জাতীয়

মানসিক রোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ৯৮ ভাগ গর্ভবতী

বাংলাদেশসহ নিম্নআয়ের দেশগুলোতে গর্ভকালীন সময়ে শতকরা ৯৮ ভাগ নারী মানসিক রোগের প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।মানসিক অসুস্থতাজনিত কারণে বিশ্বে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে শতকরা ১১ দশমিক চার ভাগ নারী আত্মহত্যা করে। কিন্তু আত্মহত্যা প্রতিরোধে এ সব দেশগুলোতে ‘জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ কৌশলপত্র’ প্রণয়ন হয়নি। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মানসিক প্রতি রোগীর চিকিৎসার জন্য যেখানে চারহাজার টাকা ব্যয় হয় সেখানে নিম্ন আয়ের দেশে ব্যয়ের পরিমাণ মাত্র ১৬০ টাকা। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভকালীন সময়ে (প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়) মেয়েদের মধ্যে মানসিক রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ সময় তাদের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে মানসিক সহায়তা ও  সুচিকিৎসা অত্যাবশ্যক হলেও এখনও পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি কোনো পর্যায়েই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রকাশিত ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য-২০১৪’ নামের এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৭১টি দেশের তথ্যউপাত্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন প্রণীত হয়।‌বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য-২০১৪’ প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের সহকারি চিকিৎসক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, গর্ভকালীন সময়ে (প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সময়) মেয়েদের মধ্যে মানসিক রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ সময়ে অপুষ্টি, হরমোনের পরিবর্তন, সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে ইত্যাদি কারণে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মানসিক জটিলতা দেখা দেয়। এ ছাড়াও অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের ফলেও অনেক সময় তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।তিনি জানান, গর্ভকালীন সময়ে মেয়েদের মধ্যে ম্যাটারনিটি ব্লু (মনের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তাভাবনা, মন খারাপ) নামে এক ধরণের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। শতকরা ৮০ ভাগ গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না। তবে শতকরা ২০ ভাগের জন্য মানসিক চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট (২০০৩-২০০৫)  মেয়াদে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। মোট ১৩ হাজার নমুনার ওপর পরিচালিত ওই জরিপে দেখা যায় দেশের শতকরা ১৬ ভাগ মানুষ বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগে আক্রান্ত। মোট নমুনায় ছেলেদের মধ্যে শতকরা ১২ দশমিক ১ভাগ ও মেয়েদের মধ্যে শতকরা ১৯ ভাগ মানসিক রোগী পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালেফোর্নিয়ার অর্থায়নে আইসিডিডিআর’বি বিজ্ঞানী ড. মলয়ের তত্ত্বাবধানে রংপুর ও দিনাজপুর বিভাগে গর্ভবর্তী মায়েদের মধ্যে মানসিক রোগের প্রকোপ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দিনাজপুরের মিশনারি ল্যাম্ব হাসপাতালে মায়েদের পুষ্টিজনিত সমস্যা নিরুপণ ও সমাধানে কার্যক্রম পরিচালনাসহ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। গত ৫ বছর যাবৎ এ কার্যক্রম চলছে এবং আগামী আরো ৫ বছর এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ-২০১৪ অনুসারে বিশ্বে স্বাস্থ্যখাতের মোট জনবলের শতকরা মাত্র একভাগ মানসিক রোগের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত।এমইউ/এসকেডি/এমএস

Advertisement