খেলাধুলা

‘আক্ষেপ’ হয়েই থাকল ফাইনাল

আক্ষেপ ঘুচলো না। আফসোস থেকেই গেল। সঙ্গে না পাবার হতাশাও বাড়লো। ক্রিকেটে অনেক সাফল্য আছে বাংলাদেশের; কিন্তু তিনজাতি কিংবা তারও বেশি দেশ নিয়ে আয়োজিত কোনো টুর্নামন্টের শিরোপা জেতেনি বাংলাদেশ। এবার পরিস্কার ফেবারিট থাকা সত্ত্বেও ঘরের মাঠে ট্রফি জেতা হলো না টাইগারদের।

Advertisement

সংখ্যাতত্বেও এবার নিয়ে চার-চারবার ফাইনালে বিজিত দলের নাম বাংলাদেশ। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগে নন-টেস্ট প্লেইং দেশগুলোকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ই যেন বাংলাদেশের একমাত্র অর্জন। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হওয়ার পর কোনো ট্রফি উঁচিয়ে ধরার সুযোগ পাননি বাংলাদেশের কোনো অধিনায়ক।

১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাবার আগে দেশের মাটিতে প্রথম তিন জাতির আয়োজক হয় বাংলাদেশ। ‘মেরিল কাপ’ নামের ওই আসরে প্রতিপক্ষ ছিল আইসিসির সহযোগি সদস্য দেশ কেনিয়া আর টেস্ট খেলুড়ে দল জিম্বাবুয়ে। বলার অপেক্ষা রাখে না ওই কেনিয়াকে হারিয়েই আইসিসি ট্রফি জিতেছিল আকরাম খান, আমিনুল ইমলাম আর মিনহাজুল আবেদিনরা।

কিন্তু ঘরের মাঠে সেই কেনিয়ার সাথে ওই টুর্নামেন্ট জেতা সম্ভব হয়নি। ট্রফি জয় দূরে থাক, ফাইনালেই যেতে পারেনি বাংলাদেশ। হতাশা আর আক্ষেপের সূচনা আসলে তখন থেকেই। এরপর ২০০৩ সালে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টিভিএস কাপ এবং ২০০৮ সালে ভারত-পাকিস্তানের সাথে কিটপ্লাই কাপ নামে আরও দুটি তিন জাতি সিরিজের স্বাগতিক হয়ে ফাইনালে দর্শকের আসনে ছিল বাংলাদেশ।

Advertisement

ফাইনাল খেলার হতাশা কাটে ২০০৯ সালে। কাকতালীয়ভাবে এবারের মতো ওই আসরেও তিন প্রতিযোগি দল ছিল বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা আর জিম্বাবুয়ে। ফাইনালে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিল লঙ্কানরা। রাউন্ড রবিন লিগ পর্যায়ে শ্রীলঙ্কাকে হারালেও ফাইনালে গিয়ে আর পারেনি মোহাম্মদ আশরাফুলরা।

এরপর ২০১২ সালে ৫০ ওভারের এশিয়া কাপের ফাইনালেও জয়ের খুব কাছে গিয়ে না পারার আফসোসে পুড়তে হয়েছে। পাকিস্তানের কাছে ২ রানের পরাজয়ের আক্ষেপ। আর ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ৮ উইকেটের পরাজয় সঙ্গী হলো টাইগারদের।

এ শ্রীলঙ্কার সাথেই; ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ফাইনালে ১৫২ রানের মামুলি পুঁজি নিয়ে ৬ রানে লঙ্কানদের ৫ উইকেট ফেলে দিয়েও জেতা সম্ভব হয়নি। প্রাণপন লড়াই শেষ পর্যন্ত রুপান্তরিত হয় ২ উইকেটের পরাজয়ে।

এরপর ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে আবারো স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় নীল বাংলাদেশ। ২০১২ সালের ২২ মার্চ ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩৬ রানে বেঁধে জয়ের প্রবল সম্ভাবনা জাগিয়েছিল মুশফিক বাহিনী। তিন উইকেট হাতে রেখে ছয় বলে ৯ রান দরকার থাকা অবস্থায় পারেনি বাংলাদেশ।

Advertisement

আর আজ আবার ফাইনালে না পারার বেদনায় নীল হতে হলো মাশরাফি বাহিনীকে। ৭৯ রানের বড় পরাজয়ে এবারের মত শিরোপা স্বপ্ন ভঙ্গ হলো টাইগারদের। বার বার ফাইনালে এসে ভেঙে পড়ার আক্ষেপ থেকেই গেলো টাইগারদের।

