিকেটের ফাইনালের উইকেট কেন স্বাগতিক দলের অনুকূল ছিল না, কেন পিচ থেকে টাইগাররা বাড়তি সাহায্য পায়নি? তাদের উপযোগী করে তোলা হয়নি- বিসিবির পক্ষ থেকে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
বিসিবি সিইও নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন আর বোর্ড পরিচালক, মুখপাত্র এবং মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এ সম্পর্কে কোন পরিষ্কার মন্তব্য করেননি।
তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, গামিনির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, কেন পিচ থেকে স্বাগতিক দল কোনই ফায়দা পায়নি। শেরে বাংলার উইকেট কেন স্বাগতিকদের শক্তি ও সামর্থ্য উপযোগী করে তৈরি হয়নি? এটাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ বলেই ধরে নেওয়া যায়। দেখা যাক গামিনি কি জবাব দেন, তার ব্যাখ্যায় বোর্ড সন্তুষ্ট হয় কি না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুধু পিচ নির্মাণের ত্রুটি ধরা পড়ার খবরেই নয়, গামিনির আউটফিল্ড পরিচর্যা করা নিয়েও আছে রাজ্যের কথা বার্তা। শেরে বাংলার সবুজ আউটফিল্ড এখন অনেকটা ধূসর। হয়তো বোর্ড তার কারণও জানতে চেয়েছে। এআরবি/এমআর/এমএস