আইন-আদালত

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কি অন্ধ ছিলেন : হাইকোর্ট

পুলিশ হেফাজতে থাকা এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের (মোবাইল কোর্ট) সাজা দেয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১৩ তারিখ (গত বছরের ১৩ অক্টোবর) যদি কেউ অ্যারেস্ট হয়ে কাস্টডিতে (পুলিশ হেফাজতে) থাকে তাহলে তাকে ১৪ তারিখ (পরদিন) মোবাইল কোর্ট সাজা দেয় কীভাবে? তিনি কি (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) ব্লাইন্ড (অন্ধ) ছিলেন? তাকে (আসামিকে) কোর্টে হাজির করার কথা। কিন্তু কেন সেখানে মোবাইল কোর্ট বসবে? এটা কোন ধরনের খেলা চলছে?’

ফৌজদারি মামলায় ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা’ মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানিতে রোববার বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব প্রশ্ন তোলেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

Advertisement

রোববার হাইকোর্টের তলবে আদালত কক্ষে হাজির হন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মাহবুব আলম, লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান এবং ওই থানার এসআই হেলাল খান ও এএসআই ওয়াসিম মিয়া।

তলব করা ওই চার কর্মকর্তার আইনজীবী ফারজানা শারমিন যুক্তি উপস্থাপন করে শুনানি করেন। তখন আদালত বলেন, অন্য (যে কোনো) মামলায় গ্রেফতার করলে নিয়ে যাবেন কোর্টে। তা না নিয়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাজা দিলেন?

এ সময় রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ লোহাগড়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ইঙ্গিত করে আদালতকে বলেন, ওনাদের মতো লোকদের কারণে মোবাইল কোর্টের ওপর লোকেরা আস্থা হারিয়েছে, যার কারণে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত এসেছে। তাই ওই কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা না দেয়ার আবেদন করছি এবং ওসি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়েও এমন ঘটনা ঘটানোয় তাকে প্রত্যাহারের আবেদন করছি।

নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার জন্য এ সময় ইউএনও এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষের আইনজীবী সম্পূরক আবেদন করার জন্য সময় আবেদন করলে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দিন ধার্য করেন।

Advertisement

এরপর আদালত আইনজীবী ফারজানা শারমিনের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কি এ বিষয়ে কনটেস্ট করতে চান? আইনজীবী উত্তরে বলেন, হ্যাঁ, আমরা কনটেস্ট করবো।

আইনজীবীর ওই উত্তরে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে তাদের অপরাধ স্পষ্ট সেখানে কী করে আপনারা কনটেস্ট করতে চান? আপনার জন্য নয় আপনার ব্যবহারের জন্য বলছি। ডিসগাস্টিং।

এ সময় আইনজীবী ফারজানা শারমিন আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি দুঃখিত। আমরা ক্লায়েন্টদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। কনটেস্ট করতে চাই না।

তখন আদালত বলেন, ফাইজলামির একটা লিমিট (সীমা) আছে। এমনিতেই যা মনে চায় করেন। যেখানে দেখছেন এটা রং (ভুল), সেখানে কনটেস্ট করতে চাচ্ছেন কীভাবে?

এর আগে ফৌজদারি মামলায় ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা’ ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজনকে রোববার (২৮ জানুয়ারি) আদালতে হাজির হতে বলেছিলেন হাইকোর্ট।

সেই সঙ্গে ওই ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া সাজা সাজানো বলে কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং যারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। রিট আবেদনকারীকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাত ৯ টায় মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু ইউএনও পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৪ অক্টোবর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় বেলালকে আট মাসের জেল দেয়া হয়। এরপর ‘সাজানো’ ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেন মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন।

এফএইচ/জেডএ/আইআই