বিশেষ প্রতিবেদন

নির্বাচনে ফের সংঘাত হোক সরকারও চায় না

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। গবেষণা করছেন স্থানীয় সরকারের নানা বিষয়ে। লিখেছেন নির্বাচন, সুশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে।

Advertisement

আদালত কর্তৃক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচন স্থগিতাদেশ, আইনি জটিলতা, নির্বাচন কমিশনের করণীয় এবং নির্বাচন-কেন্দ্রিক রাজনীতির প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। সামনের নির্বাচন ঘিরে শঙ্কার কথা উল্লেখ করলেও জনপ্রত্যাশা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু। তিন পর্বের শেষটি থাকছে আজ-

জাগো নিউজ : বেশ কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

তোফায়েল আহমেদ : রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। নির্বাচন ঘিরে মাঠে নানা আলোচনা। এসব সিটির মেয়র ছিলেন বিএনপির। তাদের সঙ্গে সরকার যে আচরণ করেছে, তা দুঃখজনক। আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন তারা দায়িত্ব পালন করছেন।

Advertisement

আমি মনে করি, এসব সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সরকার তার স্বার্থেই এখানে নির্বাচন সুষ্ঠু করবে। কারণ এ নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে।

জাগো নিউজ : ২০১৪ সালের আগেও ওই চার সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল জাতীয় নির্বাচনে…

তোফায়েল আহমেদ : ২০১৪ সাল আর ২০১৮ সাল এক নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। অংশ নিলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারতো।

আমি মনে করি, এ প্রশ্নে জনগণেরও দায় আছে। জনগণ তার অধিকারবোধ হারিয়ে ফেলেছে। সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিতে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

Advertisement

আবার যারা রাজনীতির নামে আন্দোলন করছে, তা বড়ই হিংসাত্মক। আওয়ামী লীগ বিএনপির শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এটি হিংসা উস্কে দেয়া বলে মনে করি। মানুষ হত্যা করে কোনো আন্দোলন হতে পারে না। এ কারণেও সাধারণ মানুষ ভয়ে নিষ্ক্রিয়।

জাগো নিউজ : এ ভয়ের রাজনীতি কোথায় নেবে জাতিকে?

তোফায়েল আহমেদ : এর উত্তর ভবিষ্যৎ বলে দেবে। তবে আমি মনে করি, রাজনীতিকরাও এখন পরিবর্তন চায়।

বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া কোনো পথ নেই। সরকারের পক্ষেও এককভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠুর জন্য বাইরের চাপও রয়েছে। বিএনপিকে এনেও নির্বাচনে নানা নকশা করতে পারে সরকার।

এ কারণে আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের মতো হবে না বলে মনে করি। বিএনপি অংশ নেবে। সরকারও তাদের অংশগ্রহণ চাইবে। সমঝোতা না হলে নির্বাচনে বড় সংঘাত হবে। তবে নির্বাচনে ফের সংঘাত হোক সরকারও চায় না।

জাগো নিউজ : কেন এমন শঙ্কা প্রকাশ করছেন?

তোফায়েল আহমেদ : মাঠে বিরোধীপক্ষ না থাকলে সহজেই গেম দেয়া যায়। গুলশানের মতো জায়গায় বিএনএফ নামের একটি দলের প্রধান আবুল কালাম আজাদকে সংসদ সদস্য করা হলো। তাকে কে চিনতো? নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে কুকুরকেও ঘুমাতে দেখা গেছে। কোনো ভোটার ছিল না। বিএনপি অংশ নিলে অবশ্যই এ চিত্র থাকতো না।

জাগো নিউজ : তার মানে সংঘাত অনিবার্য?

তোফায়েল আহমেদ : সুষ্ঠু নির্বাচনের মাঠ তৈরি না হলে সংঘাত হবেই। এটি ধারণা নয়, বাস্তবতা। সেই সংঘাত থেকে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা ধারণার বাইরে।

তবে আমি মনে করি, রাজনীতিকদের মধ্যে শিক্ষা মিলেছে, সংঘাত এড়িয়ে চলতে তাড়াও চাইবেন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলেছেন। বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা বলেছে। উভয় দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনের ঢাক বাজাচ্ছে। এটি ভালো দিক।

তবে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতার ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে। কমিশনের কাজের ওপরই সরকারের কৌশল বুঝতে পারা যাবে। কমিশনের প্রতি মানুষের যে অনাস্থ তা ফিরিয়ে আনার জন্য কমিশনকেই কাজ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ টিম থাকতে হবে। অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। প্রার্থীদের ব্যাপারে সত্য অনুসন্ধান করতে হবে। এ কাজগুলো করলে কমিশনের ক্ষমতা বাড়বে।

নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী সবার সাহায্য পাবে। সবাই সহযোগিতা করবে। এ সহযোগিতা চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে অনেক কিছু প্রমাণিত হবে।

জাগো নিউজ : আশার কথা কী বলবেন?

তোফায়েল আহমেদ : জাতি আবার একটি নির্বাচনী ট্রাকে উঠবে। নির্বাচন হবেই। কতটুকু সুষ্ঠু হবে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকতে পারে। আশার কথা হচ্ছে, মানুষ ঘুরে না দাঁড়ালেও সংঘাতময় রাজনীতি থেকে মুক্তি চায়। একদিনও আর এমন রাজনীতি প্রত্যাশা করে না। হয়তো প্রত্যাশার মধ্য দিয়েই ভালো কিছু মিলবে সামনে।

এএসএস/এমএআর/এমএস