হোক তা তিন জাতি, চার জাতি কিংবা তার চেয়েও বেশি দলকে নিয়ে কোন টুর্নামেন্ট, ইতিহাস পরিষ্কার সাক্ষী দিচ্ছে, টেস্ট খেলিয়ে দেশগুলো খেলেছে এমন কোন টুর্নামেন্টে আজ পর্যন্ত জেতা হয়নি বাংলাদেশের। এক কথায় একটি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট জেতার আক্ষেপ বাংলাদেশকে এখনো তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
Advertisement
তাই বলে কখনো যে ট্রফি জেতার সুযোগ আসেনি তা নয়, এসেছে। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট মিলে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট ও এশিয়া কাপে এর আগেও তিন তিনবার ফাইনাল খেলেছে টাইগাররা। কিন্তু একবারও শেষ হাসি হাসা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত রানার্সআপ হয়েই তুষ্ট থাকতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত হতাশা আর না পারার বেদনাই সঙ্গী হয়ে থেকেছে।
এবার আবারও মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও মোস্তাফিজদের না পাওয়া শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ। আজ (শনিবার) শেরে বাংলায় শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলেই প্রথম কোন ট্রফি বিজয়ের মধুর স্বাদ পাবে মাশরাফির দল। ভক্ত ও সমর্থকরা পাবেন ট্রফি জয়ের আনন্দে মেতে ওঠার বড় উপলক্ষ। দেখা যাক ঘরের মাঠে প্রথম ট্রফি বিজয়ের আক্ষেপটা আজ ঘোচে কি না?
এদিকে মাশরাফির দলের সামনে যেমন ‘ট্রফি খরা’ কাটানোর হাতছানি, ঠিক তেমনি টিম বাংলাদেশের প্রাণ ভোমরা সাকিব আল হাসানের সামনেও আজ একটি সাফল্য উকি-ঝুকি দিচ্ছে। তবে সেটা নিরবে-নিভৃতে। তার ক্যারিয়ার এমনিতেই কৃতিত্ব, অর্জন আর প্রাপ্তিতে ভরা। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন সাফল্যের ফলক স্পর্শ করছেন সাকিব।
Advertisement
মাঝে একটু ফিঁকে হলেও এখন আবার নৈপুণ্যের দ্যুুতিতে আলো ছড়াচ্ছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। একজন পারফরমার হিসেবে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার পাশাপাশি বল ও বাট হাতে দলকে দারুণ সার্ভিসও দিয়ে যাচ্ছেন। আজ তার সামনে আছে আরও একটি অর্জনের সুযোগ। ইতিহাস জানাচ্ছে, এর আগে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে দুটি ওয়ানডে আসরের ফাইনালে ব্যাট ও বলে নৈপুণ্যের আলো ছড়িয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমান তালে লড়েও শেষ পর্যন্ত রানার্স আপ হয়েই তুষ্ট থেকেছে। সবচেয়ে বড় কথা, দুটি ম্যাচের বড় সময় চালকের আসনে ছিল টাইগারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাফল্য ধরা দেয়নি।
সেই ২০০৯ সালে তিন জাতি আসর এবং ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনাল তাই টাইগারদের ‘দুঃখ’ হয়েই আছে। দল সাফল্যের নাগাল না পেলেও পারফরমার সাকিব আল হাসান ঐ দুইবারই সাফল্যের চুরায় ছিলেন। ঐ দুই টুর্নামেন্টের ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট সাকিব।
২০০৯ সালের তিন জাতি টুর্নামেন্ট এবারের মত ডাবল লেগের ছিল না। একবার করে খেলার পরই ফাইনাল। এখন দুই ম্যাচের অন্তত একটিতে না জিতলে ফাইনাল খেলা কঠিন ছিল। ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথমদিন জিম্বাবুয়ের কাছে ৩৮ রানে হেরে যাওয়ায় হিসেব কঠিন হয়ে ওঠে টাইগারদের। ফাইনাল খেলতে শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতাই নয়, বোনাস পয়েন্টসহ জয় অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে।
আলোর স্বল্পতায় দেরিতে শুরু হওয়া ৩১ ওভারের ম্যাচে সাকিবের চওড়া ব্যাটেই কাঙ্খিত সাফল্যের বন্দরে ভিড়ে বাংলাদেশের নৌকা। শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হাতে রেখে ৪৩ বল আগেই ঐ রান টপকে যায়। সাকিব প্রায় অসাধ্য সাধন করেন। তার ব্যাট থেকে বেড়িয়ে আসে ৬৯ বলে ৯২ রানের হার না মানা ইনিংস (১০ বাউন্ডারি আর দুই ছক্কাসহ)। আর তাতেই বোনাস পয়েন্ট নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশের ফাইনালের টিকিট হয় কনফার্ম। ঐ আসরে সাকিব তিন ম্যাচে ৫ উইকেট আর ১৫৩ রান (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩/ ২৩ ও ৫২, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রবিন লিগে ০/২৪ ও ৬৯ বলে ৯২* আর ফাইনালে ৯ ও ২/২২) ধারাবাহিকভাবে ব্যাট ও বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে হন ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট।
Advertisement
২০১২ সালের এশিয়া কাপেও দেখা যায় একই চিত্র। সেবার টিম পারফরমেন্সে বাংলাদেশ প্রথমবার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেললেও সে মিশনে সাকিবই ছিলেন সাহসী ও দক্ষ নাবিক। তার অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সই মূলত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে ফাইনাল পর্যন্ত পৌছে যায় মুশফিকের দল। ম্যান অফ দ্যা এশিয়া কাপ হন সাকিব আল হাসান।
আসুন ঐ আসরে সাকিবের পারফরমেন্সটা একটু দেখে নেই, সাকিব প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে (২/৪১ ও ৬৪ ) দ্বিতীয় খেলায় ভারতের সাথে (০/৬৩ ও ৪৯) এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (২/৫৬ ও ৫৬) দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং পারফরমেন্স দেখানোর পর ফাইনালেও পাকিস্তানের বিপক্ষে (২/৩৯ ও ৭২ বলে ৬৮) ব্যাট ও বলে নজর কাড়েন। চার খেলায় একমাত্র ভারতের সঙ্গে ৪৯ রান করা ছাড়া বাকি তিন ম্যাচে ফিপটিসহ সাকিব করেন ২৩৭ রান। আর তার ঝুলিতে জমা পড়ে ছয় উইকেট।
এবারো সাকিব ব্যাট আর বল হাতে দুরন্ত। দূর্বার। চিরচেনা মিডল অর্ডারে ব্যাট করা সাকিব এবার শুরু থেকে ওয়ান ডাউনে নেমেও যথেষ্ঠ ভালো খেলছেন। তিন নম্বরে নামা সাকিবের এ আসরে রান (৩৭+৬৭+৫১+৮) = ১৬৩। আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ফিরতি পর্বের ম্যাচটি ছাড়া বাঁহাতি স্পিনার সাকিব রবিন লিগের অন্য তিন ম্যাচের প্রতিটায় (৩/৪৩, ৩/৪৭/৩/৩৪) তিন উইকেট করে পেয়েছেন চার ম্যাচে তার নামের পাশে জমা পড়েছে ৯ উইকেট।
পুরো আসরে এমন অলরাউন্ডিং পারফরমেন্স নেই আর কারো। কাজেই এবারো আসর সেরা পারফরমার হবার হাতছানি সাকিবের সামনে। আজ ফাইনালে ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠে সাকিব কি ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্টের হ্যাট্রিক করবেন? আগের দুইবার নিজে আসর সেরা হলেও দল সাফল্যের চুড়োয় পৌছাতে পারেনি। বরং দুবারই না পারার বেদনায় ‘নীল’ হয়েছিল বাংলাদেশ।
এবার সাকিবের হাত ধরে শেষ হাসি হাসবে মাশরাফির দল? ব্যক্তিগত অর্জনের পাশাপাশি এবার সাকিব দলকেও শেষ হাসি উপহার দিতে পারবেন?
এআরবি/এমআর/এমএস