আসন্ন মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে দেশের শেয়ারবাজারে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। সোমবার দুপুরে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। শেয়ারবাজারে গুঞ্জন রয়েছে এ মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হবে। কমানো হবে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর)। এমন গুঞ্জনের কারণে রোববার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে।
Advertisement
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুদ্রনীতি সংকোচনমূলক হলে বাজারে অর্থের ফ্লো কমে যাবে। আর অর্থের ফ্লো কমলে তার প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়বে। শেয়ারবাজারে তারল্যের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তারল্য কমলে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আর এডিআর কমানো হলে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে সোমবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। নতুন এ মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লাগাম কিছুটা টানা হতে পারে। কিছুটা কমানো হতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের এডিআর। ব্যাংকগুলো যাতে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ কমায় সেজন্য এ পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এডিআর কমানো হবে কি-না তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেননি।
এদিকে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে এডিআর নির্ধারণ করবে। ব্যাংকগুলোর এডিআর ৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হবে। আর ইসলামি ব্যাংকের এডিআর ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮৮ শতাংশ করা হবে।
Advertisement
নতুন মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লাগাম টানার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (২০১৭ সালের জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে ঋণ বিতরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হার ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ ডিসেম্বর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক সিদ্ধান্তর সঙ্গে পুঁজিবাজারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে অনেক সময় দেখা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সিদ্ধান্তর কারণে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, আবার বড় ধরনের দরপতন হয়। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে যে অস্বাভাবিক উত্থান ও পতন হয়েছিল তার পিছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সিদ্ধান্তর বড় ভূমিকা ছিল। কিছুদিন আগে শেয়ারবাজারে যে টানা দরপতন হয়, সেটাও বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সিদ্ধান্তের কারণে।
তিনি বলেন, এমনিতে সামনে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ আমানত অনুপাত কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এটি যদি আসলেই করা হয় তা হবে পুঁজিবাজারের জন্য আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। এতে পুঁজিবাজারে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর সাবেক পরিচালক আহমেদ রশীদ লালী জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারে মুদ্রানীতির একটি প্রভাব পড়েছে। নতুন মুদ্রানীতিতে এডিআর কমানো হতে পারে এমন একটি গুঞ্জন ছিল। তবে এখন যতটুকু জানতে পারছি এডিআর কমানো হবে না। এটি ভালো সংবাদ। তবে মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হলে তার একটি প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়তে পারে।
Advertisement
মনির হোসেন নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, রোববার সকালে ব্রোকারেজ হাউসে গিয়ে শুনতে পারলাম বাংলাদেশ ব্যাংক অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ কমানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। সকালে এমন সংবাদ শোনার পর মনিটরে তাকিয়ে দেখি একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমছে। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল সূচক ১০০ পয়েন্টের ওপরে কমে যাবে। আসলে অনুৎপাদনশীল খাত বলতে তো বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারকেই বোঝাই। এটি যদি সত্যিই হয় তাহলে তো শেয়ারবাজারে তারল্য কমে যাবে। আর তারল্য কমলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
এমএএস/এমবিআর/আরআইপি