ফাইনালের আগে অধিনায়ক মাশরাফি পিছন ফিরে তাকাতে চাননি। ২৪ ঘন্টা আগে প্রেস কনফারেন্সে অনেক কথার মাঝেও বলেছিলেন, ‘আগে কখনো ট্রফি না জেতার কথা আসলে মাথায় ছিল না! মনে না করাইলেই পারতেন।’

এরপরও মাশরাফি অনেক কথার ভিড়ে বুঝিয়ে দেন, ‘আসলে কালকের (শনিবার) ফাইনাল একদম নতুন প্রেক্ষাপট। সবার জন্য নতুন সুযোগ। এ ফাইনালের আগে অতীতের না পারা নিয়ে না ভেবে এ আসরের সাফল্যর কথা ভাবা এবং সুখ স্মৃতিচারণ করে নিজেদের উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করাই হবে যুক্তিযুক্ত।’

কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুন সুযোগ কাজে লাগানো হলো কই! ফাইনালের আগে লাইন আপে বড় ধরনের পরিবর্তন করা হলো। ওপেনার এনামুল হক বিজয়, পেসার আবুল হাসান রাজু আর অলরাউন্ডার নাসিরের বদলে মোহাম্মদ মিঠুন, সাইফউদ্দিন আর মিরাজকে নেয়া হলো দলে। তাতেও কিন্তু কোন ফায়দা হয়নি। মিরাজ শুরুতে ব্রেক থ্রু উপহার দিয়েছেন। আর মিঠন আউট হয়েছেন ১০ রানে। সাইফউদ্দিন করেছেন মাত্র ৮ রান, উইকেট নিয়েছেন ১টি। মিরাজের সংগ্রহ ছিল ৫ রান।

বোলিংটা খুব ভালো না হলেও মন্দ হয়নি। পেসার রুবেল আর মোস্তাফিজ বেশ সমীহ জাগানো বোলিং করেছেন। তাদের সাথে অধিনায়ক মাশরাফি-সাইফউদ্দিনও ব্যাকআপ দিয়েছেন। অফ স্পিনার মিরাজ শুরুতে ব্রেক থ্রু উপহার দিয়ে দলকে উজ্জীবিত করলেও পরে রান গতি নিয়ন্ত্রনে রাখার বদলে উইকেটের জন্য বল করতে গিয়ে বেদম মার খান।

১০ ওভারে তার দেয়া ৫৩ রান আজকের ফাইনালে সবচেয়ে আলগা ও বেহিসেবি বোলিং। তারপরও শ্রীলঙ্কা খুব বেশি দুর যেতে পারেনি। ২২১-এ থেমেছে; কিন্তু আসল ছন্দপতনটা ঘটে লঙ্কান ইনিংসের ৪২ নম্বর ওভারে। ফিল্ডিং করতে গিয়ে বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল ফেটে মাঠ ছাড়েন সাকিব।

শুরুতে দীর্ঘ সময় বাঁ-হাতি উপুল থারাঙ্গা আর ডিকভেলা ব্যাটিং করায় দেরিতে বোলিংয়ে আসা বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিব নিজের বোলিং কোটাও পূর্ণ করতে পারেননি। ৫ ওভার বাকি থেকে যায়। তার পক্ষে ব্যাট করাও সম্ভব হয়নি শেষ পর্যন্ত।

সাকিবের ৫ ওভার বোলিং বাকি থাকা। আগের ম্যাচ ছাড়া প্রথম তিন ম্যাচে ৩৭, ৬৭ আর ৫১ রান করা সাকিব ব্যাটিং করতে না পারা বড় ধাক্কা। তার সঙ্গে ইনিংসের শুরুতেই ফর্মের চুড়োয় থাকা তামিম ইকবালের (৩) সাজ ঘরে ফেরায় ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ।

ওই ধাক্কা কাটাতে দরকার ছিল বড় পার্টনারশিপ। তাও হয়নি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একা চেষ্টা করেছেন। মুশফিকুর রহীম তাকে সঙ্গ দেবার সম্ভাবনা জাগিয়েও ব্যর্থ হলেন। তিনিও স্লো উইকেটে স্পিনের বিপক্ষে সুইপ খেলতে গিয়ে শট লেগে ক্যাচ তুলে দেন। এ ছাড়া আর একজনও উইকেটের চরিত্র বুঝে এবং লঙ্কান বোলারদের লক্ষ্য-পরিকল্পনা ও কৌশল ঠাউরে ব্যাট করতে পারেননি।

সেই না পারার চড়া মাশুল ৭৯ রানের হার। সব মিলে আরও একটি ফাইনাল। আবারো স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় নীল হতে হলো বাংলাদেশকে।

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি