খেলাধুলা

'তাড়াহুড়ো করাটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের স্বভাব'

প্রথমে ৮ উইকেটের অনায়াস জয়, তারপর ১৬৩ রানের রেকর্ড জয় আর শেষ ম্যাচে ৯১ রানের বড় ব্যবধানে জেতা; টানা তিন খেলায় বোনাস পয়েন্ট সহ জয়রথ সচল। সেই দলটিই ফাইনালের আগে রবিন লিগের শেষ ম্যাচে ৮২ রানে অলআউট হয়ে হারলো ১০ উইকেটে। এ যেন উল্কার পতন। যেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়া।

Advertisement

প্রথম দুই ম্যাচ বোনাস পয়েন্টসহ জিতেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলা। তারপর তিন নম্বর খেলায় মিডল অর্ডারদের চরম ব্যর্থতার পরও জেতা। আর আজ শেষ ম্যাচে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়।

ফাইনালের আগে এমন বাজে ব্যাটিং কি দলের আকাশছোঁয়া মনোবল কমিয়ে দেবে? আস্থায় চির ধরাবে? নাকি মানসিক চাপ? ভক্ত ও সমর্থকদের মনে প্রশ্ন।

খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে যে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। জবাবে টাইগার অধিনায়ক অনেক কথার ভীড়ে বুঝিয়ে দিলেন, দলের ওপর কোন চাপ পড়বে না। তার অনুভব- মানসিক চাপ, আস্থার চির ধরা আর আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়া, সব কিছুই আসলে নির্ভর করছে ব্যক্তির উপর।

Advertisement

‘আমরা জানি যে শ্রীলঙ্কা আমাদের হারাতে পারে। কিন্তু এভাবে আমরা হারব, সেটা কেউই প্রত্যাশা করিনি। আমাদের ড্রেসিং রুমে কেউই এটা বিশ্বাস করবে না যে, আমাদেরকে শ্রীলঙ্কা হারাতে পারে না। তবে শেষ তিন ম্যাচ এভাবে খেলার পর এভাবে হারব, সেটাও হয় না। এই ম্যাচ হারের পর দলের মানসিক অবস্থা কি হবে, কেমন দাঁড়াবে; তা আসলে কমেন্ট করা খুব কঠিন।’

তবে অধিনায়ক মাশরাফি এ ম্যাচের পারফরমেন্স আর ফল নিয়ে মাথা ঘামানোর বিপক্ষে। তিনি খারাপ নিয়ে চিন্তা না করে তার আগের তিন ম্যাচের সাফল্য ও সুখস্মৃতির কথা ভাবতেই বেশি আগ্রহী। তাইতো মুখে এমন সংলাপ, ‘এভাবে তিন ম্যাচে ম্যাচ ডিটেইলস নিয়ে ব্যাখ্যা করাও কঠিন। আমার কাছে মনে হয়, আমরা আগের তিন ম্যাচ যেমন খেলেছি সেভাবেই চিন্তা করতে হবে।’

ফাইনালের আগে এই পারফরম্যান্স ও ফলকে শুধু সতর্ক বার্তা হিসেবে না দেখে নিজেদের স্নায়ুকে আরও শক্ত করার উপাদান হিসেবেও দেখতে চান মাশরাফি। টাইগার অধিনায়ক এ ম্যাচ থেকে আরও কিছু নিতে চান। তার দল খারাপ দিনে কতটা খারাপ খেলতে পারে, সে সম্পর্কেও একটা ধারণা জন্মেছে নড়াইল এক্সপ্রেসের।

এ নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘ফাইনালেও এরকম অবস্থায় পড়ি, তা অবশ্যই চাইবো না। আমরা অবশ্যই হারতে পারি। কিন্তু এমন হার নিশ্চয়ই কেউ প্রত্যাশা করেন না। আমাদের জন্য জানা হয়ে গেল আমরা খারাপ দিনে কতটা খারাপ খেলতে পারি। ফাইনাল ম্যাচে যে তাড়াতাড়ি দু'টা উইকেট পড়বে না, সেই গ্যারান্টি নেই। পরপর দুই বলে সাকিব-তামিম দুজনই আউট হয়ে যেতে পারে। আজকে আমরা না পারলেও একটা ধারণা মিলেছে যে এ রানটাকে কতদূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’

Advertisement

মাশরাফি বোঝানোর চেষ্টা করেন, ৩৪ রানে ৪ উইকেট পতনের পর মিডল অর্ডারের মানসিকতাই ভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। শুরুর বিপর্যয় কাটাতে ওই সময় রান তোলায় মনোযোগি হবার চেয়ে উইকেটের পতন ঠেকিয়ে স্ট্রাইকররেট কমিয়ে খেলাই ছিল লাগসই অ্যাপ্রোচ। কিন্তু তা হয়নি। এই না হবার পিছনে কারণ কি?

সেটা কি বিপদে মানসিক চাপে খেই হারিয়ে ফেলা? এমন প্রশ্নর জবাবে মাশরাফি একটা তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা চাপের মুখে খেই হারিয়ে ফেলা নয়। কিংবা বিপর্যয় কাটাতে অতি আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠার চেষ্টাও নয়। আসলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এটা স্বভাব। তারা ঘরোয়া ক্রিকেটেও দলের বিপদে স্ট্রাইকরেট কমিয়ে, রয়ে সয়ে এবং ধীরে সুস্থে উইকেট অক্ষত রেখে ইনিংসকে নতুন ভাবে সাজানোর বদলে তড়ি-ঘড়ি রান করার চেষ্টায় থাকেন। এটা কম বেশি সবার মজ্জাগত হয়ে গেছে।’

দল চাপে পড়লে যে স্ট্রোক খেলা কমিয়ে, রানের পিছনে না ছুটে কিছুক্ষণ উইকেটে পড়ে থাকাই বড় কাজ; এই বোধ-উপলব্ধি আর অ্যাপ্রোচটাই আসলে কম বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। সমস্যাটা এখানেই।

এআরবি/এমএমআর/আইআই